বহু শতাব্দীর গবেষণার পরও মানবদেহে এমন একটি অঙ্গ যে রয়েছে, যা এতদিন চিকিৎসকদের নজরে আসেনি। তবে নেদারল্যান্ডসের একদল বিজ্ঞানী ঠিকই এটা আবিষ্কার করেছেন। নেদারল্যান্ডসের একদল বিজ্ঞানী প্রোস্টেট ক্যানসার নিয়ে গবেষণা করার সময় মানুষের গলায় একটি সম্ভাব্য নতুন অঙ্গ খুঁজে পেয়েছেন। বিজ্ঞানভিত্তিক সাময়িকী ‘লাইভ সায়েন্স’ এর একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লালা গ্রন্থির একটি গুচ্ছ নাকের আড়ালে লুকিয়ে আছে।
নেদারল্যান্ডসের বিজ্ঞানীরা জানান, তারা আগে উপেক্ষিত গ্রন্থিগুলোর একটি জোড়া আবিষ্কার করেছেন, যা মানুষের খুলিতে লুকিয়ে আছে, যেখানে অনুনাসিক গহ্বর এবং গলা মিলিত হয়েছে। চিকিৎসক গবেষকরা গ্রন্থিগুলোকে ‘টিউবারিয়াল লালা গ্রন্থি’ হিসেবে নামকরণের প্রস্তাব দেন।
মেডিক্যাল সায়েন্সের বই-এর পাতায় লেখা থাকত এতদিন মানবদেহে তিনটি প্রধান লালাগ্রন্থি রয়েছে। প্যারোটিড, সাবম্যান্ডিব্যুলার এবং সাব-লিঙ্গুয়াল। এ ছাড়াও শরীরের ন্যাসোফ্যারিঙ্গাল অংশে রয়েছে হাজারো অসংখ্য ক্ষুদ্র এবং অতি-ক্ষুদ্র লালাগ্রন্থি। প্রতিটি লালা গ্রন্থি পৃথক পৃথক নালীর মাধ্যমে মুখ গহ্বরে উন্মুক্ত হয়। এসব গ্রন্থি নিঃসৃত রসকে লালা বলে। এতে টায়ালিন ও সল্টেজ নামক উৎসেচক থাকে,যাদের কারণে শর্করাজাতীয় খাদ্য মুখেই ভাঙতে শুরু করে। লালাগ্রন্থিতে মিউসিন থাকে যা খাদ্যদ্রব্য পিচ্ছিল করে চিবাতে ও গিলতে সাহায্য করা।
মেডিক্যাল সায়েন্সের বই-এর পাতায় পরবর্তী সংস্করণে লালাগ্রন্থির সংখ্যা একটা বেড়ে যাবে। নেদারল্যান্ডস ক্যানসার ইনস্টিটিউট-এর দুই গবেষকের একটি গবেষণাপত্র সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘জার্নাল রেডিয়োথেরাপি অ্যান্ড অঙ্কোলজি’তে।
‘নেদারল্যান্ডস ক্যানসার ইনস্টিটিউটে’র গবেষকরা গলার উপরের দিকে হাজার হাজার আণুবীক্ষণিক লালা গ্রন্থি দেখতে পেয়েছেন। গ্রন্থিগুলোর তারা নামকরণ করেছেন ‘টিউবারিয়াল লালা গ্রন্থি’।
বিজ্ঞানীরা গলার উপরের অংশে লালা গ্রন্থির একটি অজানা অঙ্গ চিহ্নিত করেছেন। আবিষ্কারটি ৩০০ বছরের মধ্যে মানবদেহে পাওয়া প্রয়োজনীয় গ্রন্থির প্রথম সেটটি নির্দেশ করে। আবিষ্কারটি মাথা এবং ঘাড়ের ক্যান্সারের রেডিয়েশন থেরাপি গ্রহণ করে মানুষের জীবনমানকে উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে।
গ্রন্থিগুলোর নতুন সেটটি গড়ে প্রায় দেড় ইঞ্চি, নাকের নীচে এবং গলার উপরে নাসোফেরেঞ্জিয়াল অঞ্চলে অবস্থিত। আমস্টারডামের নেদারল্যান্ডস ক্যানসার ইনস্টিটিউটের গবেষকরা বলেছেন যে রেডিওথেরাপিতে এই গ্রন্থিগুলি প্রচার করা রেডিয়েশন থেরাপির পরে মাথা এবং ঘাড়ের ক্যানসারের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন রোগীদের গিলে ফেলা এবং গ্রাস করতে অসুবিধা হ্রাস করতে পারে।
‘জার্নাল রেডিওথেরাপি অ্যান্ড অঙ্কোলজি’-তে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে গবেষকরা জানিয়েছেন, অন্তত একশো জন রোগীর শরীরে পরীক্ষা চালিয়ে তবেই তারা ওই লালা গ্রন্থির উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন। এই আবিষ্কার ক্যানসারের চিকিত্সায় গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এই গ্রন্থিগুলোর আকার প্রায় দেড় ইঞ্চি তথা ৩.৯ সেন্টিমিটার। গবেষকরা জানাচ্ছেন, ওই গ্রন্থিগুলো সম্ভবত নাক ও মুখের পিছনের দিকে অবস্থিত গলার উপরের অংশকে সিক্ত ও আর্দ্র করে রাখে।
প্রসঙ্গত, এতদিন পর্যন্ত মানব শরীরে তিনটি বড় লালাগ্রন্থির সন্ধান পেয়েছে মানুষ। তার একটি গলার নিচে অবস্থিত। বাকি দু’টির একটি চোয়ালের নিচে ও অন্যটি চোয়ালের পিছন দিকে অবস্থিত। এক বিবৃতিতে ওই ক্যানসার ইনস্টিটিউটের রেডিয়েশন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ওউটার ভোগেল, যিনি এই গবেষণার অন্যতম গবেষকও বটে তিনি জানাচ্ছেন, ”সম্ভবত হাজার হাজার লালাগ্রন্থি ছড়িয়ে রয়েছে গলা এবং মুখের মিউকোসাল টিস্যুতে। তাহলে ভেবে দেখুন প্রথম এটা আবিষ্কার করার পর আমরা কতটা চমকে গিয়েছিলাম।”
চিকিত্সকের ক্যানসারের চিকিত্সা করার সময় রেডিওথেরাপি ব্যবহার করেন। সেই সময় তারা প্রধান লালাগ্রন্থিগুলোকে বাঁচিয়ে তা প্রয়োগ করেন, যাতে রোগীদের খেতে, কথা বলতে কিংবা খাবার চিবাতে সমস্যা না হয়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, যেহেতু ওই আণুবীক্ষণিক লালা গ্রন্থিগুলো সম্পর্কে তারা অবহিত ছিলেন না তাই সেগুলো হয়তো রেডিয়েশনের কবল থেকে বাঁচত না। ফলে রোগীর শরীরে আরও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেত। আগামী দিনে বিজ্ঞানীরা এই লালা গ্রন্থিগুলোর সম্পর্কে সচেতন থাকলে রেডিয়েশনের সময় রোগীদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমবে।
Discussion about this post