হার্টবিট ডেস্ক
মেরুদণ্ডের হাড়ের ক্ষয় রোগ একটা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। এই রোগ সম্পর্কে সঠিক সময়ে বুঝতে না পারলে পরবর্তী জীবনে জটিলতর রূপ ধারণ করতে পারে।
মেরুদণ্ডের হাড়ের ক্ষয় রোগের মেডিকেল টার্ম হল Degenerative Disc Disease। এটাকে রোগ না বলে রোগের লক্ষণ বলাটাই শ্রেয়।
লক্ষণ:
১. কাঁধে, পিঠে কিংবা কোমরে ব্যথা।
২. দীর্ঘক্ষণ বসতে কিংবা দাঁড়াতে না পারা।
৩. ধীরে ধীরে ব্যথা সমগ্র পায়ে ছড়িয়ে যাওয়া। তবে সাধারণত নির্দিষ্ট সময়ে যে কোন একটা পায়েই ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে।
৪. ব্যথার প্রকোপ বাড়লে পিঠে জ্বালা-পোড়া অনুভূতি হতে পারে।
কারণ:
মহিলাদের এই রোগ বেশি হয়। কারণ হরমোনের প্রভাব এবং কৈশোরে ও পরবর্তী সময়ে পর্যাপ্ত খেলাধুলা ও শরীরচর্চার অভাব। পঁচিশ বছরের পর থেকেই এই ক্ষয় শুরু হয় মহিলাদের ক্ষেত্রে। তবে পুরুষদের ক্ষেত্রেও এই রোগের ব্যাপক বিস্তার দেখা যাচ্ছে। জীবনযাপনে শরীরচর্চার প্রভাব কমে মস্তিষ্কের কাজ বৃদ্ধি পাওয়ায় এ রোগ পুরুষদের মধ্যেও দেখা দিচ্ছে।
আমাদের শরীরের অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হল মেরুদন্ড। সোজা হয়ে দাঁড়ানো, হাঁটা-চলা করা এবং ভার বহনে তার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। মেরুদন্ডের কোনো সমস্যা হলে জীবিত থাকবো ঠিকই কিন্তু তা হবে শুধুই জড় পদার্থের মতো বেঁচে থাকা। অথচ নিজেরাই গুরুত্বপূর্ণ এই অংশের ক্ষতি করে চলেছি নিরবে। বেখেয়ালে করা কিছু ভুল মেরুদন্ডের হাড় ক্ষয় করে দিচ্ছে মারাত্মকভাবে। তাই প্রতিদিনের করা সে ভুল সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকা জরুরি। যেমন-
সঠিকভাবে চেয়ারে না বসা
সঠিকভাবে চেয়ারে না বসার কারণে মেরুদন্ডের ওপর অনেক বেশি চাপ পড়ে। এতে মেরুদন্ডের ওপর অনেক বেশি চাপ পড়ে। একাধানে এমন চাপ সহ্য করতে না পেরে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় মেরুদন্ডের হাড়।
হঠাৎ মেরুদন্ড বাঁকানো
অনেকের অভ্যাস আছে, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পরে হঠাৎ আড়মোড়া ছাড়তে মেরুদন্ড বাকিয়ে নেন। দেহের আড়ষ্ঠতা ভাঙতে হুট করেই মেরুদন্ডের ওপর এমন চাপ অনেক বেশি ক্ষতিকর। এতে খুব দ্রুত হাড় ক্ষয়ে যেতে পারে। খুব বেশি ভঙ্গুর হয়ে যায় ক্ষয়ে যাওয়া সে হাড়।
ভারী জিনিস তোলা
সোজা হয়ে দাঁড়ানো থেকে কোমর বাঁকা করে নিচু হয়ে মেঝে থেকে ভারি জিনিস তোলার মতো কাজ আমরা অনেকেই করি। এই অভ্যাস মেরুদন্ডের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এই কাজটি করা মোটেও উচিত নয়। ভারি জিনিস তোলার ক্ষেত্রে আগে কিছু সময় দেহে শীথিলতা এনে নিতে হবে।
বিছানায় আধশোয়া হয়ে থাকা
বই পড়া বা ল্যাপটপ চালানোর সময় দীর্ঘক্ষণ বিছানায় আধ শোয়া হয়ে থাকতে হয়। এতে আমাদের মেরুদন্ডের ক্ষতি করে অনেক। এছাড়াও সোফায় শুয়ে শুয়ে টিভি দেখার অভ্যাসটিও খুবই খারাপ।
একটানা বসে বা দাঁড়িয়ে থাকা
