ডা. মো. ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী
মানুষের মেরুদণ্ড ছোট ছোট ৩৩টি অস্থিখণ্ড বা কশেরুকা দ্বারা গঠিত। যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ভার্টিব্রা। এরা একে অপরের সঙ্গে ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্কের সাহায্যে সংযুক্ত থাকে। যখন এই ডিস্ক কোনো কারণে নিজের স্বাভাবিক জায়গা থেকে সরে যায়, তখনই ঘটে সব বিপত্তি। তখন ডিস্ক প্রলাপ্স থাকে সাধারণত ঘাড়ের অংশে তথা সারভাইক্যাল ডিস্কে বা কোমরের অংশে তথা লাম্বার ডিস্কে। মেডিক্যালের পরিভাষায় একে বলে প্রলাপ্স লাম্বার ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক (পিএলআইডি)।
লক্ষণ
♦ প্রধান লক্ষণ কোমর ব্যথা। এই ব্যথা কোমর থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত চলে যেতে পারে।
♦ পশ্চােদশের মাংসপেশিতে ব্যথা।
♦ পায়ে ও পায়ের পাতায় ব্যথা।
♦ পা অবশ অবশ লাগা, ধীরে ধীরে চিকন হয়ে যাওয়া।
♦ পায়ের মাংসপেশি বা রগ টেনে ধরা।
♦ বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে না পারা।
♦ পায়খানা-প্রস্রাবের ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়া।
♦ সেক্সুয়াল সমস্যা।
♦ তীব্র ব্যথায় স্নায়ুজনিত সমস্যা হওয়া ইত্যাদি।
কারণ
♦ যখন শরীরের ওপরের অংশের ভার পুরোটাই মেরুদণ্ডের নিচের অংশে পড়ে, তখন মেরুদণ্ডের ডিস্ক স্লিপ করে পেছনের দিকে যেতে থাকে। কখনো হঠাৎ স্লিপ করে, কখনো বা ধীরে ধীরে। ভারী জিনিস ঝুঁকে ওঠানোর সময় এ রোগের ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়।
♦ টেবিলে ঝুঁকে পিসিতে দীর্ঘ সময় কাজ করা।
♦ বেশি উচ্চতা থেকে লাফ দিলেও ডিস্ক বের হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
♦ যাদের স্যাক্রাম কশেরুকা অনেক বড়, তাদের এ রোগের আশঙ্কা বেশি।
♦ যাদের এক পা ছোট, এক পা বড় তারাও এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
♦ উঁচু জুতা পরিধানও এই রোগের অন্যতম কারণ।
♦ কোনো অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ড, যেমন—মারামারি বা আকস্মিক আঘাতেও ডিস্ক সরে যেতে পারে।
পরীক্ষা
এক্স-রে, সিটিস্ক্যান, এমআরআই ইত্যাদি।
চিকিৎসা
♦ যাদের ডিস্ক আংশিক বের হয়েছে বা স্বল্প ও মাঝারি মাত্রার পিএলআইডির ব্যথা রয়েছে, শুরুতে তারা কোমরের বেল্ট ব্যবহার করলে, নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নিলে ও কিছু ওষুধ প্রয়োগ করলে কম ব্যথা অনুভব করবেন। কিন্তু বেশি খারাপ হলে বা ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হলে কালক্ষেপণ না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
♦ যাদের ডিস্ক পুরো বের হয়ে গেছে তাদের অপারেশনই মূল চিকিৎসা।
প্রতিরোধে করণীয়
♦ প্রথমেই মেরুদণ্ডের গঠন সম্পর্কে জেনে সে অনুযায়ী চলতে হবে।
♦ প্রথম ব্যথা অনুভব হওয়ার সময় সচেতন হতে হবে।
♦ বেশিক্ষণ সামনে ঝুঁকে কাজ করা ঠিক নয়।
♦ ভারী কোনো কিছু একা একা নিচ থেকে না তোলার চেষ্টা করা উচিত।
♦ চলাফেরায় ও বিছানা থেকে ওঠার সময় পিঠ ও কোমরে সাপোর্ট দিতে হবে।
♦ সব সময় মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসতে হবে।
♦ নিয়মিত ব্যায়াম করা।
♦ ওজন নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
♦ এক হাতে কোনো ভারী জিনিস বহন নয়।
♦ কোমর সোজা রেখে বসার অভ্যাস করা উচিত।
♦ শক্ত বিছানায় ঘুমানোর অভ্যাস করা, কোনো ফোম ব্যবহার নয়।
♦ দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা নয়। প্রয়োজনে কিছুক্ষণ পর পর স্থান পরিবর্তন করা।
♦ বিছানা থেকে ওঠার সময় এক পাশে কাত হয়ে ওঠা।
♦ হাইহিলের জুতা বা স্যান্ডেল ব্যবহার না করা।
♦ ধূমপান থেকে বিরত থাকা।
♦ ঝুঁকে কাজ করলেও কোমরে বেল্ট পরা ইত্যাদি।
লেখক : সিনিয়র কনসালট্যান্ট, নিউরো সার্জারি বিভাগ. ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
Discussion about this post