হার্টবিট ডেস্ক
সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে অনেকটা বদলে গেছে খুলনার সড়ক-মহাসড়কের চালচিত্র। ‘লকডাউন’ সর্বাত্মকভাবে পালনে বাধ্য করতে পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে প্রধান সড়ক ও মোড়ে মোড়ে টহল দিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
আগের দুই সপ্তাহের বিধিনিষেধের সঙ্গে এবারের লকডাউনের কোনো মিলই নেই। আগে রাস্তায় মানুষের সমাগম, চায়ের দোকানে আড্ডা দেখা গেলেও এবার রাস্তায় মানুষের চলাচল খুবই কম। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হলেই পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে।
রাস্তায় পুলিশের টহল গাড়ি, পণ্যবাহী ট্রাক, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেটকার, রিকশা, মোটরসাইকেলসহ জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহৃত সীমিত সংখ্যক যানবাহন ছাড়া তেমন যানবাহন চোখে পড়ছে না। বাইরের কেউ ঢুকতে পারবেন না, পাড়ার কেউ বেরও হতে না পারার জন্য বাঁশ দিয়ে অনেক সড়কের প্রবেশ পথ আটকে দিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২২ জুন) চলতি লকডাউনের প্রথমদিন এমন চিত্র দেখা গেছে খুলনায়।
জেলা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার ১৯ জুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খুলনা জেলা ও মহানগরীতে ২২ জুন থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ এবং লকডাউন ঘোষণা করা হয়।
বিধিনিষেধে বলা হয়, খুলনায় করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ায় ২৮ জুন পর্যন্ত সবধরনের দোকানপাট, মার্কেট, শপিংমল ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও কাঁচাবাজারের দোকান প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। সময়ের মধ্যে হোটেল-রেস্তোরাগুলো পার্সেল আকারে খাবার সরবরাহ করতে পারবে। ওষুধের দোকান সার্বক্ষণিক খোলা রাখা যাবে। সবধরণের পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে। জেলার অভ্যন্তরে সবধরনের সাপ্তাহিক হাট/গরুর হাট বন্ধ থাকবে।
জেলার অভ্যন্তরে অথবা আন্তঃজেলা গণপরিবহণ চলাচল বন্ধ থাকবে। খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের আগমন ও বহিরাগমন বন্ধ থাকবে। ইজিবাইক, থ্রি-হুইলারসহ যান্ত্রিক যানবাহন বন্ধ থাকবে। অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। বাইরে অবস্থানকালে সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে। তবে সরকারি-বেসরকারি অফিসের জরুরি কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস চলাকালীন তাদের নিজ নিজ অফিসের পরিচয়পত্র নিয়ে বাইরে চলাচল করতে পারবেন।
আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিসেবা যেমন-কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা দেওয়া, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলো (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাকসেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য, সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিগুলো, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এবং উৎপাদনশীল শিল্প ও কল-কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম এ বিধি-নিষেধের আওতামুক্ত থাকবে।
খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বাংলানিউজকে বলেন, খুলনায় সর্বাত্মক লকডাউন বাস্তবায়নে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জনসাধারণকে সচেতন করতে সমগ্র জেলায় মাইকিং ও সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন দু’দিন আগে থেকে চালানো হয়েছে। খুলনার সঙ্গে সাতক্ষীরার সংযোগ চুকনগর, যশোরের সংযোগ যুগনীপাশা ও বাগেরহাটের সঙ্গে সংযোগ কুদিরবটতলায় নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এসপি জানান, মোট জেলায় ২৬টি চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে পুলিশের যত দায়িত্ব আছে, সব বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে জেলার ৯ থানাকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেভাবেই মাঠে কাজ করছে পুলিশ। সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশের পক্ষ থেকে যা যা করার সবই করা হচ্ছে।
Discussion about this post