ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল, জেনারেল ও ল্যাপারোস্কপিক সার্জন
বর্তমান যুগে অনেক পুরুষের মধ্যেই একটা সমস্যা বেশ প্রকট হয়ে উঠছে, তা হলো লি’ঙ্গ প্রদাহ বা ব্যালানাইটিস, বাংলায় যাকে মনোষ বলা হয়ে থাকে। ব্যালানাইটিস শব্দটি গ্রিক ব্যালানস থেকে এসেছে। ব্যালানস শব্দের অর্থ লিঙ্গ মুন্ডু বা লিঙ্গের মাথা। লি’ঙ্গাগ্রের চামড়া আক্রান্ত হলে তাকে বলে ব্যালানোপসথাইটিস। লিঙ্গমুন্ডুর চারপাশে এক ধরনের ময়লা জমা ও নিঃসরণের কারণে জায়গাটা বাতাসের সংস্পর্শ কম পায় এবং সেখানে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া হয়; এ কারণে লি’ঙ্গমুন্ডুতে প্রদাহ হয় ও লি’ঙ্গমুন্ডু ফুলে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যাদের খতনা করা হয়নি, তারাই এ সমস্যায় বেশি ভোগেন।
রোগের কারণ:
সাবান, শাওয়ার জেল বা কনডমের উপরিভাগের আঠালো পদার্থ পুরুষাঙ্গের মুখে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে যা থেকে ব্যালানাইটিস হয়ে থাকে।নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ যেমন- পেইনকিলার, ঘুমের ঔষধ, ল্যাক্সেটিভ (কোষ্ঠকাঠিন্যে ব্যবহৃত ঔষধ) ও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে এই সমস্যা হয়ে থাকে। এগুলোকে ফিক্সড ড্রাগ ইরাপশনও বলে।
সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়া ও ঈস্ট যেমন- ক্যান্ডিডা অ্যালবিকান্স পুরুষাঙ্গের উপরিভাগেই থাকে। তাপ, চাপ, সাবান দিয়ে ওই স্থান পরিষ্কার করলে বা একেবারেই পরিষ্কার না করলে এসিড লেভেল ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে, যার কারণে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগে কোনভাবে কেটে গেলে বা আঁচড় লাগলে এই রোগ হতে পারে।ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ইনফেকশনে হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ইনফেকশন থেকেই ব্যালানাইটিস হতে পারে।চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, খতনা করা হয়নি এমন ছেলেদের মধ্যে এ রোগের প্রকোশ বেশি। খতনা করা হয়নি এমন যে কোনো বয়সী পুরুষের যে কোনো সময় লিঙ্গমুন্ডুতে প্রদাহ হতে পারে। যেসব পুরুষের লিঙ্গাগ্রের চামড়া টাইট বা আঁটোসাঁটো থাকে অর্থাৎ চামড়া পেছনের দিকে টেনে নামানো কষ্টকর অথবা যেসব পুরুষ লিঙ্গ ঠিক মতো পরিষ্কার করেন না তারা ব্যালানাইটিস বা লিঙ্গমুন্ডুতে প্রদাহ রোগে আক্রান্ত হন। তবে খতনা করানো হয়েছে এমন ছেলেও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের কারণেও লিঙ্গমুন্ডুতে প্রদাহ হয়, বিশেষ করে যদি রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ না থাকে।
লিঙ্গের পরিচ্ছন্নতা: অনেকেই লিঙ্গের পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে উদাসীন থাকেন। বিশেষ করে ছোট ছেলেরা এ ব্যাপারে সচেতন নয়। বহু গবেষণায় দেখা গেছে, লিঙ্গমুন্ডুতে প্রদাহের সাথে লিঙ্গের পরিচ্ছন্নতার সম্পর্ক রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব পুরুষ সম্পূর্ণ লিঙ্গ ধৌত করেন না এবং যেসব পুরুষ খতনা করাননি তারা সচরাচর ব্যালানাইটিসে আক্রান্ত হন। আবার সাবান দিয়ে লিঙ্গ অতিরিক্ত পরিষ্কার করলেও ব্যালানাইটিস হয়।
লক্ষণ: এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন।
পেনিস বা পুরুষাঙ্গে লালভাব দেখা দেওয়া (Penis redness)
পুরুষাঙ্গে ব্যথা হওয়া (Penis pain)
ডায়পার র্যাশ (Diapper Rash)
ত্বকের ফুসকুড়ি (Skin rash)
অস্বাভাবিক ত্বক (Abnormal appearing skin)
জ্বর (Fever)
মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা হওয়া (Painful urination)
কাশি (Cough)
তলপেটের নিচের দিকে ব্যথা হওয়া (Suprapubic pain)
পেনিস বা পুরুষাঙ্গ দিয়ে তরল নির্গত হওয়া (Penile discharge)
ত্বকের ক্ষত (Skin lesion)
ত্বকে চুলকানি (Itching of skin)
রোগ নির্ণয়: রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে রোগীর সম্পূর্ণ ইতিহাস জানতে হবে। লিঙ্গমুন্ডু থেকে রস নিঃসরণ হলে তার কালচার পরীক্ষা করাতে হবে এবং ক্ষেত্র বিশেষে বায়োপসি করাতে হবে।জটিলতা: ব্যালানাইটিসের কারণে লিঙ্গমুন্ডু ফুলে যেতে পারে। এর ফলে যাদের খতনা করা হয়নি তাদের লিঙ্গাগ্রের ত্বক টেনে নিচে নামানো অসাধ্য হয়ে পড়ে। জায়গাটিতে মারাত্মক ইনফেকশন দেখা দেয়। লিঙ্গমুন্ডুর ত্বক লাল হয়ে যায় ও ফুলে যায়।
চিকিৎসা : ব্যালানাইটিস ডায়াগনসিস খুব সহজ। দেখেই অভিজ্ঞ চিকিৎসক ডায়াগনসিস করতে পারেন। তবে নিশ্চিত হবার জন্য ল্যাবটেস্ট করা হয়। অক্রান্ত স্থানে যদি ক্ষত থাকে তবে সেখান থেকে রস নিয়ে পরীক্ষা করে জীবাণু সনাক্ত করা হয়। রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করা হয় ডায়াবেটিস আছে কিনা জানার জন্য কারণ ডায়াবেটিসের সাথে রোগটির সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ট। এসব কিছু করেও ডায়গনসিস করা না গেলে বায়োপসি করা হয়।
যদি জীবাণু দিয়ে ব্যালানাইটিস হয় তবে তার চিকিৎসা করলে সমস্যাটি ভাল হয়ে যায়। ফাইমোসিস থাকলে ব্যালানাইটিস হয়। তাই অপারেশন করিয়ে প্রিপিউস বা লিঙ্গের অগ্রত্বক কেটে ফেলা হয়।
পরিষ্কার-পরিচ্ছিন্ন থাকলে এবং এলার্জি জাতীয় পদার্থ থেকে দূরে থাকলে অনেকটাই এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ। এখানে ছোট থাকতেই প্রায় সবার মুসলমানি (খাৎনা) করা হয়। তাই ব্যালানাইটিস এর রোগী অনেক কম পাওয়া যায়।
Discussion about this post