হার্টবিট ডেস্ক
তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নানাবিধ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় শরীরে। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া তার ভেতর একটি বলা চলে। মূত্রতন্ত্রের প্রদাহের কারণেই প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া দেখা দেয়। তবে এ সমস্যা তুলনামূলকভাবে পুরুষের চেয়ে নারীদের বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে যাদের পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেছে কিংবা ডায়াবেটিস রয়েছে বা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের এ ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যায়।
মূত্রনালির সংক্রমণের জন্য প্রায় শতকরা ৯৫ ভাগের বেশি ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া দায়ী। এর মধ্যে ক্লেবসিয়েলা, সিউডোমনাস অন্যতম। তবে কিছু ক্ষেত্রে ফাঙ্গাস, প্রোটিয়াসের কারণেও এ সমস্যার উদ্ভব ঘটতে পারে।
প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া (DYSURIA)সমস্যা কমবেশি অনেকেরই হয়ে থাকে। বিশেষ করে যারা কম পানি পান করেন তাদের এ সমস্যা বেশি। প্রস্রাবের সময় ব্যথা, জ্বালাপোড়া ও অস্বস্তি হয়। এটি কোনো রোগ নয়; রোগের উপসর্গ। এটি নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই খুব প্রচলিত সমস্যা। তবে পুরুষের তুলনায় নারীর সমস্যা একটু বেশি হয়।
প্রস্রাবে সংক্রমণ কেন হয়?
জরায়ুমুখের প্রদাহ, যোনিপথে ছত্রাক সংক্রমণ বা ক্ল্যামাইডিয়ার মতো জীবাণু সংক্রমণের কারণে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হতে পারে। এ ছাড়া তলপেটে ব্যথা, মাসিক ব্যথা, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, সাবান বা কসমেটিকস বা প্যাডে অ্যালার্জিসহ বিভিন্ন কারণে প্রস্রাবে সংক্রমণ হতে পারে। বারবার সংক্রমণ হলে ডায়াবেটিস, কিডনি বা পাথর সমস্যা, মূত্রথলিতে কোনো সমস্যা আছে কি না দেখে নিন।
প্রস্রাবে ব্যথা বা জ্বালাপোড়া হওয়ার একটি কারণ হতে পারে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা ইউটিআই। আর পুরুষের ক্ষেত্রে প্রোস্টেট গ্রন্থির বিভিন্ন সমস্যার জন্য এটি হতে পারে। এ ছাড়া কিডনিতে পাথর হওয়া, কিডনিতে সংক্রমণ হওয়া, যৌনবাহিত রোগ, ভ্যাজাইনাল ইনফেকশন, পানিশূন্যতা— এগুলোর কারণেও কিন্তু প্রস্রাবে ব্যথা বা জ্বালাপোড়ার সমস্যা হতে পারে।
প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুয়ায়ী সঠিক মেয়াদে ও সঠিক মাত্রায় সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করতে হবে। আর যাদের ঘন ঘন সংক্রমণ হয়, তারা দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিতে পারেন।
প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সঙ্গে বেশির ভাগ নারীই পরিচিত। বিশেষ করে মধ্য বয়সী ও বয়স্ক নারীদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। প্রস্রাবে সংক্রমণ সন্দেহ হলে অবশ্যই পরীক্ষা করা ও ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
যাদের ঘন ঘন সংক্রমণ হয়, তারা দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিতে পারেন।
মাসিকের সময়, অধিক সময় নেপকিন ব্যবহার, সঙ্গীর প্রস্রাবে সংক্রমণ, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াও বিভিন্ন কারণে নারীর প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হতে পারে।
লক্ষণ
– পিঠের পেছন দিকে উদরের নিচে ব্যথা হয়।
– প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া, ব্যথা হওয়াসহ অন্যান্য অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে পারে।
– বারবার প্রস্রাবের তাগিদ অনুভব কিন্তু খুবই সামান্য প্রস্রাবের নির্গমন হয়।
– ঘোলাটে, কড়া গন্ধযুক্ত এবং রক্ত সমন্বিত প্রস্রাব হতে পারে।
– প্রস্রাবের সঙ্গে হলদেটে পদার্থ বের হতে পারে।
– নারীদের ক্ষেত্রে যৌন মিলনের সময় পীড়াদায়ক অনুভুতি বা ব্যথা হতে পারে।
প্রস্রাবে সংক্রমণ থেকে বাঁচতে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে-
প্রচুর পানি পান করুন
প্রস্রাবে সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। প্রস্রাবে সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বিশুদ্ধ পানি পান করা জরুরি।
আমিষ নয়; প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খাওয়া উচিত
মাসিক চলাকালীন আমিষ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এ সময় আমিষের বদলে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খেতে হবে।
ঘন ঘন সংক্রমণ
প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুয়ায়ী সঠিক মেয়াদে ও সঠিক মাত্রায় সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করতে হবে। আর যাদের ঘন ঘন সংক্রমণ হয়, তারা দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিতে পারেন।
পানিপানের পরিমাণ বাড়ান
পানিপানের পরিমাণ বাড়ালে প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়ার সমস্যা কম হবে। পানি শরীর থেকে দূষিত ব্যাকটেরিয়াগুলো বের করে দেবে। এটি প্রস্রাব ঠিকঠাকমতো হতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সমস্যা হলে তরল খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। যেমন ধরুন- স্যুপ, জুস এবং পাশাপাশি পানিজাতীয় ফল ও সবজি খেতে হবে।
গরম চাপ
গরম চাপও দিতে পারেন। এতে ব্লাডারের চাপ কমবে এবং ব্যথা কমবে। এ জন্য আপনি হিটিং প্যাড ব্যবহার করতে পারেন অথবা কোনো কাপড় তাপে গরম করে পেটে ব্যবহার করতে পারেন। একে তলপেটে ৫ মিনিট রাখুন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। আবার দিন। এভাবে কয়েকবার করুন।
দই
দইয়ে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া। এটি শরীরের পিএইচের ভারসাম্য রক্ষা করে। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কমাতে প্রতিদিন দুই থেকে তিন কাপ দই খান।
সঙ্গীর সঙ্গে মেলামেশা
সঙ্গীর সঙ্গে মেলামেশার আগে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে, আপনার সঙ্গীর প্রস্রাবে সংক্রমণ হয়েছে কিনা। যদি তা হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই মেলামেশা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ সঙ্গীর প্রস্রাবে সংক্রমণ হলে তা আপনারও হতে পারে।
Discussion about this post