ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল
প্রস্টেট হচ্ছে ছোট একটি গ্রন্থি, যা পুরুষদের থাকে। এটির অবস্থান মূত্রথলির ঠিক নিচে। প্রস্টেট ঘিরে রাখে প্রস্রাবের পথ বা মূত্রনালিকে। সাধারণত এটির আকৃতি প্রায় একটি আখরোটের মতো। যদিও সব পুরুষেরই প্রস্টেট থাকে, তবে মধ্য বয়সে এটি সাধারণত বড় হতে শুরু করে। বয়স যত বাড়ে, প্রস্টেট তত বড় হতে থাকে এবং এটা প্রস্রাবের পথকে বাধা দিতে থাকে। প্রস্টেট গ্রন্থি স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হওয়াকে বলে ‘হাইপারট্রফিক’ এবং এই অবস্থাকে বলে বিনাইল প্রস্টেটিক হাইপারট্রফি (বিপিএইচ)। তবে প্রস্টেট বড় হওয়া মানে কিন্তু প্রস্টেট ক্যান্সার নয়।
জটিলতা
প্রস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধির চিকিৎসা না করালে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। এই গ্রন্থি বড় থাকলে তা মূত্রথলি থেকে প্রস্রাব বের হতে বাধা দেয়। ফলে মূত্রথলিতে বাড়তি চাপ পড়ে। এ চাপ প্রস্রাবকে মূত্রনালির মধ্য দিয়ে পেছন দিকে ও কিডনিতে ঠেলে দেয়। এতে সংশ্লিষ্ট নালি ও কিডনি বড় হয়ে যায়। একসময় কিডনি তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। মূত্রথলির দেয়াল দুর্বল হয়ে বারবার ইনফেকশন বা সংক্রমণ হয়, যা কিডনিতে ছড়িয়ে তা বিকল করে দিতে পারে।
উপসর্গ
❏ প্রস্রাবের ধারা দুর্বল হওয়া, বন্ধ হওয়া, আবার শুরু হওয়া
❏ প্রস্রাব করার সময় ইতস্তত করা। থলিতে আরো প্রস্রাব থেকে গেছে এমন অনুভূতি হওয়া।
❏ দিনের বেলা ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া।
❏ প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন।
❏ প্রস্রাবের তাড়া অনুভব করা, প্রস্রাব হয়ে গেলেও টের না পাওয়া।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
প্রস্টেট গ্রন্থি বড় হয়েছে কি না তা দেখার জন্য মলদ্বারে আঙুল ঢুকিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এতে প্রস্টেট গ্রন্থির আকার কেমন এবং কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কি না তা জানা যায়। ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে প্রস্রাব ও পিএসএ পরীক্ষা। কিছু অন্য পরীক্ষা যেমন—ইউরোফ্লোমেট্রি ও পিভিআর বেশ সহায়ক। প্রস্টেট গ্রন্থির সঠিক মাপ জানতে এবং কোনো ক্যান্সার আছে কি না তা পরীক্ষা করতে প্রস্টেটের আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা বেশ সহায়ক।
চিকিৎসা
শল্যচিকিৎসা : এর জন্য ট্রান্সইউরেথ্রাল রিসেকশন অব দ্য প্রস্টেট (টিইউআরপি) হলো সাধারণ শল্যচিকিৎসা। এ ক্ষেত্রে মূত্রপথ দিয়ে একটা যন্ত্র ঢুকিয়ে প্রস্টেটের সেই পয়েন্ট পর্যন্ত যাওয়া হয়, যেখানে প্রস্রাবের গতি বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। তারপর অতিরিক্ত টিস্যু কেটে ফেলা হয়।
লেজার সার্জারি : প্রস্টেট গ্রন্থি বৃদ্ধির চিকিৎসায় লেজার সার্জারি অনেকটা টিইউআরপির মতোই। এ ক্ষেত্রে প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে যন্ত্র ঢুকিয়ে পরীক্ষা করা হয়।
ওপেন প্রস্টেটেকটমি : প্রস্টেট গ্রন্থি খুব বেশি বড় হলে ওপেন প্রস্টেটেকটমির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। এ ক্ষেত্রে তলপেট কেটে অপারেশন করা হয় এবং প্রস্টেট গ্রন্থির অংশ বের করে আনা হয়। এই চিকিৎসায় সাধারণত প্রস্রাবের সমস্যার দ্রুত ও দীর্ঘস্থায়ী সুফল পাওয়া যায়।
ফিনাস্টেরাইড : এটি খাওয়ার একটি ওষুধ, যা প্রস্টেট গ্রন্থিকে সংকুচিত করে। ফলে প্রস্রাবের উপসর্গগুলোর উন্নতি ঘটে। অনেক সময় ওষুধ বন্ধ করলে আবার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে যৌনস্পৃহা কমে যায়।
আলফা ব্লকার : এ ছাড়া আলফা ব্লকার ওষুধগুলো প্রস্টেট গ্রন্থি বৃদ্ধিজনিত সমস্যায় ব্যবহার করা হয়। এসব ওষুধ প্রস্টেটের পেশিগুলোকে শিথিল করে সমস্যাগুলো কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। এর প্রতিক্রিয়ায় মাথা ব্যথা, ক্লান্তি অথবা রক্তচাপ কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ জন্য চিকিৎসা চলাকালে নিয়মিত চিকিৎকের পরামর্শ নিতে হবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক
ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
Discussion about this post