হার্টবিট ডেস্ক
চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর অঞ্চলে অক্সর্ফোড-এস্ট্রাজনেকো ১ম ও ২য় ডোজ টিকা গ্রহণকারী ও অগ্রহণকারী কোভডি-১৯ আক্রান্ত রোগীদের তুলনামূলক স্বাস্থ্যঝুঁকির মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপার্চায প্রফসের ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ এর নেতৃত্বে এক দল গবষেক দুইমাস ধরে গবষেণা করে দেখতে পান কোভিড-১৯ টিকা না নেওয়া রোগীদের মধ্যে ১৩৭ জনের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয়েছে। যেখানে ১ম ও ২য় ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে মাত্র ৭ জন ও ৩ জন রোগীকে হাসপাতালে যেতে হয়েছে।
হাসপাতালে ভর্তিকৃত টিকা অগ্রহণকারী রোগীদের ৮৩ জনের মধ্যে শ্বাসকষ্ট পরিলক্ষিত হয় এবং তাদের মধ্যে ৭৯ জনের অতিরিক্ত অক্সিজেন সাপোর্টের প্রয়োজন হয়। শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অক্সিজেন স্যাচুরেশনের মাত্রা সর্বনিম্ন ৭০% দেখা যায়।
অপরদিকে টিকা গ্রহণকারী রোগীদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন স্বাভাবিক (৯৬.৭%) পাওয়া যায়। টিকা অগ্রহণকারী হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের মধ্যে ৭ জনের আই সি ইউ সেবার প্রয়োজন হয়, অপরদিকে টিকা গ্রহণকারী রোগীদের কোন ধরণের আই সি ইউ সেবার প্রয়োজন হয়নি। টিকা অগ্রহণকারী রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সময়কাল সর্বোচ্চ ২০ দিন পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়েছে।
এই গবেষণায় পাওয়া যায় সর্বমোট ১০ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে তারা কেউই ১ম ও ২য় ডোজ টিকা গ্রহণ করেননি। গবেষণায় আরো দেখা যায়, যে সমস্ত টিকা অগ্রহণকারী কোভিড-১৯ রোগী পূর্বে থেকে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় (কো-মরবিডিটি) ভুগছিলেন তাদের মধ্যে করোনার সংক্রমণের হার ছিলো ৭৬.৭ শতাংশ, যা টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ১২ শতাংশ।
গবেষণার ফলাফল মূল্যায়ন করে গবেষকরা জানান, টিকা গ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে পুনরায় করোনা আক্রান্তের হার নিন্মমুখী।
এছাড়া টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রে দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের (সিনিয়র সিটিজেন) প্রাথমিক ভাবে টিকার আওতায় আনা গেলে করোনার স্বাস্থ্য এবং মৃত্যুঝুঁকি অনেংকাংশে কমে আসবে বলে গবেষকরা উপলব্ধি করেন।
গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন প্রফেসর ড. শারমিন চৌধুরী, ডাঃ মোহাম্মদ খালেদ মোশাররফ হোসেন, ডাঃ ইফতেখার আহমেদ রানা, ডাঃ ত্রিদীপ দাশ, ডাঃ প্রনেশ দত্ত, ডাঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম, ডাঃ তানভীর আহমদ নিজামী।
এই গবেষণায় গবেষকরা চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর অঞ্চলে অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকা টিকা গ্রহণকারী ও টিকা গ্রহণ না করা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের তুলনামূলক স্বাস্থ্যঝুঁকির মূল্যায়ন করেন। সিভাসু ও চাঁদপুর কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ ল্যাবে গত ২২ এপ্রিল ২০২১ থেকে ২২ জুন ২০২১ পর্যন্ত মোট বারো হাজার ৯৩৬ ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করা হয়, যার মধ্যে দুই হাজার ১৩৭ (১৬.৫২%) জনের শরীরে SARS-CoV-2 বা নোভেল করোনা ভাইরাস এর উপস্থিতি শনাক্ত হয়। উক্ত কোভিড-১৯ পজিটিভ ব্যক্তিদের মধ্যে কন্টাক্ট ট্রেসিং এর মাধ্যমে মোট এক হাজার ৯৫ জনের স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সমস্ত তথ্য ও উপাত্ত সম্পূর্ণরূপে পর্যবেক্ষণ করে গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৯৬৮ জন কোভিড-১৯ এর টিকা গ্রহণ করেননি। অন্যদিকে, ৬৩ জন এমন ব্যক্তি পাওয়া যায়, যারা বিভিন্ন সময়ের মধ্যে নির্ধারিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ডের শুধুমাত্র ১ম ডোজ টিকা গ্রহণ করেছেন এবং ৬৪ জন ১ম ও ২য় উভয় ডোজ টিকা গ্রহণ করেছিলেন। গবেষণায় আরো পাওয়া যায় যে, সংগৃহীত সমস্ত নমুনার মধ্যে ১ম ও ২য় ডোজ টিকা গ্রহনকারীদের কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের হার মোট নমুনা পরীক্ষার যথাক্রমে ০.৪৮ এবং ০.৪৯ শতাংশ ছিলো।
Discussion about this post