হার্টবিট ডেস্ক
রাজধানীর কলাবাগান এলাকা থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া গ্রিন লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপির (৪৭) গলায় একটি ও পিঠে দুটি ধারালো অস্ত্রের জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পুলিশের ধারণা একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
সোমবার (৩১ মে) ওই চিকিৎসকের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা তদন্ত করতে নিহত চিকিৎসক সাবিরার বাসায় আসে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ ও সিআইডি সদস্যরা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দ (ডিবি) পুলিশের রমনা বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিজুল হক বলেন, ওই চিকিৎসক বাসাটি ভাড়া নিয়ে থাকতেন এবং অন্য দুইটি রুম তিনি সাবলেট হিসেবে ভাড়া দিয়েছিলেন।
সাবলেটের ভাড়াটিয়া কানিজ ফাতেমার জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য অনুযায়ী তিনি বলেন,গত রাত থেকে সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। সকালে কানিজ ফাতেমা যখন হাটতে বের হন তখন ডা. সাবিরার দরজা বন্ধ ছিল। পরে ফিরে এসে দেখেন যে, সাবিরার রুম থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। পরে তিনি বাড়ির দারোয়ানকে ডাকে এবং রুমের তালা ভেঙ্গে ভিতরে গিয়ে ডা. সাবিরার মৃতদেহ দেখতে পায়। তাঁরা ধারণা করেছিল যে আগুন লেগে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এইচ এম আজিজুল হক বলেন, পরে পুলিশকে খবর দিলে আমরা এসে দেখি যে তার গলায় একটি গভির জখম রয়েছে। এছাড়া তাঁর পিঠেও দুটি জখম পাওয়া গিয়েছে। ফলে আমাদের কাছে এটি অস্বাভাবিক এবং রহস্যজনক মনে হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে এই ঘটনাকে আত্মহত্যা মনে হচ্ছে না। আমরা এ ঘটনার তদন্ত করছি এবং আশা করি খুব অল্প সময়ের মধ্যে এ রহস্যের জট খুলবে।
সাবিরার মামাতো ভাই মো. রেজাউল হাসান বলেন, এ মুহূর্তে আমরা কাউকে সন্দেহ করছি না। আমাদের মনে হচ্ছে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। বিষয়টিকে অন্যদিকে ডাইভার্ট করার জন্য আগুনের ঘটনা সাজানো হয়েছে। তদন্তের পর পুলিশ বিস্তারিত বলতে পারবে।
হত্যাকাণ্ডের পরপরই ঘটনাস্থলে যায় সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। ক্রাইম সিন জানায়, সাবিরাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা (ব্রুটালি কিল্ড) করা হয়েছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পরেই সাবিরার তোষকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তবে দাহ্য পদার্থ না থাকায় আগুন তেমন ছড়াতে পারেনি। তবে সাবিরার কিছু অংশ পুড়েছে।
সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের ইন্সপেক্টর শেখ রাসেল কবির বলেন, ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাবিরার শ্বাসনালী কেটে ফেলা হয়েছে। তার শরীরে রক্ত ও পোড়া ক্ষত ছিল। তবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। আলামত দেখে মনে হয়েছে রোববার (৩০ মে) মধ্য রাতের যেকোনো সময় এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে।
ওই নারী চিকিৎসক নিহতের ঘটনায় এ পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন জনকে হেফাজতে নিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তারা হলেন- নিহত চিকিৎসকের বাসার কাজের বুয়া, সাবলেট থাকা এক বাসিন্দা কানিজ সুবর্ণা, তার এক বন্ধু মাহাতির মোহাম্মদ স্পন্দন ও বাড়ির দারোয়ান রমজান।
ডিবি সূত্র জানায়, ডা. সাবিরা দুটি বিয়ে করেছিলেন। তার প্রথম স্বামী চিকিৎসক ছিলেন। তিনি একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। পরে সাবিরা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সাবিরার দ্বিতীয় স্বামী সামসুদ্দিন আজাদ, তিনি ন্যাশনাল ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তবে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে বনিবনা ছিল না তার।
জানা গেছে, সাবিরার দুই সন্তান রয়েছে। তার আগের স্বামীর ঘরে একটি ছেলে এবং দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে ৯ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। মেয়েকে নিয়ে কলাবাগানের এই বাড়িতে থাকতেন সাবিরা। গত রাতে মেয়েটিকে গ্রিন রোডের নানার বাসায় রেখে এসেছিলেন তিনি। রাতে বাসায় একা ছিলেন সাবিরা।
Discussion about this post