হার্টবিট ডেস্ক
বেশির ভাগ মানুষই বিভিন্ন সময় হঠাৎ মাংসপেশিতে টানের সমস্যায় ভুগে থাকেন। বিশেষ করে হাঁটুর নিচের মাংসপেশিতে (যাকে মেডিকেল পরিভাষায় কাফ মাসল বলা হয়) এ সমস্যা বেশি দেখা দেয়। কারো কারো ক্ষেত্রে রাতে বিছানায় ঘুমের মধ্যে হঠাৎ পায়ের মাংসপেশি টেনে ধরে মনে হয় যেন ছিঁড়ে যাবে টেনডনটি। এ ছাড়া দেখা যায়, বসা থেকে উঠতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে উঠতে পারে না। টেনে ধরে পায়ের মাংসপেশি। যাকে মেডিকেল পরিভাষায় মাসল ক্রাম্পিং বা মাসল স্পাজস বলা হয়।
যখন পেশি অনিচ্ছাকৃত এবং জোর করে সংকুচিত হয়ে পড়ে এবং শিথিল হতে পারে না, তখন একে মাসল স্পাজম বলে। বেকায়দায় ঘুমানোর কারণে ঘাড়ের মাংসপেশিতে টান পড়ার কারণেই সাধারণত এটি হয়ে থাকে।
মাসল স্পাজম খুবই সাধারণ ব্যাপার এবং শরীরের যেকোনো পেশি এতে আক্রান্ত হতে পারে। পেশির কিছু অংশ কিংবা বেশি জায়গা নিয়ে এটি দেখা দিতে পারে। মাসল স্পাজম সাধারণত ঊরু, পা, হাত, বাহু, তলপেট এবং কখনো কখনো বুকের অস্থি বরাবর হয়ে থাকে। তবে কাঁধ, ঘাড়, পিঠের মাংসপেশিতে টান পড়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
মাসল স্পাজমে কেমন বোধ হয়
মাসল স্পাজমে আক্রান্ত ব্যক্তি পেশিতে হালকা থেকে প্রচ- টান অনুভব করে। এতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। এ সময় আক্রান্ত এলাকা স্পর্শে স্বাভাবিকের চেয়ে কঠিন বোধ হয়। এ ছাড়া আক্রান্ত স্থানে মৃদু টান বা ঝাঁকি দেওয়ার বিষয়টি দৃশ্যমান হতে পারে। এটি কয়েক সেকেন্ড থেকে ১৫ মিনিট এমনকি বেশ কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
মাসল স্পাজমের কারণ
বিভিন্ন কারণে এই মাংসপেশি টেনে ধরতে পারে। যেমন : আমাদের শরীরে রক্তের মধ্যকার ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম কমে যায়। তখন দেখা যেতে পারে এ সমস্যা। এ ছাড়া পটাশিয়াম কমে গেলেও হঠাৎ মাংসপেশি টেনে ধরতে পারে। তা ছাড়া খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে খেলাধুলার সময় হঠাৎ মাংসপেশি টেনে ধরে। বিশেষ করে ঊরুর পেছনে মাংসপেশিকে মেডিকেল পরিভাষায় হ্যামস্ট্রিং বলে ও হাঁটুর নিচে মাংসপেশি, যেটিকে কাফ মাসল বলে।
এ ছাড়া কিছু ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে মাংসপেশির সংকোচন হতে পারে। ডাই-ইউরেটিক্স জাতীয় ওষুধ, যেমন—স্ক্রুসিমাইড, কাবন, ডাইউরোটিকগের জন্য হঠাৎ করে কমে যেতে পারে শরীরের পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম।
কিছু ভিটামিনের ঘাটতিজনিত কারণেও মাংসপেশির সংকোচন হতে পারে। যেমন—থায়ামিন (বি-১), প্যানথোনিক এসিড (বি- ৫) এবং পাইরিডক্সিল (বি-৬)। এ ছাড়া পায়ের রক্তনালিগুলোর মধ্যে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক না থাকলেও পায়ের মাংসপেশিগুলো ক্যাম্প বা টেনে ধরতে পারে। মেডিকেল পরিভাষায় সেটিকে ইন্টারমিটেন্ট ক্লাউডিকেশন বলা হয়। এটি সাধারণত কাফ মাসল বা হাঁটুর নিচের মাংসপেশিতে হয়ে থাকে।
কারা মাসল স্পাজমে আক্রান্ত হয়?
যেকোনো সময় যে কেউ মাসল স্পাজমে আক্রান্ত হতে পারে। বৃদ্ধ, তরুণ কেউই এর বাইরে নয়। হাঁটা, বসা, ব্যায়াম করার সময়, এমনকি ঘুমের মধ্যেও এটি হতে পারে। শারীরিক পরিশ্রম করেন, এমন কারও কারও ক্ষেত্রে এটি একাধিকবার দেখা দিতে পারে। শিশু ও বৃদ্ধ (৬৫ বছর বয়সী), অতিরিক্ত ব্যায়াম করেন এমন ব্যক্তি এবং অসুস্থরা বেশি মাসল স্পাজমে আক্রান্ত হন।
করণীয় :
সেহেতু অনেকগুলো কারণে হঠাৎ মাংসপেশি টান ধরতে পারে। তাই এ ধরনের সমস্যা নিয়মিত হতে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং কারণটি নির্ণয় করা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামান্য একটি স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ বা ব্যায়ামই এটি ভালো করার জন্য যথেষ্ট। তা ছাড়া হঠাৎ আক্রান্ত হলে, আক্রান্ত স্থানে মৃদু গরম সেক দিয়ে হালকাভাবে ম্যাসাজ করুন। সে ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে কমে যাবে। কিন্তু মাংসল স্পাজম ডিহাইড্রেশনের জন্য হলে দ্রুত ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স করতে হবে। তা ছাড়া মাংসপেশি রিলাক্স করার জন্য কিছু ওষুধের ব্যবহার করতে হয়। যেমন : স্লাইক্লোবেনজাপ্রিন হাইড্রোক্লোরাইড, টলপেরিসন হাইড্রোক্লোরাইড, ব্যাকলোফেন, ইপেরিসন হাইড্রোক্লোরাইড, টিজিনাডিন ইত্যাদি।
যাঁরা খেলোয়াড়, তাঁদের ক্ষেত্রে খেলা শুরু করার আগে ওয়ার্মআপ এক্সারসাইজ ও খেলা শেষে কুলডাউন এক্সারসাইজ করতে হবে। তাহলে খেলার সময় অনাকাঙ্ক্ষিত মাসল স্পাজম এড়ানো সম্ভব। যাদের ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও ভিটামিনের ঘাটতি আছে, তাঁদের সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে।
চিকিৎসা
মাসল স্পাজম অর্থাৎ ব্যথা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বরফ দিলে আরাম পাওয়া যায়। বরফ টুকরো কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে ১০ মিনিট দিয়ে আবার বিরতি দিয়ে ১০ মিনিট ধরে রাখতে হবে। এভাবে তিন থেকে চার ঘণ্টা পরপর বরফ দিতে হবে।
মাসল স্টেচিং করতে হবে। তবে এ ব্যাপারে ডাক্তার ও ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নিতে পারেন।
ডাক্তার দেখিয়ে ব্যথার ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। তবে মাসল স্পাজমের সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা হলো ফিজিওথেরাপি। ব্যথা বেশি হলে সঙ্গে সঙ্গেই ফিজিওথেরাপিস্ট দেখান দ্রুত ভালো হয়ে যাবেন।
Discussion about this post