ডা. আবুল কালাম আজাদ ,সহযোগী অধ্যাপক , ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগ ,বিএসএমএমইউ
কোন কারণে আমাদের প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ হলে তাকে প্যানক্রিয়াটাইটিস Pancreatitis বলা হয়ে থাকে।
প্যানক্রিয়াসের কাজ হল দু’টি। একটি হলো পাচক রস বা এনজ়াইম তৈরি করা, আর একটি কাজ হল ইনসুলিন বা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন তৈরি করা।
সাধারণত পাচক রস বা এনজ়াইমস তৈরি হওয়ার পরে তা প্যানক্রিয়াসে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। অন্ত্রে পৌঁছনোর পরেই সেগুলি সক্রিয় হয়। এবং খাবার হজমের ক্ষমতা তৈরি হয়। কিন্তু কোনও কারণে যদি প্যানক্রিয়াসে থাকা অবস্থাতেই এনজ়াইমগুলি সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখন তা প্যানক্রিয়াস গ্ল্যান্ডকেই হজম করতে শুরু করে। হজম করার এই প্রক্রিয়ার ফলে ইনফ্ল্যামেটরি মিডিয়েটর বেরোয়।
যা ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহে সাহায্য করে। অগ্ন্যাশয়ের এই প্রদাহকেই প্যানক্রিয়াটাইটিস বলে।
প্যানক্রিয়াসের প্রদাহ দুই রকমভাবে হতে পারে-
অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস
ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিস
প্যানক্রিয়াটাইটিস – লক্ষণ ও উপসর্গ
পেটের উপরিভাগে এবং পিঠে তীব্র ব্যথা
পেট ফুলে যাওয়া।
বমি বমি ভাব
বমি হওয়া
দ্রুত হৃদস্পন্দন
তীব্র ব্যথার সঙ্গে বমি হতে পারে
অনেক ক্ষেত্রেই রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়
জ্বর হওয়া
ডায়েরিয়া হওয়া
ওজন কমে যাওয়া
অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
অগ্নাশয় বা পিত্তনালি বন্ধ হয়ে যাওয়া
পিত্তনালি সরু হয়ে গেলে জন্ডিস দেখা দিতে পারে
হঠাৎ প্রদাহে রোগী মারাও যেতে পারে
প্যানক্রিয়াটাইটিস – কারণগুলি কি কি
মদ্যপান
গলব্লাডারে পাথর
অগ্নাশয়ের বংশগত সমস্যা
ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন : স্টেরয়েড
পেটে আঘাত পাওয়া
প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার
হাইপারগ্লাইসেমিয়া এবং হাইপারট্রাইগ্লাইসেরিডেমিয়া
চিকিৎসা :
প্যানক্রিয়াটাইটিস হয়েছে কি-না এটি নিশ্চিত করতে শুরুতেই রক্তের বা সিরামের এমাইলেজ নামক এনজাইমের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা হয়। যদি এটি স্বাভাবিকের চেয়ে চারগুণ বা আরও বেশি বেড়ে যায় তবে নিশ্চিত ধরে নিতে হবে যে রোগী প্যানক্রিয়াটাইটিসে আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়া রোগের কারণ নির্ণয়ে আরও কিছু পরীক্ষা করার প্রয়োজন রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পেট এবং বুকের এক্স-রে, পেটের আলট্রাসনোগ্রাম, পেটের সিটি স্ক্যানসহ আরও কিছু রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা।
প্যানক্রিয়াটাইটিস হলে রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। শুরুতেই রোগীর মুখ দিয়ে যে কোনো ধরনের খাদ্য, পানীয় এমনকি ওষুধ গ্রহণ বন্ধ রাখা হয় এবং নাকে নল দিয়ে পাকস্থলির সমস্ত খাদ্য বের করে দেওয়া হয়, রোগীর শিরায় স্যালাইনের মাধ্যমে কৃত্রিম খাদ্য এবং ওষুধ দেওয়া হয় এবং প্রস্রাবের রাস্তায় একটি ক্যাথেটার বা নল পরিয়ে দেওয়া হয়।
প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগীকে ব্যথা নিরসনের জন্য শিরায় উচ্চমাত্রার ব্যথানাশক এবং ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়। রোগের মাত্রা বেশি হলে খুব উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক ও শিরার মাধ্যমে দেওয়া হয়।চিকিৎসা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগের কারণ খুঁজে বের করা হয়, কারণটি যদি পিত্তনালিতে পাথর হয়ে থাকে তাহলে surgery করে পাথরটি সরিয়ে ফেলার চেষ্টা চালানো হয়।
সাধারণত এক সপ্তাহের মধ্যেই প্যানক্রিয়াটাইটিস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে, তবে অনেক সময় তীব্র মাত্রার প্যানক্রিয়াটাইটিস হলে প্যানক্রিয়াজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে, ওই সব ক্ষেত্রে জরুরিভিত্তিতে অপারেশন করে রোগীর নষ্ট হয়ে যাওয়া প্যানক্রিয়াস ফেলে দেওয়া হয়।
Discussion about this post