হার্টবিট ডেস্ক
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে এক মাসে রেকর্ড মৃত্যু হয়েছে। ১ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেওয়া তথ্যে ৩৫২ জনের মৃত্যর খবর জানানো হয়। এর মধ্যে রাজশাহী জেলার সবচেয়ে বেশি রোগী মারা গেছেন।
রামেক হাসপাতালের তথ্যমতে, এক মাসে এ হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে মারা যাওয়া ৩৫২ জনের মধ্যে রাজশাহীর ১৬৭ জন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১১৫ জন রয়েছেন। মৃতদের ১৭১ জন করোনা আক্রান্ত। বাকি ১৮১ জন করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। চলতি মাসে সবচেয়ে বেশি মারা ২৯ জুন ২৫ জন। সবচেয়ে কম মারা গেছে ১২ জুন চার জন।
এর আগে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ২৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৭, মার্চে ৩১, এপ্রিলে ৭৯ ও মে মাসে ১২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর গত বছরে সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল আগস্ট মাসে ২৬ জন।
এদিকে, রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে বুধবার (৩০ জুন) সকাল ৮টার মধ্যে মারা যাওয়াদের মধ্যে পাঁচ জন করোনা পজিটিভ ছিল।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবারণকারী আটজনই রাজশাহীর। বাকিদের মধ্যে চাঁপাইনবাগঞ্জের দুই জন, নাটোরের একজন, নওগাঁর একজন রয়েছেন। এদের মধ্যে সাতজন পুরুষ ও পাঁচজন নারী। মারা যাওয়াদের মধ্যে চার জনের বয়স ৬১ বছরের উপরে। বাকিদের মধ্যে ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে পাঁচ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সের মধ্যে দুই জন, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সের একজন। এদের মধ্যে পাঁচ জন মারা যান আইসিইউতে।
শামীম ইয়াজদানী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৩ জন। এর মধ্যে রাজশাহীর ৪৩ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আট জন, নাটোরের চার জন, নওগাঁর ছয় জন ও পাবনার দুই জন রোগী রয়েছেন। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৫০ জন।
বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ৪০৫ বেডের বিপরীতে হাসপাালে চিকিৎসাধীন আছেন ৪৬০ জন। অতিরিক্ত রোগীদের মেঝে ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক।
তিনি আরও জানান, চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে রাজশাহীর ৩০০ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫৬ জন, নাটোরের ৩৫ জন, নওগাঁর ৪০ জন, পাবনার ২২ জন, কুষ্টিয়ার চার জন, চুয়াডাঙ্গার একজন, দিনাজপুরের একজন ও মেহেরপুরের একজন রোগী রয়েছেন। আইউসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন ২০ জন।
এদিকে রাজশাহীতে একদিনের ব্যবধানে করোনা শনাক্তের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। মঙ্গলবার রাতে দুইটি ল্যাবে রাজশাহী জেলার ৩৯৩ নমুনা পরীক্ষা করে ১২৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। যা আগের দিনের চেয়ে ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ কমে করোনা শনাক্তের হার ৩২ দশমিক ০৬ শতাংশ পাওয়া গেছে।
এর আগের দিন সোমবার ছিল ৩৬ দশমিক ৯২ শতাংশ। এছাড়াও গত রবিবার ২৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ, শনিবার ২৯ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং শুক্রবার ৩৪ দশমিক ৫০ শতাংশ ছিল করোনা শনাক্তের হার।
ল্যাব সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল পৃথক দুইটি ল্যাবে তিন জেলার ৬৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ এসেছে ২৪৮ জনের। রাজশাহী জেলা ছাড়াও অপর দুই জেলার মধ্যে চাঁপাইনবাগঞ্জের ৪টি নমুনার মধ্যে দুইটি পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। আর নওগাঁর ২৪৬ নমুনার মধ্যে ১২০ জনের করোনাভাইরাস পাওয়া যায়। নওগাঁয় শনাক্তের হার ৪৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
উল্লেখ্য, ঈদের পর থেকে রাজশাহীতে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকে। শনাক্তের হার ৬০ শতাংশের উপরে উঠলে গত ১১ জুন সিটি করপোরেশন এলাকায় এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করে প্রশাসন। পরে সেটি দুই দফা বাড়িয়ে আজ ৩০ জুন মধ্য রাত পর্যন্ত করা হয়।
Discussion about this post