অধ্যাপক মো. শাহ্ আলম, অর্থোপেডিক ও স্পাইন সার্জন, পঙ্গু হাসপাতাল (নিটোর), ঢাকা
টেনিস এলবো হচ্ছে একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, যার ফলে কনুইয়ে ব্যথা ও দুর্বলতা সৃষ্টি হয়। টেনিস এলবো যে শুধু টেনিস খেলোয়াড়দেরই হয় তা নয়, বরং যেসব কাজে বারবার কনুই থেকে কব্জি পর্যন্ত মোচড়ানোর প্রয়োজন হয় সেসব পেশার মানুষেরও হতে পারে। উদহরণস্বরূপ : ওয়াসার পাইপলাইনের মিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি, চানাচুরওয়ালা ইত্যাদি।
টেনিস এলবো রোগে কনুইয়ে আসল ক্ষতির প্রকৃতি এখনও অজানা। তবে ধারণা করা হয়, এতে হিউমেরাস বা বাহুর নিম্ন প্রান্তে সংযুক্ত পেশিবন্ধগুলো আংশিক ছিঁড়ে যেতে পারে, রেডিয়াস বা হাতের লিগামেন্ট ক্ষয়প্রাপ্ত হতে পারে, বাহু ও হাতের অস্থিসন্ধিতে প্রদাহ হতে পারে, ওই এলাকায় সরবরাহকারী রক্তবাহিকার প্রদাহ হতে পারে। আবার সার্বক্ষণিক মাংসপেশির সংকোচনের ফলে অস্থির আবরণীতেও প্রদাহ হতে পারে। তবে যাই ঘটুক, এতে সৃষ্টি হয় কনুইয়ে ব্যথা।
রোগ হলে যে সমস্যা দেখা দেয়
কনুইয়ে ব্যথা হতে থাকবে ধীরে ধীরে। ব্যথাটা মূলত হবে কনুইয়ের বাইরের পাশটায়, হতে থাকবে সার্বক্ষণিক অথবা বিরামহীন এক অস্বস্তি ছড়িয়ে পড়বে কব্জি পর্যন্ত, আর হাত চিৎ করে কোনো কিছু মুঠোয় চেপে ধরতে গেলে ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যাবে। সামনে অথবা বাইরের পাশ থেকে আঙুল দিয়ে কনুইয়ের অস্থিতে চাপ প্রয়োগে ব্যথা অনুভূত হবে। সঙ্গে দেখা দেবে হাত মুঠো করে কোনো কিছু চেপে ধরতে গিয়ে শক্তিহীনতার অনুভূতি, এমনকি ভারী কিছু উপুড় করা হাত থেকে পড়েও যেতে পারে। এর সঙ্গে কনুইয়ে ফুলে যাওয়ার প্রবণতা অবশ্যই কদাচিৎ দেখা যায়। কনুইয়ের নড়াচড়ায় তেমন কোনো অসুবিধা টের পাওয়া যায় না।
যেভাবে রোগটি চিহ্নিত করা হয়
কনুইয়ে ব্যথা ও দুর্বলতা অবশ্য অনেক কারণেই হতে পারে। তবে এটি যে আসলেই টেনিস এলবোজনিত, সেটি বুঝতে একটি পরীক্ষা করা যেতে পারে। প্রথমে কনুইকে সোজা করে, কব্জি পর্যন্ত হাতের অংশকে উপুড় করতে হবে। এ অবস্থায় জোর করে কব্জি ভাঁজ করলে কনুইয়ে ব্যথা অনুভূত হবে। এরপর কব্জি আবার জোর করে উল্টো দিকে ভাঁজ করে শক্তির বিপরীতে কব্জি থেকে কনুই পর্যন্ত চিত করতে গেলে টেনিস এলবোজনিত ক্ষতে ব্যথার তীব্রতা ও অস্বস্তির মাত্রা আরও বাড়বে।
পরীক্ষা- নিরীক্ষা
এক্স-রে করে তেমন কিছু বোঝার উপায় নেই, যেহেতু কনুই সংযুক্ত পেশিবন্ধ আংশিক ছিন্ন এবং এক্স-রেতে এটি বোঝার কথা নয়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে ক্ষুদ্র বিচ্ছিন্ন অস্থিপিণ্ড ও এবড়ো-থেবড়ো অস্থি আবরণী এক্স-রেতে বোঝা যেতে পারে, যা রোগ নির্ণয়ে কখনও কখনও সহায়ক হয়।
রোগের চিকিৎসা
টেনিস এলবোর চিকিৎসা খুব কঠিন কিছু নয়। প্রথমেই প্রাথমিক রক্ষাকারী চিকিৎসা প্রসঙ্গে আসা যাক। কনুইকে একটি নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত বিশ্রাম দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কনুইকে ঈষৎ ভাঁজ অবস্থায় ও কব্জিকে সোজা ও চিত অবস্থায় রেখে হাতের পেছনে কাস্ট বা স্পিলিন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। সঙ্গে কনুইয়ে হালকা গরম সেঁক। এ উদ্দেশ্যে শর্ট ওয়েভ ডায়াথার্মিও প্রযুক্ত হতে পারে।
প্রয়োজনে কনুইয়ে ক্ষতস্থানে বহু ছিদ্র ব্যবস্থার মাধ্যমে স্টেরওয়েভ বা প্রোকেইন প্রয়োগ করা যেতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে রেডিয়েশন থেরাপিও দেওয়া যায়। সঙ্গে বেদনানাশক ওষুধ চলবে। আলট্রা-সাউন্ড থেরাপিও ব্যবহূত হতে পারে। এই প্রাথমিক প্রক্রিয় অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর হলেও উপসর্গের পুনরাবৃত্তি প্রায়ই ঘটকে পারে। এরপর আসে ম্যানিপুলেশন প্রসঙ্গ। এ ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য থাকে প্রদাহযুক্ত আংশিক ছিন্ন পেশিবন্ধকে টানাহেঁচড়ার মাধ্যমে পুরোপুরি ছিঁড়ে ফেলা। ফলে অনেক ক্ষেত্রে ব্যথার তীব্রতা কমতে পারে।
অপারেশন যখন দরকার
কোনো ক্ষেত্রেই যখন কাজ আসে না তখন অপারেশনের কথা চিন্তা করেন চিকিৎসকরা। টেনিস এলবোর দ্রুত ও দীর্ঘমেয়াদি উপসর্গ মুক্তির মূল উপায় হলো অপারেশন। সময়মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে একজন রোগী টেনিস এলবো থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
Discussion about this post