হার্টবিট ডেস্ক
আমাদের আশেপাশে ছোট বড় অনেকেরই দাঁত শির শির করার অভিজ্ঞতা আছে। হঠাৎ করেই একটি দুটি দাঁত বা অনেকগুলো দাঁত শিরশির করতে পারে। দাঁতের এই শির-শির করা অবস্থাকেই বলা হয় ডেন্টাল ইরেশান বা এন্ট্রিশন। দাতঁ শিরশির করার কারণে খাবার গ্রহন করা বা তরল জাতীয় কিছু পান করা, ব্রাশ করা, এমনকি শ্বাস নেয়ার সময়ও অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। দাঁতের ভিতর অবস্থিত ডেন্টিনাল টিউবলস বা পাল্প অনুভূতি বহন করে স্নায়ুর মাধ্যমে ব্রেনে পৌছে দেয়। এ অনুভূতি সিমেন্টের দাঁতের গোড়ার অংশকে আবৃত করে রাখে। কিন্তু এটি এনামেলের মত পুরু হয় না। বিশেষ করে মাড়ির কাছে এর পুরুত্ব কম হয়। যখন মাড়ির স্থান থেকে সরে যায়, গাম রিলেসন হয় তখন দাঁতের গোড়া বের হয়ে যায় এবং দাত শির শির করে। সাধারণত দাঁতের সাদা অংশের এনামেল নষ্ট হয়ে ডেন্টিন নামক অংশ যখন বের হয়ে যায়, তখনই দাতে ঠান্ডা বা গরম কিছু লাগলে দাঁত শির শির করে। তবে দাঁত শিরশির করা বিভিন্ন কারণেই শুরু হতে পারে।
ব্রাশের ব্যাবহার:
আপনি যদি শক্ত ব্রাশ দিয়ে খুব জোরে এবং দীর্ঘ সময় দাঁত ব্রাশ করেন তবে আপনার দাঁতের এনামেল তাড়াতাড়ি ক্ষয় হয়ে দাঁত শিরশির করতে থাকবে। এ ছাড়া শক্ত ব্রাশ ব্যবহার করার কারণে শিকড় থেকে মাড়ি আলগা হয়ে যায় যার কারণে আপনার দাঁতে শিরশির অনুভূত হতে পারে। তাই কোমল ব্রাশ দিয়ে আস্তে আস্তে সঠিক পদ্ধতিতে দাঁত ব্রাশ করুন।
টক খাবার:
টক জাতীয় খাবার কিংবা টক জাতীয় পানীয় বেশি পরিমানে খেলে/পান করলে দাঁতের এনামেল নামক আবরণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এবং দাঁতের ভিতরের ডেন্টিন নামক সংবেদনশীল অংশ উন্মুক্ত হয়ে যায়। তখন দাঁত শির শির করে। তাই যাদের টক খাবার বেশি পছন্দের, তারা খাবার খাওয়ার পর সামান্য দুধ পান করতে পারেন অথবা একটু মাখনও চিবুতে পারেন, যা দাঁতের টক খাবারের অম্লতা কমে যাবে।
অতিরিক্ত মাউথ ওয়াশের ব্যবহার:
অচিরিক্ত মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করার কআরণে মুখ গহবরে ঘা হওয়ার আশংকা থাকে। কোনো কোনো মাউথ ওয়াশে অম্লের পরিমান বেশি থাকার ফলে তা সংবেদনশীল দাঁতকে আরো বেশি সংবেদনশীল করে তোলে। ফলে দাঁত শিরশির করে। দিনে একবারের বেশি মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করা উচিত নয়। ফ্লোরাইড সমৃদ্ধ মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করলে এসব থেকে নিস্তার পাওয়া যায়।
দাঁতে দাতঁ ঘসা:
অনেকেই ঘুমের ঘোরে অথবা শারীরিক ব্যায়াম করার সময় দাঁতে দাঁত ঘসেন। যারা দাতেঁর সঙ্গে দাঁতের শক্ত ভবে চেপে ধরেন, তাদের দাঁতের পৃষ্ঠদেশের এনামেল তাড়াতাড়ি ক্ষয় হয়ে যায় যার কারণেও দাতঁ শির শির করে। ডেন্টিস্টগণ এ ক্ষেত্রে ‘নাইট গার্ড’ নামক প্লাস্টিকের আবরন দাঁতে পড়ে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
দাঁত ভেঙ্গে যাওয়া
কোন কারণে যদি দাঁত ভেঙ্গে যায় বা ক্ষয় হয়ে যায় তাহলেও দাঁতের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে শির শির অনুভূতি হয়ে থাকে। নকল দাঁত বা ডেন্চার এর ক্রমাগত ঘর্ষণ লাগার ফলেও দাঁতে শির শির অনুভূতি হয়ে থাকে।
চিকিৎসাঃ
যখনই কোনো দাঁত-এ শিরশির করবে তখনই সেই দাঁতটি পরীক্ষা করে দেখতে হবে কোনো ফাটল আছে কিনা এবং কোনো কারণে এনামেল ক্ষয় হয়েছে কিনা। একটি এক্সরের মাধ্যমে মাড়ি ও দাঁতের অবস্থান বোঝা যাবে এবং সেই সাথে কোনো গর্ত বা ফাটল এর অবস্থাও নিশ্চিত করা যাবে।
ডেন্টাল স্কেলিং যেমন- আলট্রাসনিক স্কেলিং এর মাধ্যমে সমস্ত দাঁতের গোড়া ও মাড়ি থেকে খাদ্য কনা (ডেন্টাল প্লাক) পরিস্কার করা। ক্ষয়ে যাওয়া বা ভেঙ্গে যাওয়া অংশটুকু লাইট কিউর ফিলিং পদ্ধতিতে ভর্তী করে দেয়া যাতে ক্ষয়ে যাওয়া এনামেল এবং ডেন্টিন আবার পুরণ হয়ে যায়।
ঘরোয়া উপায়ে উপসমঃ
প্রথমে এক কাপ উষ্ণ গরম পানিতে আধা চা চামচ লবণ নিন এবং কুলি করুন। কয়েক মিনিটের জন্য এই পানি মুখে রাখুন। এর পর ফেলে দিয়ে পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এভাবে দিনে ২ বার করলে দ্রুত দাত শিরশির কমে যাবে।
একটি রসুন পেস্ট করুন। এর মধ্যে ২ – ৩ ফোটা পানি এবং সামান্য খাবার লবন দিন। আক্রান্ত দাঁতে সরাসরি পেস্টটি লাগিয়ে কয়েক মিনিট রাখুন। এর পর লবণ পানি দিয়ে মুখ কুলি করে ফেলুন। দিনে ২ বার এ কাজটি করলে আপনার দাঁতের শিরশির একে বারে কমে যাবে।
Discussion about this post