হার্টবিট ডেস্ক
হার্ট আমাদের দেহের এমন একটি অংশ যা ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব। আর কোনো ভাবে যদি এর ক্ষতি হয় তবে মৃত্যু অবধারিত। অনেকেই এর জন্য অপারেশনও করে থাকেন। তবে একটি উপায়ে অপারেশন ছাড়াই হার্টের রক্তনালী ব্লকের চিকিৎসা করা সম্ভব।
হার্ট আমাদের শরীরে রক্ত সরবারাহ করে থাকে।হার্টের ওপরে অবস্থিত করোনারী রক্তনালী থেকে হার্ট তার নিজস্ব রক্ত সরবরাহ পেয়ে থাকে। এই রক্তনালী গুলো বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে গেলে হার্টে প্রয়োজনের তুলনায় রক্ত সরবরাহ কম পায় ফলে বুক ব্যথা শুরু হয় যাকে এনজাইনা বলে।
হার্টের কোনো একটি রক্তনালী যদি হঠাৎ করে শতভাগ বন্ধ হয়ে যায়, তবে তৎক্ষনাৎ ঐ রক্ত নালী দিয়ে হার্টের যে অংশ পরিবাহিত হত তা দূর্বল হয়ে কোষগুলো পচে যেতে থাকে যাকে হার্ট এ্যাটাক বলা হয়। হার্ট এ্যাটাকের পর মূহুর্ত গুলো খুবই বিপজ্জনক, কারণ তাৎক্ষনিক ১০-১৫% মৃত্যু ঘটে।
এ্যানজাইনা বা বুক ব্যথা শুরু হবার পরে এনজিওগ্রাম করে হার্টের রক্তনালী গুলো দেখে নিয়ে রক্তনালীর ব্লক অনুযায়ী রিং পরানো বা ষ্টেন্টিং করা হয় অথবা বাইপাস সার্জারীর পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, এ্যানজিওগ্রাম করার পরে রক্তনালীতে ব্লক থাকা সত্ত্বে ও শতকরা ১০ ভাগ ক্ষেত্রে রিং পরানো বা বাইপাস করা সম্ভব হয় না। এছাড়া বাইপাস বা রিং পরেও একটা সময়ের পরে রক্তনালী পূনরায় ব্লক হয়ে বুকের ব্যথা আসতে পারে।
আবার হার্ট এ্যাটাকের পর হার্টের মাংসপেশী ড্যামেজ হয়ে যাবার কারণে হার্টের সংকোচন ক্ষমতা একেবারে কমে যায় সেক্ষেত্রে কোনো প্রকার অপারেশনের ঝুকিতে যাওয়া সম্ভব হয় না। এ সকল ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ঔষুধের উপরেই রোগীদের নির্ভর করতে হয় । কিন্তু শুধুমাত্র ঔষুধে এ সকল রোগীদের বুক ব্যথা কমানো সম্ভব হয় না। এসকল ক্ষেত্রে ইসিপি হার্ট থেরাপী একটা ভূমিকা রাখে। ই এস এম আর হার্ট থেরাপী এ সকল রোগীদের জন্য আশার আলো জাগিয়েছে।
কাদের জন্য প্রয়োজ্য
> যাদের হার্টের রক্তনালীতে ব্লক আছে কিন্তু রক্তনালীর গঠন বৈশিষ্ট্যের কারণে রিং বসানো বা বাইপাস সার্জারি করা যাচ্ছে না।
> যাদের রক্তনালীর ব্লকের কারণে ইতিমধ্যেই বাইপাস সার্জারি বা রিং বসিয়ে ফেলেছেন কিন্তু পরবর্তিতে আবারো বুকের ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছেন।
> যাদের রক্ত নালী সর্ম্পূন রুপে বন্ধ হয়ে ক্যালসিয়াম জমে গেছে বিধায় সেখানে রিং বসানো সম্ভব হচ্ছেনা।
> যাদের হার্ট এ্যাটাকের ফলে হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা কমে যাবার কারণে বার বার শ্বাস কষ্ট হচ্ছে বিধায় অন্য কোনো অপারেশনের ঝুকিতে যাওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।
> যাদের হার্টের ছোট ছোট রক্তনালী গুলোতে ব্লক থাকার কারণে সেখানে রিং বসানো যাচ্ছে না।
যেভাবে ই এস এম আর থেরাপি প্রয়োগ করা হয়
এ্যানজিওগ্রামের মাধ্যমে যাদের রক্তনালীতে ব্লক পাওয়া গেছে তাদের থ্যালিয়ম স্ক্যানিং টেষ্টের মাধ্যমে হার্টের রক্ত স্বল্পতায় আক্রান্ত অংশগুলোকে চিহিৃত করা হয়। রোগীকে ই এস এম আর যন্ত্রের বেডে শোয়ানো হয়। তারপর ইকোকার্ডিওগ্রাম যন্ত্রের সাহায্যে রোগীর হার্টের রক্ত স্বল্পতায় আক্রান্ত অংশগুলোকে ইকোর মাধ্যমে ছবিতে আনা হয়। তারপর ইকোর মাধ্যমে সনাক্তকৃত অংশে ইএসএমআর মেশিনের এ্যাপলিকেটরের মাধ্যমে সেই অংশগুলোকে ম্যাপিং করা হয় এবং একেকটি অংশে ১০০-৩০০ শক প্রদান করা হয়। ই এস এম আর(একসট্রা করপোরিয়াল শকওয়েভ মায়োকার্ডিয়াল রিভাসকুলার রাইজেশন) থেরাপীতে সর্বাধুনিক কমপিউটারাইজড মেশিনের সাহায্যে হাই ভোলটেজ আলট্রাসনিক শক ওয়েভ হার্টের দুর্বল মাংসপেশীতে প্রয়োগ করা হয়। যার ফলে হার্টের ব্লকের রক্তনালীর আশেপাশে নতুন রক্তনালী তৈরি হয়।
পৃথিবীর প্রায় ২০টি দেশের অর্ধ শতাধিক হাসপাতালে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে এই সফল চিকিৎসা। তাই যারা এই সমস্যায় আছেন, তারা ব্যথা বেদনা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিহীন সম্পূর্ন নতুন প্রযুক্তির এই ই এস এম আর থেরাপি নিতে পারেন।
Discussion about this post