ডা. মাহমুদ আলম, সহকারী অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল
আমরা যদি দাঁতের সঠিক পরিচর্যা করি তাহলে দাঁতে কোন ধরনের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্ত আমরা অনেকেই সঠিক নিয়য়ে পরিচর্যা না করার কারণে আমাদের মূল্যবান দাঁতগুলো অকালে হারিয়ে ফেলছি। আমরা যদি দিনে দুই বার ব্রাশ করে তাহলে দাঁতে সমস্যা হওয়ার কথা না। কিন্ত বিভিন্ন ধরনের ক্ষয় রোগ দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন কারণে দাঁত ক্ষয় হয়। তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে জটিলতা এড়িয়ে দাঁতকে ভালো রাখা যায়।
কী কী কারণে দাঁতের ক্ষয়রোগ হতে পারে ?
# সাধারণত দাঁত পরিচর্যা সঠিক ভাবে না করলে দাঁতে বিভিন্ন ক্ষয় রোগ দেখা দিতে পারে।
# প্রথমত বলব সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ না করার কারণে দাঁত ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। মজার বিষয় হলো আমরা দাঁত ব্রাশ করি একে যত্নে রাখার জন্য। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ভুলভাবে ব্রাশ করার কারণে দাঁত ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। ব্রাশ করার উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়ে উল্টো দাঁত ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। দেখা যায়, অনেকে দীর্ঘ সময় ধরে শক্ত ধরনের ব্রাশ ব্যবহার করছে। ব্রাশ করার সময় হয়তো খসখস শব্দ করছে, আমরা অনেক দূর থেকে সেই শব্দ শুনতে পাচ্ছি। এই যে সে সঠিক উপায়ে ব্রাশ করতে পারছে না এ কারণে তার দাঁত ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে।
# আবার দেখা যায়, অভ্যাসগত কারণে অনেকে দাঁত দিয়ে হাতের নখ কাটছে। সে ক্ষেত্রেও দাঁত ক্ষয় হয়ে যায়। আবার দেখা যায়, সুতো দাঁত দিয়ে কাটে, এতে দাঁত ক্ষয় হয়ে যায়। আবার দেখা যায়, ঘুমের মধ্যেও অনেকের দাঁত কামড়ানোর অভ্যাস থাকে, এই বদঅভ্যাসগুলোর কারণেও অনেকের দাঁত ক্ষয় হয়ে যায়।
# মানুষ পান-সুপারি, জর্দা ইত্যাদি খায়। অথবা শক্ত কোনো খাবার ইচ্ছামতো চিবিয়ে খায়, এ ক্ষেত্রেও দাঁত ক্ষয় হয়।
# আমার যে সব খাবার গ্রহণ করি সেই সব খাবারে অনেক সময় দাঁতে লেগে থাকে। এতে কার্বোহাইড্রেট বা সুগার থাকে। যদি খাবার আটকে থাকে এবং একে বের না করা হয় এখানে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করবে। এমন ভাবে অনেক দিন চলতে থাকলে ডেন্টাল ক্যারিজ দেখা দিতে পারে।
# এ ছাড়া বিভিন্ন খাদ্য খাওয়ার ফলে রাসায়নিক জিনিসের কারণে দাতের ক্ষয় হয়। যেমন : বিভিন্ন ফল, জুস ইত্যাদি। আবার দাঁতের এবরেশনের কারণে সমস্যা হচ্ছে। দাঁতের ফাঁকে খাদ্যকণা জমে থাকলে, এটি যদি আমরা বের করতে না পারি সে ক্ষেত্রে পরবর্তী কালে এটি ধীরে ধীরে পাথর হয়ে যাচ্ছে, সে ক্ষেত্রেও দাঁত ক্ষয় হয়ে যায়।
কী দেখলে বোঝা যাবে দাঁতের ক্ষয় হয়েছে?
