হার্টবিট ডেস্ক
কিশোরী বা নারীর জীবনের একটি স্বাভাবিক এবং প্রকৃতি প্রদত্ত প্রক্রিয়া হল ঋতুস্রাব। এটি কোন রোগ নয়। প্রতি ২৮ দিন পর পর মেয়েদের মাসিক বা ঋতুস্রাব হয় এবং ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত স্থায়িত্ব হয়। আবার কারো কারো ১০দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। মাসিকের সময় জরায়ু থেকে রক্ত নিঃসরণ হতে থাকে।
মাসিক শুরু হওয়ার পর থেকে মেয়েদের সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। যদি মাসিক বা ঋতু না থাকত তাহলে মানুষের প্রজনন হতো না।আর প্রজনন না থাকলে আমরাও পৃথিবীতে আসতে পারতাম না। আর এই মাসিক নিয়ে রয়েছে অনেকের ভুল ধারণা এবং কুসংস্কারও রয়েছে বিস্তার। তাই মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে এবং এ বিষয়ে সবাইকে সঠিক তথ্য জানাতে হবে। মাসিক সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে, সঠিক তথ্য জানাতে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতি বছর ২৮ মে পালিত হয় বিশ্ব মাসিক স্বাস্থ্য দিবস।
পিরিয়ড প্রকৃতির পক্ষ থেকে নারীদের জন্য একটি উপহার। এ উপহার নিয়ে নারীদের বিনা সংকোচে কথা বলার অধিকার রয়েছে।আমাদের দেশে নারীর জন্য পিরিয়ড একটি লজ্জার ব্যাপার মনে করা হয়। এজন্য পরিবারের বড়রাও মেয়েদের পিরিয়ড নিয়ে খুব একটা কিছু বলেন না।
এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে নারীরা যেসব কারণে মৃত্যুবরণ করেন, তার মধ্যে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে পিরিয়ডের সময় স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার না করা। এদিকে, বাংলাদেশে মাত্র ২০ শতাংশ নারী স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন।
১১-১২ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ের জন্য পিরিয়ডের প্রথম অভিজ্ঞতা হয়, ভয়াবহ ও বিব্রতকর। অসচেতনতার কারণে পিরিয়ডকালীন সময় অনেক কিশোরীই ভয় পেয়ে লজ্জায় বাড়ির কাউকে না জানিয়ে দুশ্চিন্তা করে। যা তার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সমস্যা করতে পারে।
মেয়ে সন্তানের জন্য পিরিয়ড সম্পর্কে জানা ও একটা বয়সের পর মোটামুটি প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন। তাই পিরিয়ডের মতো জরুরি বিষয় নিয়ে লজ্জা, ট্যাবু না রেখে সন্তানের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে হবে। সন্তান বয়ঃসন্ধিতে এলেই এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে শুরু করুন৷ শরীরিক পরিবর্তন, পিরিয়ড কেন হয়, সেই বিষয়ে বৈজ্ঞানিকভাবেই স্পষ্ট ধারণা দিন সন্তানকে৷
টিভিতে স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপন দেখে আপনার ছোট পাঁচ বছরের শিশুটিও যদি জানতে চায়, তাকে এটা ওটা না বুঝিয়ে খুব সাধারণভাবে বুঝিয়ে বলুন। এতে করে নারীর প্রতি সে সম্মান নিয়ে বেড়ে উঠবে, খামোখা অতি আগ্রহ দেখাবে না।
কিশোরী কন্যার পাশে থাকুন, তাকে বোঝান পিরিয়ড কোনো অসুখ না, এটা নারী জীবনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সন্তানের পিরিয়ড হলে তার স্বাস্থ্যকর, পরিষ্কার থাকার বিষয়ে লক্ষ্য রাখুন। ইনফেকশন এড়াতে এসময়ে কাপড়, তুলা, টিস্যু নয় ব্যবহার করতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত সেনিটারি ন্যাপকিন।
পিরিয়ড চলাকালীন কিশোরীর বিরক্তিভাব, শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা ও দুর্বলতা আসে। দুশ্চিন্তা, ভয় ও মানসিক অবসাদ দূর করতে এই সময়ে সঠিক খাবারের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। এ সময়ে খাদ্য তালিকায় টকদই, মাছ, ছোলা, আদার রস, রসুন, দুধ, আঙুর, কলা, বাদাম, ডার্ক চকলেট, সবুজ পাতাযুক্ত সবজি ও প্রচুর পানি রাখুন।
মেয়েদের সঠিক সময়ে মাসিক হওয়া তার শারীরিক ও মানসিকভাবে বেড়ে ওঠার পূর্বশর্ত। তাই মাসিককালীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানা থাকা তার অধিকার। এ অধিকার আদায়ে আমাদের সবার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। মাসিক শুরু হলে ভয় বা লজ্জা না পেয়ে পরিবারের বড় কোনো নারী সদস্যকে জানাতে হবে ও পরামর্শ নিতে হবে। বড়দেরও কর্তব্য ছোটদের এ বিষয়ে আগে থেকে জানানো। মাসিক বিষয়ে কুসংস্কার ও অস্বস্তি কাটাতে পরিবারের পুরুষ সদস্যদেরও রয়েছে সমান দায়িত্ব।
এ সময় সুস্থ থাকার জন্য রয়েছে বেশ কিছু করণীয়: মাসিকের সময় পরিষ্কার সুতি কাপড় বা ভালো স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করা। তবে সব চেয়ে নিরাপদ স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করা। প্রতিদিন পরিচ্ছন্ন গোসল করা, কখনোই ভেজা বা অপরিষ্কার কাপড় বা প্যাড ব্যবহার না করা। কাপড় বা প্যাড বদলানোর পর হাত ভালো করে ধুয়ে নেয়া। কাপড় রোদে শুকিয়ে, শুকনো ও পরিষ্কার স্থানে রাখলে পরবর্তী মাসিকের সময় তা ব্যবহার করা যায়। মাসিকের সময় বেশি দুর্বলতা কিংবা অন্য কোনো সমস্যা হলে পরিবারের নারী সদস্য বা বিশ্বস্ত প্রিয়জনের সহায়তা নিতে হবে।
Discussion about this post