হার্টবিট ডেস্ক
কাঁধ বা শোল্ডার আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের সকল কাজের জন্য হাতের সাহায্য নিয়ে থাকি। হাত নাড়াচাড়ার সঙ্গে কাঁধের নাড়াচাড়া খুবই স্বাভাবিক। এজন্য কাঁধের কোনো সমস্যা বা ব্যথা হলে তা থেকে হাতের মুভমেন্ট বাধাগ্রস্ত হয়। আর গঠনগত ভাবে কাঁধ ইনজুরি বা আঘাতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কাঁধে ব্যথা খুবই সাধারণ একটি বিষয়।
আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতি হাজার মানুষের মধ্যে ১৫ জন প্রতি বছর কাঁধে ব্যথার সমস্যায় ভূগে থাকেন। একটু অসাবধানতা থেকেই কাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কীভাবে কাঁধে ব্যথা বা ইনজুরি হয় এবং কীভাবে আমরা এর থেকে সাবধান থাকতে পারি এই বিষয়ে আজকের লেখা।
শুরুতেই কাধের গঠন সম্পর্কে একটু ধারণা দেই। আমাদের কাঁধ বা শোল্ডার কাধের একটি হাড় ও বাহুর একটি হাড় নিয়ে গঠিত। সাথে কিছু মাংসপেশি ও লিগামেন্ট থাকে যা শোল্ডার জয়েন্টকে শক্তিশালী করে। এখানে কাঁধের হাড়ে একটি ক্যাপসুল থাকে ও বাহুর হাড়ে একটি বলের মত অংশ থাকে যা ওই ক্যাপসুলের মধ্যে আটকে থাকে। জয়েন্ট টি ঝুলন্ত থাকার কারনে ও বেশি ব্যবহার হওয়ার কারনে ইনজুরির ঝুঁকিতে থাকে।
কীভাবে ফ্রোজেন শোল্ডার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়?
একটু সতর্ক থাকলেই আমরা এই সমস্যা থেকে বেঁচে থাকতে পারি। আঘাতজনিত সমস্যা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। নিয়মিত শোল্ডারের ব্যায়াম শোল্ডারকে ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কাঁধ বা শোল্ডার যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ তাই এর কোনো সমস্যাকে হালকা করে না দেখা। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া। শুধু ব্যথার ঔষধ খেয়ে চিকিৎসা নিজে নিজে না করা। এখন সমস্যা হচ্ছে যদি ফ্রোজেন শোল্ডার হয়ে যায় তবে কী করার আছে? এক্ষেত্রে সমাধান হচ্ছে শোল্ডারকে মুভমেন্ট করানো। যেহেতু ব্যথা হয়। ব্যথা দূর করে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে যারা ব্যথার চিকিৎসা করেন তাদের পরামর্শ নিয়ে লোকাল ইনজেকশন নিয়ে ব্যথা কমাইয়ে নিয়ে নিয়োমিত এক্সারসাইজ করে এই ফ্রোজেন শোল্ডার থেকে রেহাই পেতে পারেন। নিয়োমিত ফিজিওথেরাপি এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।
শোল্ডারের ব্যথায় এক্সারসাইজ
যে কোনো ব্যথায় এক্সারসাইজের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্সারসাইজের মাধ্যমে মাংসপেশিগুলোর স্ট্রেস নেয়ার ক্ষমতা বাড়ে। রক্ত চলাচল বাড়ে। এর ফলে টেনডন ও লিগামেন্টস নিউট্রিশন পায় ও ভালো থাকে। জয়েন্টের মুভমেন্ট স্বাভাবিক থাকে। স্ট্রেস নেয়ার ক্ষমতা বাড়ে। এছাড়াও এক্সারসাইজের মাধ্যমে শরীর থেকে এনডরফিন নামক পদার্থ রিলিজ হয় যা ন্যাচারাল ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। এক্সারসাইজের মাধ্যমে এনকেফালিন নামক পদার্থ রিলিজ হয় যা মানসিক চাপ মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
যে সব এক্সারসাইজ আমাদের শোল্ডারকে ভালো রাখতে পারে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-
১. শোল্ডার ওয়ার্ম আপ: শোল্ডারকে রিল্যক্স করুন। কয়েকবার সামনের দিকে কয়েকবার পেছনের দিকে ঘুরিয়ে আনা নেয়া করুন। ১৫-৩০ সেকেন্ড ধরে করুন।
২. এক্রোজ দা চেস্ট স্ট্রেস: আপনার ডান হাতটি সোজা করে আপনার বুকের ওপর বরাবর রাখুন। এবার বাম হাত দিয়ে ডান হাতের কনুই বরবর ধরে বুকের বাম পাশের দিকে চাপ দিন ও ধরে রাখুন ১০-১৫ সেকেন্ড। পদ্ধতিটি উভয় হাত ব্যবহার করে ৩-৫ বার করুন।
৩. শোল্ডারের পেছনের দিকের অংশে স্ট্রেস: আপনার ডান হাত দিয়ে বাম শোল্ডারকে ধরুন বা স্পর্শ করুন। এবার বাম হাত দিয়ে কনুইয়ের পেছন থেকে চাপ দিন ও ধরে রাখুন ১০-১৫ সেকেন্ড। অপর হাতে বিষয়টি করুন একইভাবে। পুরো পদ্ধতিটি ৩-৫ বার করুন।
৪. ট্রাই সেপস স্ট্রেস: এটাতে বাহুর পেছনের মাংশপেশীতে স্ট্রেস দেয়া হয়। আপনার ডান হাত উঁচু করে ডান হাত দিয়ে ডান শোল্ডারকে পেছনের অংশ স্পর্শ করুন। এবার বাম হাত দিয়ে চাপ দিন ও ধরে রাখুন ৫-১০ সেকেন্ড। এভাবে অপর পাশে করুন।
৫. রোটেটর কাফ স্ট্রেস: ডান হাত শোল্ডার ও কনুই বরাবর ৯০ ডিগ্রি কোণে বা সমকোণে রাখুন। এবার বাম হাত দিয়ে বাহু বরাবর ধরে বাম পাশে চাপ দিন একই সাথে ডান হাত ডান দিকে নেয়ার চেষ্টা করুন একই সঙ্গে হাত সোজা রাখুন। ৩-৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন। অপর হাত দিয়ে একই ভাবে করুন। ৩-৫ বার পদ্ধতিটি করুন।
৬. পেক্টরালিস স্ট্রেস: আপনার দুই হাত পেছনের দিকে নিন। দুই হাতের তালু একত্রিত করুন। এবার দুই হাত সোজা করুন ও ধরে রাখুন ৫-১০ সেকেন্ড।
৭. আপার ট্রাপ স্ট্রেস: বাম হাত বাম উরুর নিচে রাখুন। ডান হাত দিয়ে মাথার উপর দিয়ে কান স্পর্শ করুন। এবার মাথা ও ঘাড়কে ডান পাশে চাপ দিন ও ধরে রাখুন ৫-১০ সেকেন্ড। এভাবে বাপ পাশে করুন। পুরো প্রক্রিয়াটি ২-৩ বার করুন। এতে শোল্ডার ও নেক স্ট্রেস হবে। মাথায় ও ঘাড়ে রক্ত চলাচল বেড়ে যাবে।
Discussion about this post