অধ্যাপক ডা. মো. সহিদুর রহমান
হেপাটোবিলিয়ারি প্যানক্রিয়েটিক অ্যান্ড লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগ, বিএসএমএমইউ।
ডায়াবেটিস একটি বহুমুখী রোগ, যা দেহের সব অঙ্গকে আক্রমণ করে ক্রমান্বয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। এই রোগ বংশগতভাবেও বিস্তার ঘটায় ফলে সন্তান সন্ততির মাঝে এর বিস্তার লাভ ঘটে। তাই সন্তান-সন্ততি সর্বদা আতঙ্কিত থাকে। প্যানক্রিয়াস পাথর ও ডায়াবেটিস একে অপরের সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। প্যানক্রিয়াস -ই-ইনসুলিন তৈরির একমাত্র অঙ্গ। প্যানক্রিয়াসের দুটি অংশ যথা এক্সোক্রাইন ও এন্ডোক্রাইন অংশ। এক্সোক্রাইন অংশ ৯৫ ভাগ, এন্ডোক্রাইন অংশ মাত্র ৫ ভাগ। খুবই সূক্ষ্ম অংশ। সামান্যতম আঘাত হলেই এই অঙ্গ ঝুঁকির মুখোমুখি পড়ে। তখন ডায়াবেটিস দেখা দেয়।
সাহাদত শেখ (ছদ্ম নাম)। বয়স ২১ বছর, বাড়ি রাজশাহী, প্রচণ্ড ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তার স্বাস্থ্যহানি ঘটছে। খাওয়ায় অরুচি, বমি বমি ভাব, শারীরিক দুর্বলতা মারাত্মক, মনমরা ভাব সর্বদা। চিকিৎসার জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘোরাঘুরি দৌড়াদৌড়ি করতে লাগল, ব্লাড সুগার সকাল বেলা ২৬ মিলি গ্রাম, দুপুরে ৩০ মিলিগ্রাম, রাতে ৩২ মিলিগ্রাম, আবার কখনো এই মাত্রার হেরফের হয়। ইনসুলিনের ডোজ বাড়ানো হচ্ছে, কিন্তু ব্লাড সুগার কমছে না। এ অবস্থা নিয়ে বিশেষজ্ঞের চেম্বারে উপস্থিত। তিনি রোগীর মুখে রোগের বর্ণনা শুনলেন, শারীরিকভাবে পরীক্ষা করলেন। কিছু পরীক্ষা দিলেন।
আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষায় ধরা পড়ল প্যানক্রিয়াসের মেইন প্যানক্রিয়েটিক ডাক্ট (এমপিডি) ফুলে উঠেছে যার ডায়ামিটার ১০ মিলিমিটার এবং প্যানক্রিয়াসের মাথার কাছে ১৪ মিলিমিটার সাইজের একটি বড় পাথর। এই পাথরটি ইএমপিডিকে বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে প্যানক্রিয়াস রস যা প্রতিদিন তৈরি হয় তা বের হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। এই রস ভিতরে জমা হচ্ছে, তার ফলে এমপিডির মধ্যে প্রেসার তৈরি হচ্ছে। এই প্রেসারের চাপে নালি ক্রমান্বয়ে মোটা হচ্ছে, ডায়ামিটার বৃদ্ধি হচ্ছে। অতিমাত্রায় বৃদ্ধির কারণে এর চাপ পড়ছে প্যানক্রিয়াসের মূল টিস্যুর ওপর। যার কারণে আকার সংকুচিত হচ্ছে প্যানক্রিয়াসের, যাকে বলা হয় এট্রোফি অব প্যানক্রিয়াস। এতে করে এক্সোক্রাইন ও এন্ডোক্রাইন অংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর লক্ষণ হিসেবে দেখা দিচ্ছে ডায়াবেটিস ও ডায়রিয়া।
সাহাদত শেখের ডায়রিয়া হয়নি, ডায়াবেটিস দেখা দিয়েছে। অন্য সব পরীক্ষা করা হলো। এর পর তার সঙ্গে রোগ নিয়ে ও রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত অলোচনা হলো। তাকে বোঝানো হলো প্যানক্রিয়াসের এন্ডোক্রাইন অংশ যা ইনসুলিন তৈরি করে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতির পরিমাণ মারাত্মক হতে পারে, সামান্য হতে পারে।
সার্জারি করার পর এম পিডি এর ভিতরের চাপ কমে যাবে, তখন এন্ডোক্রাইন অংশ চাপমুক্ত হবে, এর পর এন্ডোক্রাইন সেলগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে আবার ইনসুলিন তৈরি শুরু হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসবে। আর যদি এন্ডোক্রাইন সেলগুলো স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে তা হলে অপারেশন করার পরও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসবে না। তাই যথাসময়ে সফল অপারেশন হয়। সুফল ফিরে পেয়েছে সাহাদাত। ইনসুলিনের মাত্রা কমতে শুরু করে। তার আর কোনো ইনসুলিন লাগে না।
তাই এসব বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে।
Discussion about this post