অধ্যাপক ডা. সহিদুর রহমান
প্যানক্রিয়াস বা অগ্নাশয় পরিপাকতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। খাবার পরিপাকের এনজাইম ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ইনসুলিন প্যানক্রিয়াসে তৈরি হয়। প্যানক্রিয়াসে অনেক রোগ হয়। যেমন- ইনফেকশন, পাথর, টিউমার ও ক্যান্সার প্রভৃতি।
প্যানক্রিয়াস পাথর কেন হয়
অনেক কারণ আছে। আমাদের দেশে দেখা যায়, যে অঞ্চলে গরম বেশি পড়ে সে অঞ্চলে এই পাথর হওয়ার হার অনেক বেশি। যারা মদ পান করেন তাদের মাঝেও এর হার বেশি। রোগের লক্ষণ হচ্ছে পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, ক্ষুধামন্দা, ওজন কমে যাওয়া। তবে ব্যথার তীব্রতা এত বেশি যে স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ হয়ে পড়ে। ব্যথা নিরাময়ের সকল ওষুধ অকার্যকর হয়ে পড়ে।
রোগ নির্ণয়
রোগ নির্ণয়ে ব্যাথা/পেইন স্কোর গুরুত্বপূর্ণ। পেইন স্কোর যদি ১৫ থেকে ২৪ হয় তাহলে সার্জারি করার জন্য উপদেশ দিই। রোগ নির্ণয়ে নানাবিধ পরীক্ষা যেমন আল্ট্রাসনোগ্রাফি, সিটি স্ক্যান, এমআরআই প্রয়োজন। এ ছাড়া ডায়রিয়া, ডায়াবেটিস দেখা দেয়, ক্যানসার হতে পারে। আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষার দ্বারা এই রোগ খুব সহজে নির্ণয় করা যায়। এ ছাড়া পেটের প্লেন এক্সরে করে এই রোগ ধরা হয়ে থাকে। আরও উন্নত পরীক্ষা যথা এমআরআই, সিটিস্কান গুরুত্বপূর্ণ। পাথর হলে সার্জারিই একমাত্র চিকিৎসা।
অনেক রোগীর পাথরের কারণে ডায়াবেটিস হয়েছে, সার্জারি করার পর দেখা গেল তার ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। ডায়রিয়া ও ভালো হয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এন্ডোসকপি করা হয়ে থাকে। যার হার শতকরা ১০ ভাগের মতো। সে ক্ষেত্রে পাথর প্যানক্রিয়াসের মাথার অংশে থাকবে, আকারে ২ থেকে ৩ মিলিমিটার হতে হবে, সংখ্যায় দুই তিনটা হতে হবে।
সার্জারি
আমি একটি নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছি এই প্যানক্রিয়াস পাথর অপসারণের জন্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেপাটোবিলিয়ারী প্যানক্রিয়েটিক সার্জারি বিভাগে কর্মরত থাকায় ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ পদ্ধতির দ্বারা অপারেশন শুরু করি, যার নামকরণ ‘সহিদ পদ্ধতি’।
২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ১১৬টি সার্জারি করেছি। সফলতার হার শতভাগ। এই পদ্ধতি বিশ্বের বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক কনফারেন্স যথা এশিয়ায় জাপানের টোকিও, ইন্দোনেশিয়ার বালিতে, ইউরোপের জার্মানিতে, উত্তর আমেরিকার বোস্টনে ও দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলে সফলভাবে উপস্থাপন করেছি। তাতে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। এই পাথর চিকিৎসায় পুরাতন অনেক পদ্ধতি বিদ্যমান। পুরাতন পদ্ধতিগুলো সফলতায় যে হার বিদ্যমান তার চেয়ে সহিদ পদ্ধতির সফলতা অনেক বেশি।
পুরাতন পদ্ধতিতে দুইটা সংযোগ। এই সহিদ পদ্ধতিতে একটি মাত্র সংযোগ। সময় কম লাগে, রক্তপাত খুবই সামান্য, কোনপ্রকার জটিলতা নেই, মৃত্যুর হার শুন্য। পুরাতন পদ্ধতিতে ব্যথা নিরাময়ের হার মাত্র ৬০-৭০ ভাগ, সেখানে এই সহিদ পদ্ধতির ব্যথা নিরাময়ের হার ৯৬ ভাগ। সোসাইটি অফ আমেরিকান গ্যাষ্ট্রোইনটেসটিনাল এনড এন্ডোসার্জন (সাজেস) এই পদ্ধতির অনুমোদন দিয়েছে, ব্যাপক প্রচার করে চলেছে বিশ্বব্যাপী। এই নতুন পদ্ধতি বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমুর্তিকে উজ্জ¦ল করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী।
হেপাটোবিলিয়ারি ও প্যানক্রিয়াটিক বিশেষজ্ঞ সার্জন, বিএসএমএমইউ ও লিভার গ্যাস্ট্রিক স্পেশালাইজড, হাসপাতাল ঢাকা।
Discussion about this post