হার্টবিট ডেস্ক
হঠাৎ মুখ বেঁকে যাওয়া এক ধরনের প্যারালাইসিস। যা মুখমণ্ডলে মানুষের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়।এটা এক ধরনের স্নায়বিক সমস্যা বা স্নায়ুরোগ, যা ফেসিয়াল পালসি বা মুখের পক্ষাঘাত (ফেসিয়াল প্যারালাইসিস) নামে পরিচিত। অনেক ক্ষেত্রে একে বেলস পালসিও বলা হয়।
বেলস পালসি হলো মুখমন্ডলের মাংসপেশীর এক ধরনের প্যারালাইসিস। এ রোগে সাধারণত ফেসিয়াল ক্যানেল বা তার আশপাশে এক ধরনের ক্ষত তৈরি হয়। ফলে ফেসিয়াল নার্ভটি ফেসিয়াল ক্যানেলের মধ্যে প্রচন্ড চাপে থাকে। এ কারণে ফেসিয়াল নার্ভ ও এর শাখ-প্রশাখা দ্বারা যেসব মাংসপেশি পরিচালিত হয়, সেগুলো আর পরিচালিত হতে পারে না। ফেসিয়াল বা মুখমন্ডলের মাংশপেশিগুলো তার স্বাভাবিক কার্যক্রম হারায়।
আমাদের শরীরে মোট ১২ জোড়া করোটিকা স্নায়ু থাকে, যার ৭ নম্বর স্নায়ু জোড়ার নাম মুখের স্নায়ু বা ফেসিয়াল নার্ভ। এই স্নায়ু অবশ হলেই তাকে ফেসিয়াল পালসি বলে।
কারণ:
এই রোগের প্রকৃত কারণ জানা না গেলেও ধারণা করা হয়, ভাইরাস বা আঘাতের ফলে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে।এ ছাড়াও বিভিন্ন কারণে হতে পারে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল , ভাইলাল ইনফেকশন , মধ্য কর্নে ইনফেকশন , ঠান্ডাজনিত কারণ , আঘাতজনিত কারণ , মস্তিষ্কের স্ট্রোকজনিত কারণ , ফেসিয়াল টিউমার , কানের অপারেশন পরবর্তী ফেসিয়াল নার্ভ ইনজুরি , গলক্ষত প্যারটিভ গ্রন্থির ইনফেকশন , সিফিলিস , ব্যাসিলারি মেনিনজাইটিস , জন্মকালে ফরসেপস প্রয়োগ , মধ্য বয়সে বিশেষত মদ্যাসক্ত ও বাত রোগাক্রান্ত ব্যক্তিগণ এই রোগে অধিক আক্রান্ত হয়।
রোগের উপসর্গ:
এটি নির্ভর করে রোগের কারণ ও স্নায়ুর ক্ষতের ব্যাপ্তির উপর।
– সাধারণভাবে মুখ একদিকে বেঁকে যায়, মুখের আক্রান্ত দিকের-
– চোখ বন্ধ করতে সমস্যা হয়।
– অশ্রু ও লালা নিঃসরণ কমে যায়।
– মুখে খাদ্য জমে থাকে।
– জিহ্বায় স্বাদ লোপ পায়।
– কথা বলতে সমস্যা হয়।
– কানে ব্যথা, মুখ দিয়ে লালা গড়ানো, পানাহারে সমস্যা হয়।
-কদাচিৎ বধিরতা, মাথাঘোরা, উচ্চ শব্দের প্রভাবে কানে অস্বস্তিবোধ হয়। এবং বহিঃকর্ণের ত্বকের ওপর ছোট ছোট ফোসকা পড়ে।
চিকিৎসা:
এ ধরনের রোগ এমনিতেই ভালো হয়ে যেতে পারে। সাধারণত তিন মাস সময় লাগে সারতে। আবার কখনও তা না সেরে জটিল হয়ে যেতে পারে এবং চিরস্থায়ী হতে পারে। তাই বিন্দুমাত্র অবহেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। শুধু ওষুধে এ রোগ সারে না। পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি এবং নির্দিষ্ট ব্যায়াম অত্যাবশ্যকীয়। চিকিৎসকরা রোগের সঠিক ইতিহাস জেনে এবং শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগ শনাক্ত করার পর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাল জাতীয় ওষুধ এবং স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ বয়সভেদে নির্দিষ্ট মাত্রায় দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট কিছু ভিটামিনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে চিকিৎসা নির্ভর করে কত দ্রুত অভিজ্ঞ ও সঠিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন, তার ওপর। দেরি করে গেলে এ জাতীয় ওষুধের কোনো কার্যকারিতা থাকে না।
এ রোগে কুসুমগরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে সেক দেওয়া যায়। তিন সপ্তাহ পর ইএসটি দেওয়া হয়। মুখের মাংসপেশির নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম রোগ নিরাময়ে অত্যন্ত ফলপ্রসূ। স্ট্র বা পাইপ দিয়ে পানি খেতে পরামর্শ দেওয়া হয়, যাতে মুখের মাংসপেশির শক্তি বাড়ে। চুইংগাম চিবিয়ে ব্যায়াম করতে বলা হয়। চোখ বন্ধ করতে না পারলে দিনের বেলা সানগ্লাস এবং রাতে আইপ্যাড ব্যবহার করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা যেকোনো রোগের জটিলতা কমায়। এই রোগ আপনা থেকে সেরে গেলেও অনেক ক্ষেত্রে চিরস্থায়ী হতে পারে। সে জন্য আইটি কার্ভ বা এসডি কার্ভ করে এ রোগের অবস্থা জেনে নিতে হয়।
Discussion about this post