হার্টবিট ডেস্ক
ডেন্টাল ক্যারিজ অর্থ দাঁতের মধ্যে গর্ত হয়ে যাওয়া বা দাঁত ক্ষয়ে যাওয়া।
আর এই ডেন্টাল ক্যারিজ সময়মতো চিকিৎসা না করালে দাঁতের শক্তকোষ (অ্যানামেল, ডেন্টিন) নরম করে দেয় এবং সহজেই মজ্জাকে (Pulp)- আক্রমণ করে ফেলে, যার কারণে দাঁতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, দাঁত ফুলে যায় এবং খেতে কষ্ট হয়।
দাঁতের রোগগুলোর মধ্যে ডেন্টাল ক্যারিজ একটি। এটি মানবদেহ তথা মুখের অন্যতম একটি রোগ। তাই দাঁতের চিকিৎসা বলতে প্রথমেই আসে ডেন্টাল ক্যারিজের চিকিৎসার কথা।
কেন হয় ?
১. শর্করা বা চিনিজাতীয় খাদ্য বেশি পরিমাণে খেলে কিছু ব্যাকটেরিয়া যেমন স্টেপটোকক্কাই মিউটেন, স্টেপটোকাই স্যানগুইজ প্রভৃতি এসিড তৈরির মাধ্যমে দাঁতে ক্ষত সৃষ্টি করে।
২. নিয়মিত সঠিকভাবে দাঁত পরিষ্কার না করলে।
৩. দাঁতে ফ্লোরাইড ও ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে।
উপসর্গ ও লক্ষণ
১. দাঁতের মুকুট (Crown) কালো হয়ে যায় এবং পরে গর্ত সৃষ্টি হয়।
২. দাঁতে তীব্র ব্যথা হয়। ঠাণ্ডা পানি এবং গরম কিছু খেলে দাঁতের ব্যথা ও শিরশির করে।
৩. দাঁতের গোঁড়া থেকে পুঁজ পড়ে এবং মুখের দুর্গন্ধ হয়।
৪. দাঁতে ব্যাথার সাথে আক্রান্ত পাশে ব্যথা ব্যথা, চোখ ব্যথা, কান ব্যথা অনুভূত হয়।
উপরোক্ত লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
দাঁতের অতিসাধারণ তিন চিকিৎসার প্রতিটি আসলে ক্যারিজের বিভিন্ন পর্যায়ের চিকিৎসা। এর একটি হলো-ফিলিং। এটি হলো দাঁত ক্ষয়ের প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসা। ফিলিং হলো-দাঁতের শক্ত অংশের যেটুকু ক্ষয়ের কারণে নষ্ট হয়েছে, সেটুকু মেরামত করে সারিয়ে তোলা। এ রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর উচিত সঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।
দাঁতে ফিলিং সেই সময় পর্যন্তই করা যায়, যখন ক্যারিজ দাঁতের পাল্প বা মজ্জা পর্যন্ত পৌঁছায় না। একবার দাঁতের মজ্জা আক্রান্ত হলে আর ফিলিং করা যায় না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, দাঁতের ব্যথা তখনই বেশি হয়, যখন ক্যারিজ মজ্জায় পৌঁছে যায়। বেশিরভাগ মানুষ দাঁতে ব্যথা না হলে দন্তরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন না।
অথচ দাঁতে কালো দাগ, শিরশির অনুভূতি বা ক্ষয়ের লক্ষণ দেখলেই আপনার উচিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। আরেকটি হলো রুট ক্যানাল। দাঁতের ক্ষয় যখন দাঁতের মজ্জা পর্যন্ত পৌঁছে যায় বা বিভিন্ন কারণে নষ্ট হয়ে যায়, তখন প্রয়োজন হয় রুট ক্যানালের। মজ্জা নষ্ট হওয়ার প্রথম পর্যায়ে সাধারণত তীব্র ব্যথা থাকে। ক্রমে ব্যথা কমে আসে।
কারো কারো ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে ব্যথা অনেক কমও হতে পারে। এরপর দাঁতের মজ্জা থেকে ইনফেকশন ছড়াতে থাকে। দাঁতের গোড়া ফুলে ওঠে, পুঁজ আসতে পারে এবং সঙ্গে পুনরায় তীব্র ব্যথা শুরু হয়। ফিলিংয়ের মতো রুট ক্যানাল করারও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। দাঁতের খুব বেশি অংশ নষ্ট হলে রুট ক্যানাল করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে।
দাঁতের আরেকটি সাধারণ চিকিৎসা হচ্ছে দাঁত ফেলে দেওয়া। ক্যারিজ বা কোনো কিছুর আঘাতে যদি দাঁতের বেশিরভাগ অংশ নষ্ট হয়ে যায় কিংবা ইনফেকশন তীব্র আকার ধারণ করে, তখন দাঁত তুলে ফেলার প্রয়োজন দেখা দেয়। দাঁত ফেলে দেওয়া নিয়ে অনেকের মনে হয় কাজ করে বুঝি তাতে চোখের সমস্যা দেখা দেবে! এমন ধারণা একেবারে অমূলক।
উপদেশ
১. অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে এবং মিষ্টি খাওয়ার পর ভালোভাবে কুলি করতে হবে।
২. শিশুদের ঘুমের মধ্যে ফিটার বা বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত নয়।
৩. দিনে অন্তত দু’বার রাতে খাওয়ার পর এবং সকালে নাশতার পর সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ করতে হবে।
৪. আমলকি, পেয়ারা, কমলালেবু প্রভৃতি সবুজ টক ফল প্রতিদিন খেতে হবে।
৫. প্রতিবার খাবারের পর ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করতে হবে।
Discussion about this post