দাঁত যদি ঠিক মতো পরিচর্যা না করেন। না ঠিক মতো ব্রাশ না করেন তাহলে অনেক সময় রোগী বলেন, আমার দাঁতে খাবার আটকে থাকছে।অনেক সময় এসে বলে, আমার দাঁত কালো হয়ে যাচ্ছে। দাঁত বিভিন্ন রোগ ধারণ করে। এরপর এখানে ব্যাথা শুরু করে। এক সময় দেখা একটা গর্ত রয়ে গেছে। অর্থাৎ ক্যারিজ বা ক্যাভিটি হয়ে গেছে। অনেক সময় দাঁতের মাড়িতে সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া বিভিন্ন রোগের কারণে দাঁতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন ডায়াবেটিস। যার কারণে অল্প রয়সে দাঁত পড়ে যায়।
চিকিৎসা :
# দাঁতে ব্যথা হচ্ছে না, কেবল খাবার আটকে থাকছে- এই সময়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। সে ক্ষেত্রে আমরা একটি ফিলিং করে দেই।
# যাদের ইতিমধ্যেই ক্ষয় শুরু হয়েছে,সেক্ষেত্রে পুরোপুরি ঠিক করা সম্ভব না। সে ক্ষেত্রে কৃত্রিম কাজ করতে হবে। দেখতে হবে কোন অবস্থায় আছে। যদি এনামেল ক্ষয় হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে তেমন কিছু হবে না। আর যদি ডেনটিন ক্ষয় হয়ে যায় অবশ্যই চিকিৎসা করতে হবে।
# ব্যথা শুরু হওয়ার পর রোগী যখন আসে সে ক্ষেত্রে রুট ক্যানেল চিকিৎসা ছাড়া আর উপায় নেই। মজ্জা বা পাল্পে গিয়ে যখন লেগে যায় সে ক্ষেত্রে আর ফিলিংয়ে কাজ হবে না। পাল্পকে পুরোপুরি বের করে ফেলতে হবে। রুট ক্যানেল করার পরার ক্যাপ বা ক্রাউন পড়ে নিতে হবে। এ ছাড়া এই দাঁতটা যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। না হলে খাওয়ার সময় চাপ দিত পারবে না।
প্রতিরোধের জন্য কী করণীয়?
প্রতিরোধের প্রথম কথা হলো সঠিক উপায়ে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। নরম টুথব্রাশ নিয়ে, গুণতগত মানের পেস্ট নিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। এক থেকে দুই মিনিট ব্রাশ করতে হবে। সঠিক উপায়ে ব্রাশ করার বিষয়টি জানতে হবে।
# দ্বিতীয়ত, দাঁতের ফাঁকের ময়লা পরিষ্কার করতে হবে। নাইলন নামে একটি সুতো আছে, যেটি ডেন্টাল ফ্লস নামে চিকিৎসা বিজ্ঞানে পরিচিত। এটা দিয়ে ময়লা পরিষ্কার করতে হবে। জিহ্বা পরিষ্কার করতে হবে। মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করতে পারে। আর সুতা কাটা বা নখ দাঁত দিয়ে কাটার অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করতে হবে।
# শক্ত খাবার কমিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। পান সুপারি খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত।
# ঘুমের মধ্যে যার দাঁত কামড়ানোর অভ্যাস আছে তাদের এটা পরিত্যাগ করতে হবে। একদিনে সে পারবে না। সে ক্ষেত্রে রিটেইনার নামক এক ধরনের ডিভাইস কিনতে পাওয়া যায় যেটা সে রাতে ঘুমের মধ্যে দিয়ে ঘুমাবে। এটা ধীরে ধীরে বাদ দিতে দিতে দেখা যাবে দাঁত কামড়ানোর অভ্যাস সে ত্যাগ করতে পারছে।
এই সমস্যা হোক বা না হোক, বছরে দুবার অর্থাৎ ছয় মাস পর পর চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। তাহলে শুরুর দিকে সমস্যা জেনে গেলে সে আর ভুগবে না।
আসলে নিয়ম হলো, বছরে একবার সাধারণ স্কেলিং করা। দেখা যায়, কেউ ৩০ বা ৪০ বছর পর হঠাৎ স্কেলিং করতে আসল। দেখা গেল তার দাঁতে ক্যালকুলাস বা পাথর দিয়ে ভর্তি। দাঁত এবং মাড়ির সংযোগ স্থলে ক্যালকুলাস লেগে থাকে। যখন পাথরটি ভেতরে ঢুকে যায় দাঁত থেকে মাড়িটা আলাদা হয়ে যায়। আমার কাছে যখন আসবে তখন পাথর ফেলে দিতে হবে স্বাভাবিকভাবে। তখন হয়তো দাঁত এবং মাড়ি আলাদা হয়ে যায়। আসলে এই যে অনেক বছর পর এলো এই কারণে সমস্যা হয়। আসলে ১৫ বছর বয়সের পর থেকেই চেকআপে আসা উচিত। তাহলে এই ধরনের সমস্যা আর হবে না।
Discussion about this post