একইভাবে অনেকক্ষণ থাকা আমাদের মেরুদন্ডের জন্য অনেক ক্ষতিকর। একটানা বসে থাকা বা একটানা দাঁড়িয়ে থাকা দুটোই মেরুদন্ডের ওপর অনেক চাপ ফেলে। তাই ২০ মিনিট পরপর অবস্থান পরিবর্তন করা উচিৎ।
পুরাতন ম্যাট্রেস ব্যবহার
আমাদের ঘুমানোর বিছানাটি যদি আরামদায়ক না হয়, তবে মেরুদন্ডে ব্যথা হবেই। খাটে ব্যবহৃত ম্যাট্রেস ৮ থেকে ১০ বছরের পুরাতন হলেও অনেকে তা পরিবর্তন করেন না। বেশি সময় পার হয়ে গেলে ব্যবহৃত ম্যাট্রেস অতিরিক্ত শক্ত বা নরম হয়ে যায়। এমন বিছনিায় প্রতিরাতে শোয়ার কারণে বাঁকিয়ে থাকা মেরুদন্ড একসময় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।
ভারী ব্যাগ বহন করা
একটানা ভারি ব্যাগ বহন করলেও মেরুদন্ডে ব্যথা হতে পারে। বিশেষ করে এক কাধে ভারি ব্যাগ বহন করার অভ্যাস তৈরি হলে, তা আমাদের মেরুদন্ডের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। তাই মেরুদন্ডের সুস্থতায় ব্যাগ হালকা রাখার চেষ্টা করতে হবে।
হাই হিল পরার অভ্যাস
অতিরিক্ত হাই হিল পরার কারণে মেয়েদের মেরুদন্ডে ব্যথা হতে পারে। উঁচু হিল পরলে দেহের হাড়ের জোড়া গুলোতে চাপের সৃষ্টি হয়।এতে ব্যথার জন্ম নেয়। কিন্তু অনেক মেয়েই এই ব্যাপারটি অবহেলায় এড়িয়ে চলেন।
মানসিক চাপ
এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা সহজেই ক্ষমা করে দিতে পারে, তাদের মানসিক চাপজনিত রোগে কম হয়। তাদের মাঝে হতাশা, রাগ, শারীরিক ব্যথাও কম হয়। কিন্তু যাঁরা তা না পারেন তাদের অবস্থা হয় বিপরীত। আমাদের মনের আবেগ আর মানসিক অবস্থার প্রভাব দেহের মাংসপেশিতেও পড়ে। যা থেকে সৃষ্টি হতে পারে পিঠে ব্যথা।
চিকিৎসা: এই ব্যথার চিকিৎসা হিসেবে এখানে কিছু পদ্ধতির নাম উল্লেখ করা যায়। যেমন-
১. ব্যথানাশক এবং অন্যান্য ওষুধ দিয়ে ব্যথা নিয়ন্ত্রণ।
২. ফিজিওথেরাপি এবং যোগব্যায়াম।
৩. সার্জারি।
চিকিৎসার পদ্ধতি হিসেবে এখনো আকুপাংচার কিংবা আয়ুর্বেদিক ঔষধসমূহের বিশেষ স্বীকৃতি না থাকলেও এগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ব্যথা নিরাময় পদ্ধতি:
১. জীবনযাপন পদ্ধতি শুদ্ধিকরণ। প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল যোগ করতে হবে খাদ্য তালিকায়। আমাদের ভেজাল নির্ভর খাদ্য তালিকায় এটা নিশ্চিত করা নি:সন্দেহে একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
২. শরীরচর্চা বৃদ্ধি, হাঁটা, সিঁড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। যাদের হাড়ের ক্ষয়জনিত ব্যথা আছে, তাদের অবশ্যই প্রতিদিনের কর্মতালিকায় ব্যায়াম অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এতে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হবে।
৩. সর্বোপরি নিজেকে সময় দেয়াটা খুব জরুরি। নিয়মিত প্রার্থনা, মন ভাল রাখার মতো কিছু কাজ অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে করা উচিত।
ব্যথাময় দিন-রাত্রিকে বিদায় জানিয়ে ঝরঝরে, চিন্তামুক্ত জীবনের দিকে এগিয়ে যান।
Discussion about this post