হার্টবিট ডেস্ক
পোস্ট কোভিড রোগীদের অর্থাৎ করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষদের মধ্যে ফুসফুসে জটিলতা, চোখের সমস্যা ও স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়াসহ নানা জটিল লক্ষণ বাড়ছে । যদিও বেশির ভাগ কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ধীরে ধীরে সেরে ওঠেন, কিন্তু কারও কারও উপসর্গ ও জটিলতা দীর্ঘদিন থাকতে পারে। তা থাকতে পারে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত।
উপসর্গ ও জটিলতা দীর্ঘদিন থাকাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘লং কোভিড সিনড্রোম’ বলা হচ্ছে। প্রতি পাঁচজন উপসর্গহীন করোনা রোগীর মধ্যে একজন এই লং কোভিডের শিকার বলে জানিয়েছে জার্মানির ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট ফর দ্য সায়েন্স অব লাইট নামক একটি স্বাস্থ্য সংস্থা। তারা জানান, তীব্র মাত্রার কোভিড থেকে মৃদু কোভিড রোগী, যে কারও এটা হতে পারে। তবে সাধারণত বয়স্ক এবং যাদের অন্যান্য ক্রনিক রোগবালাই আছে, তাদেরই লং কোভিড হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
ভাইরাসটি দীর্ঘস্থায়ী ছাপ হিসেবে মানুষের রক্তকোষেও বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। একজন গবেষক বলেন, ‘মানুষের রক্তকোষে পরিষ্কার ও দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি আমরা। এসব পরিবর্তন ধরা পড়েছে মারাত্মক সংক্রমণে আগে ও পরেও।করোনায় আক্রান্ত ১৭ জন মুমূর্ষু রোগী, করোনা থেকে সেরে ওঠা ১৪ জন এবং সম্পূর্ণ সুস্থ ২৫ জনের ৪০ লাখের বেশি রক্তকোষ আরটি-ডিসি পদ্ধতিতে পরীক্ষা করেছেন ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীগণ।
পরীক্ষার ফলাফলে তারা দেখেন, সুস্থ মানুষের চেয়ে করোনা আক্রান্ত এবং করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষের লোহিত রক্ত কণিকা অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কোষগুলো।
লং কোভিডে আক্রান্তদের কিছু উপসর্গ দীর্ঘদিন, এমনকি কোভিড নেগেটিভ হওয়ার পরও বেশ কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত বয়ে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। সাধারণত দুর্বলতা, শ্বাসের সমস্যা, কাশি, অস্থি বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, বুকে ব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, মাথাব্যথা, বুক ধড়ফড়, ঘ্রাণ ও স্বাদহীনতা, অরুচি, স্মৃতিভ্রম, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়।
যদিও কোভিড প্রাথমিকভাবে ফুসফুসকে আক্রমণ করে, কিন্তু ফুসফুসই কেবল এর লক্ষ্য নয়। শরীরের অন্যান্য অঙ্গও এতে আক্রান্ত হতে পারে। কোন কোন অঙ্গ আক্রান্ত হয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে লং কোভিডের উপসর্গগুলো কেমন হবে।চিকিৎসাবিজ্ঞানের জগতে কোভিড প্রতিনিয়তই বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করছে। প্রতিদিনই তারা নতুন করে শিখছেন। কোভিড-পরবর্তী ডায়াবেটিস ও রক্তচাপের ওঠানামা, শারীরিক স্বাভাবিক প্রক্রিয়াগুলোর ছন্দপতন, এমনকি কারও কারও থাইরয়েড, অগ্ন্যাশয় ইত্যাদি অঙ্গেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে, করোনা সম্পর্কে ততই নতুন কিছু জানা হচ্ছে, শেখা হচ্ছে।
Discussion about this post