ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী
টনসিল এক ধরণের লসিকাগ্রন্থি বা লিস্ফয়েড টিস্যু। এতে কোন প্রকার ইনফেকশন বা প্রদাহ হলে আমরা এটাকে টনসিলাইটিস বলি। মানবদেহে গলার ভিতরে দু’পাশে একজোড়া Palatine tonsil থাকে, টনসিলের প্রদাহ বলতে আমরা এর ইনফেকশনকেই বুঝে থাকি। টনসিলের ইনফেকশন একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা।
টনসিলাইটিস সাধারণত ৩ থেকে ১৪ বছরের শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে বড়দের ক্ষেত্রে যে একেবারেই হয় না, তা কিন্তু নয়। টনসিল ইনফেকশনের জন্য ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া উভয়ই দায়ী। ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে প্রধানতঃ বিটা হেমোলাইটিক স্ট্রেপ্টোকক্কাস দিয়ে হয়। এই ইনফেকশনের অন্যান্য কারণ সমূহের মধ্যে রয়েছে বার বার ঠান্ডা সর্দি লাগা, পুষ্টিহীনতা, পরিবেশ দূষণ, দেহে অপর্যাপ্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং অতিরিক্ত Cold Drinks এ আসক্তি ও আবহাওয়ার পরিবর্তন।
লক্ষণ দেখে কিভাবে টনসিল ইনফেকশন বুঝবেন :
* গলাব্যথা এবং সাথে খাবার গিলতে সমস্যা হতে পারে এবং শরীরে ক্লান্তি ভাব থাকে।
* এই ক্ষেত্রে গলা ব্যাথার সাথে জ্বর ১০২ ডিগ্রি-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। সাথে মাথা ব্যথা ও বমির ভাব থাকতে পারে।
* গলার সাথে কানের সম্পর্ক রয়েছে। তাই টনসিলের ইনফেকশনে কানে ব্যথা থাকবে এবং গায়ে ব্যথা হতে পারে।
* শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক সময় মুখ দিয়ে লালা পড়তে দেখা যায়।
* অনেক সময় মারাত্মক ইনফেকশনে মুখ খুলতে অসুবিধা হতে পারে।
এই রকম সমস্যাকে আমরা তীব্র ইনফেকশন বা Acute tonsillitis বলে থাকি। চিকিৎসকের দেয়া উপদেশ মেনে চললে এবং সঠিক সময়ে নিয়মিত ঔষধ সেবন করলে টনসিলের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সাধারণতঃ এন্টিবায়োটিক, মাউথওয়াশ, ব্যথার ঔষধ, এন্টিহিস্টামিন ও প্রচুর পরিমাণে পানি পানের মাধ্যমে এই ইনফেকশনের চিকিৎসা করা হয়। তবে কেউ যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ না করে এবং চিকিৎসকের উপদেশ মেনে না চলে তবে দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ হয়ে থাকে, যাকে আমরা Chronic tonsillitis বলে থাকি।
চিকিৎসা শাস্ত্রে Chronic tonsillitis কে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। তবে এই দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশন যদি বছরে চার-পাঁচবার করে পরপর দুই বছর হয়, তবে অসুস্থ টনসিল অপারেশন করিয়ে নেয়াই ভালো।
দীর্ঘমেয়াদী টনসিলের ইনফেকশন থাকলে অপারেশন না করালে নিম্নোক্ত সমস্যা হতে পারে :
* টনসিলের ইনফেকশন চারপাশে ছড়িয়ে টনসিলে পূজ জমে ফোঁড়া হতে পারে (Peritonsilar Abscess)
* টনসিল বড় হয়ে শ্বাস নেয়ার পথ বন্ধ করে দিলে শ্বাসকষ্টও হতে পারে। এছাড়া বড় টনসিলের কারণে খাবার গিলতে গেলে কষ্ট হতে পারে।
* ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা থেকে কানে ইনফেকশন হতে পারে।
* বাতজ্বর বা Rheumatic Fever হতে পারে।
* রক্তের মাধ্যমে টনসিলের জীবাণু কিডনিতে ছড়িয়ে পরতে পারে।
* বয়স্কদের ক্ষেত্রে একদিকের টনসিল বড় থাকলে এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ থাকলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তাই এই ধরণের সমস্যা অবহেলা করা উচিত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ঔষধের মাধ্যমে যদি সমাধান না হয়, তবে টনসিল অপারেশন করানো ভালো এবং নিরাপদ। আমাদের দেশে প্রতিদিন নিয়মিত টনসিল অপারেশন হচ্ছে। তবে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির কারণে ই এন টি সোসাইটি থেকে টনসিল এর রুটিন অপারেশন সর্বোচ্চ সতর্কতা ছাড়া যথাসম্ভব এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছিল। তবে আশার কথা তীব্র ইনফেকশন প্রথমে হলে সেক্ষেত্রে সঠিকভাবে ভালো ঔষধ সেবন, উপদেশমতো ঠাণ্ডা এড়িয়ে চললে, কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করলে এবং আদা-লেবু রং চা পান করলে অপারেশন এর টেবিলে যাওয়া থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
কখন টনসিলের অপারেশন করা যাবে না?
* টনসিলে তীব্র ইনফেকশন থাকলে অর্থাৎ জ্বর বা ব্যথা থাকা অবস্থায় অপারেশন করা যাবে না।
* তিন বছরের কম বাচ্চাদের।
* এছাড়াও কারো রক্তে হিমগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকলে/রক্তশূন্যতা থাকলে।
* হিমোফিলিয়া নামক রক্তরোগ এর ইতিহাস থাকলে।
* মহিলাদের মাসিক চলাকালীন অবস্থায়।
Discussion about this post