DR. ABU HENA MAHBUB, FCPS (surgery)
ORTHOPEDIC SURGEON, APOLLO HOSPITAL, DILLHI
হাতের আঙ্গুলগুলোকে সার্জনরা বলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ যন্ত্র (Instrument) হাতের যে কোন কাজ আমরা আঙ্গুল ব্যবহার করেই করে থাকি। প্রতি হাতে সাধারণত পাঁচটি আঙ্গুল। যে কোন একটি আঙ্গুলের অসুবিধা পুরো হাতটিকে অকেজো করে ফেলতে পারে। সাধারণভাবে পুরো হাতের কাজকে যদি আমরা ১০০ ধরি তবে বৃদ্ধাঙ্গুলি একাই ৬০ ভাগ কাজে অংশগ্রহণ করে। বাকী আঙ্গুলগুলো সবাই মিলে করে ৪০ ভাগ কাজ। এই জন্য বলা হয় বৃদ্ধাঙ্গুলি না থাকা মানে প্রায় পুরো হাতটাই নাই।
হাতের আঙ্গুল গুলোর নড়াচড়া একটি অতি জটিল বিষয়। যেমন ধরুন জামার বোতাম লাগানো। এটি একটি অতি জটিল প্রক্রিয়া। সাধারণভাবে আমরা তা খেয়াল করিনা। কিন্তু কোনভাবে যদি কোন আঙ্গুলের নার্ভ, মাংশপেশী বা রগ (Tendon) নষ্ট হয় তখন আমরা বুঝি যে, জামার একটা বোতাম লাগানো কত জটিল এবং কষ্টের ব্যাপার।
আঙ্গুলের গঠন
সাধারণত প্রতিটি আঙ্গুলে তিনটি হাড়, তিনটি জয়েন্ট, কয়েকটি মাংশপেশী রগ (Tendon), তিনটি নার্ভ এবং অনেক লিগামেন্ট থাকে। প্রতিটি আঙ্গুলে কমপক্ষে দুইটি নার্ভ কাজ করে। কোন কোন আঙ্গুলে তিনটা নার্ভও কাজ করে। এছাড়া রক্তনালী তো রয়েছেই। এগুলোর যে কোনটির অসুখ হলে পুরো আঙ্গুল এবং হাতটাই অকেজো হয়ে পড়ে।
আঙ্গুল ব্যথার কারণ সমূহ
- সরাসরি আঘাত লাগা: হাড় ভাঙ্গা, থেতলানো, কেটে যাওয়া, ছিড়ে যাওয়া
- আঘাত ছাড়া আঙ্গুলে ইনফেকশন।
- আঙ্গুলে বিভিন্ন ধরণের প্রদাহ জনিত ব্যথা। যেমন ঃ রিউমাটয়েড আর্থরাইটিস, অস্টিওআর্থরাইটিস ইত্যাদি।
- শরীরের অনেক অসুখের জন্য হাতের আঙ্গুল আক্রান্ত হতে পারে। যেমন: রিউমাটয়েড আর্থরাইটিস।
- কনুই এর কাছে রগে (Tendon) প্রদাহ।
- কব্জি অথবা কনুই এর কাছে নার্ভে চাপ লাগা।
- ঘাড়ের আশেপাশে এবং মেরুদন্ডের অনেক রোগেই আঙ্গুলে ব্যথা, ঝিম ঝিম করা এবং কাঁটা কাঁটা অনুভূত হতে পারে।
- মস্তিষ্কের বিভিন্ন অসুখেও আঙ্গুলে ব্যথা এবং দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
উপসর্গ সমূহ
আঙ্গুলে সরাসরি কোন আঘাত ছাড়াই:
- আঙ্গুলে ব্যথা।
- ফুলে যাওয়া, গরম হওয়া।
- আঙ্গুল লাল হয়ে যাওয়া।
- আঙ্গুল অবশ হওয়া।
- আঙ্গুলে কাঁটা কাঁটা ও ঝিম ঝিম অনুভূত হওয়া।
- আঙ্গুলের জয়েন্ট বা জয়েন্টগুলো নাড়াতে না পারা এবং জয়েন্ট ফুলে যাওয়া।
- সকালে ঘুম থেকে উঠার পর আঙ্গুলের জয়েন্ট আড়ষ্ট হয়ে থাকা রিউমাটয়েড আর্থরাইটিস এর প্রাথমিক লক্ষণ।
- আঙ্গুলে ব্যথার জন্য ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া।
- আঙ্গুলে আঘাতের জন্যও উপরোক্ত উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে।
আঙ্গুলের ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা
আঙ্গুলে সাধারণ মচকানো (Strain / Sprain) এর জন্য ব্যথার চিকিৎসা ঘরে করা যেতে পারে:
- ব্যথার সাধারণ ঔষধ সেবন।
- দুই-তিন দিন আঙ্গুল না নাড়ানো (অবশ্যই মনে রাখতে হবে পাঁচ দিনের বেশী আঙ্গুল নাড়ানো বন্ধ রাখলে আঙ্গুলের জয়েন্ট চিরতরে নষ্ট হয়ে যেতে পারে)।
- আঙ্গুল ফুলে গেলে হাত উঁচু করে রাখতে হবে।
- যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি আঙ্গুলের জয়েন্ট নাড়ানো শুধু করতে হবে।
- ব্যথা নিরাময়ের জন্য আঙ্গুলের মালিশ নিষেধ।
- গরম / ঠান্ডা স্যাঁক দেয়া যাবে।
তবে যথা শীঘ্র সম্ভব ডাক্তারের কাছে যাওয়াই ভালো।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন
- আঙ্গুলে বড় কোন আঘাতের পর ব্যথা হলে সরাসরি ডাক্তারের কাছে যাওয়াই ভাল।
এছাড়া: - আঘাত ছাড়াই আঙ্গুলে প্রচন্ড ব্যথা এবং সাধারণ ঔষধে কাজ হচ্ছে না / দিন দিন ব্যথা / ফোলা বাড়ছে।
- আঙ্গুল ফুলে গেলে, চামড়া লাল হলে, সাথে জ্বর থাকলে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের কাছে যাবেন।
- আঙ্গুল অবশ অথবা কাঁটাকাঁটা ও ঝিম ঝিম লাগলে।
- আঙ্গুলের জয়েন্ট সমূহ নাড়াচাড়া করতে না পারলে ।
- আঙ্গুল কালো বা বিবর্ণ হতে থাকলে।
Discussion about this post