অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যেসব উপকরণ এই মুহূর্তে মানুষের হাতে রয়েছে, তাতে আগামী এক মাসের মধ্যে বিশ্বজুড়ে মহামারি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে নিজের এই ধারণা প্রকাশ করেন তিনি।
করোনায় বিশ্বজুড়ে উচ্চ মৃত্যুহারে শঙ্কা প্রকাশ করে সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউিএইচও প্রধান বলেন, ‘করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ১০ লাখে পৌঁছাতে সময় লেগেছিল ৯ মাস। তারপর এই সংখ্যা ২০ লাখে পৌঁছাতে সময় লেগেছে ৪ মাস এবং তারপরের ৩ মাসে করোনায় বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩০ লাখে।’
‘এত কম সময়ের মধ্যে এই পরিমাণ মৃত্যু খুবই উদ্বেগের ব্যাপার। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করে, আমাদের হাতে বর্তমানে যেসব উপকরণ মজুত আছে, সেগুলো যদি ন্যায্যতার সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে ব্যবহার করা হয়, সেক্ষেত্রে আগামী এক মাসের মধ্যে এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহামারি বিশেষজ্ঞ মারিয়া ভ্যান কেরখোভ জানান, গত এক সপ্তাহে বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫২ লাখ মানুষ; গতবছর মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত এক সপ্তাহে সংক্রমণের হিসেবে এটি সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড।
কেরখোভ বলেন, ‘সম্প্রতি করোনা সংক্রমণচিত্রে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত বছর যখন মহামারি শুরু হলো, দেখা গেছে ৫০ বছর বা তার অধিক বয়সী মানুষরা বেশি ঝুঁকিতে ছিলেন; কিন্তু সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, ২০-২৫ বছর বয়সী তরুণ-তরুনীরাও উল্লেখযোগ্য হারে আক্রান্ত হচ্ছেন এই ভাইরাসে।’
‘অর্থাৎ, এই প্রাণঘাতী ভাইরাসটি এখন সব বয়সী মানুষদের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। বিভিন্ন দেশের জনগণের মধ্যে করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় উদাসীনতার জন্য এই ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে।’
সোমবারের ভার্চুয়াল ওই সংবাদ সম্মেলনে সুইডেন থেকে যোগ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। সেখানে বিশ্বজুড়ে করোনা টিকা বণ্টনে ন্যায্যতার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
গ্রেটা থুনবার্গ বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, উন্নত দেশগুলোতে প্রতি চারজনে একজন টিকা নিয়েছেন, অন্যদিকে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে প্রতি ৫০০ জনে টিকা নিয়েছেন একজন।’
‘এই অসাম্য দূর হওয়া উচিত। আয় কিংবা অর্থবিত্তগত দিক থেকে নয়, টিকা বণ্টনের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত সেইসব মানুষদের, যারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন।’
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরের সি ফুড মার্কেটে প্রথম শনাক্ত হয় প্রাণঘাতী সংক্রামক ভাইরাস সার্স-কোভ-২, যা পরে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পায় করোনাভাইরাস নামে। উহান শহরের প্রথম যে ব্যক্তি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যখন মারা মারা যান, চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তখন বলেছিল— অপরিচিত ধরণের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনি।
তারপর ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া শুরু করে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটি। এক পর্যায়ে সে বছর ফেব্রুয়ারিতে করোনাকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করতে বাধ্য হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বিশ্বজুড়ে এ রোগে আক্রান্ত, মৃত্যু সেরে ওঠা রোগীদের হালনাগাদ তথ্য প্রদানকারী ওয়েবসাইট করোনাভাইরাস ওয়ার্ল্ডোমিটার বলছে, মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১৪ কোটি ২৭ লাখ ২৩ হাজার ৯১৮ জন এবং করোনায় এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৫৯১ জন।
সূত্র: রয়টার্স
Discussion about this post