হার্টবিট ডেস্ক
ভারত সীমান্তবর্তী দেশের আট জেলায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হঠাৎ ব্যাপক হারে বেড়েছে। অধিক সংক্রমিত জেলাগুলো হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও খুলনা। সীমান্তে জনচলাচল ও পণ্য পরিবহনে মানা হচ্ছে না গাইডলাইন।
স্বাস্থ্য বিভাগ নির্দেশনা দিচ্ছে, কিন্তু তা বাস্তবায়নে কাজ করছে না অন্যান্য বিভাগ। করোনা মোকাবিলায় সার্বিক সমন্বয়ের বড়ই অভাব। দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি সংক্রমণ শুরু হয়েছে। করোনা রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। দেশের উত্তরাঞ্চল এখন স্বাস্থ্য বিভাগের বড় টেনশনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ২৪ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জে লকডাউনের বিধিনিষেধ জারি করে জেলা প্রশাসন, যা এখনো চলছে। বাকি সাত জেলায় লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ জারির সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটি।
ভারত থেকে বৈধ পথে যারা আসছেন, তাদের অনেকে করোনার নেগেটিভ সনদ আনছেন না। আবার অনেকে ডুপ্লিকেট নেগেটিভ সনদ নিয়ে দেশে প্রবেশ করেছেন। এদিকে সীমান্ত বন্ধ থাকলে অবৈধভাবে ভারত থেকে মানুষ আসা ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ ভারত থেকে অবৈধভাবে দেশে আসছে। দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে ছয়টিই ভারতীয় সীমান্তবর্তী। মোট ২৯টি জেলার ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে মানুষ যাতায়াত করছেই। বৈধ পথে যারা ফিরছেন, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু যারা অবৈধ পথে ফিরছেন, তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া ভারত থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাকের সঙ্গে ড্রাইভার ও সহকারীরা বিপজ্জনক ভারতীয় ধরনের করোনা ভাইরাস বহন করে আনছেন। তারাও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এতে দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, দেশের সীমান্তবর্তী আটটি জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকার দোহারে ধান কাটতে এসেছিলেন ৮২ জন শ্রমিক। এর মধ্যে ২৩ জনের শরীরে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। অথচ তারা কখনো ভারতে যাননি। অর্থাত্, দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি সংক্রমিত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে সীমান্ত আমাদের জন্য ভয়ের ব্যাপার। সীমান্তবর্তী আট জেলায় সংক্রমণ বাড়ছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। তবে তা নিয়ন্ত্রণে আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় সবাই করছি। স্বাস্থ্য বিভাগ নির্দেশনা দিতে পারে। তবে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব অন্যান্য প্রশাসনের।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটির এক সদস্য বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জকে আগেই অবরুদ্ধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শনিবার কমিটির বৈঠকে নওগাঁ, নাটোর, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও খুলনা জেলাও ‘লকডাউন’ করার সুপারিশ করা হয়েছে। কমিটি তাদের এই সুপারিশ চিঠি দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। যে কোনো সময় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
উত্তর-পশ্চিমের ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ এখন করোনার হটস্পট। এ জেলায় করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্তের পর চলছে সাত দিনের বিশেষ লকডাউন। এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিশেষ লকডাউন ঘোষণার পরও রাজশাহী ও নওগাঁ হয়ে নাটোরসহ বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ। এতে করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে পড়েছে রাজশাহী, নওগাঁ ও নাটোর।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে সাত জন চাঁপাইনবাবগঞ্জের। প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ আরো এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত বন্ধের মেয়াদ আরো ১৫ দিন বেড়েছে। আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত সীমান্ত বন্ধ থাকবে। ভারতে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় দেশটির সঙ্গে গত ২৬ এপ্রিল প্রথম দফায় সব স্থল সীমান্ত বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর আরো দুই দফায় ৩০ মে পর্যন্ত সীমান্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে সর্বশেষ শনিবার সীমান্ত বন্ধের মেয়াদ আরো এক দফা বাড়ানো হয়েছে। সীমান্ত বন্ধের মেয়াদ বাড়ানোর পরে আগের মতোই ভারতে চিকিত্সার জন্য অবস্থান করা বাংলাদেশি নাগরিক, যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে, তাদের ফিরতে হলে বিশেষ অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশে ফিরতে পারবেন। অনুমতির জন্য সেখানকার বাংলাদেশ মিশনে আবেদন করতে হবে। বাংলাদেশি নাগরিকেরা বেনাপোল, বুড়িমারী, হিলি ও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ফিরতে পারবেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় করোনা শনাক্তের হার ৫৭ শতাংশ। লকডাউন বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে গতকাল রবিবার জেলা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ২৭টি চেকপোষ্ট বসিয়ে বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের।নওগাঁয় আগে যেখানে শনাক্তের হার ছিল গড়ে ১৮ শতাংশ, বর্তমানে সেটি বৃদ্ধি পেয়ে ৫৪ শতাংশ শনাক্ত হচ্ছে। গত দুই দিনে নওগাঁয় করোনায় দুই জন মারা গেছেন। আর এ পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ৪০ জনের। নাটোর জেলায় শনিবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১ হাজার ৭৩৬ জন। তার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৩ জন। সংক্রমণের হার ৪০ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
Discussion about this post