হার্টবিট ডেস্ক
১৪টি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য দুই মাসের বিশেষ প্রণোদনা বরাদ্দ দিয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বাজেট শাখা। এসব হাসপাতালের এক হাজার ৪৭৪ জন চিকিৎসক, ৪০৬ জন নার্স ও ৯৮১ জন অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী এ দফায় ১৫ কোটি ২৭ লাখ ৬৪ হাজার ৯০২ টাকা পাবেন।
শনিবার (১৭ এপ্রিল) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে দুই দফায় চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত মোট চার হাজার ২৩২ ব্যক্তির সম্মানী বাবদ ২৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা ছাড় করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। মোট ২৮টি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নামে অর্থ ছাড় করেছে অর্থ বিভাগ। তাঁদের মধ্যে চিকিৎসক ১ হাজার ৮৮০ জন, নার্স ৮৪৫ জন এবং স্বাস্থ্যকর্মী ১ হাজার ৫০৭ জন।
সূত্রে জানা গেছে, করোনা রোগীদের সেবায় সরাসরি নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্য কর্মচারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে গত বছরের ২৩ এপ্রিল একটি পরিপত্র জারি করে অর্থ বিভাগ। সেটি অনুসরণ করেই প্রণোদনা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে।
তবে এ পর্যায়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা, টেলিফোন অপারেটর, অফিস সহকারী, কম্পিউটার অপারেটর, হিসাবরক্ষক, গাড়িচালক, ইলেকট্রিশিয়ান, মুয়াজ্জিন, মেকানিক, স্টেনোটাইপিস্ট, স্টোরকিপার, মালি, অফিস সহায়কেরা এই প্রণোদনা পাবেন না।
কোন হাসপাতালে কতজন?
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ১৪টি হাসপাতালের মধ্যে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ১৭২ জন চিকিৎসক, ৩৩৯ নার্স ও ৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী; পিরোজপুর জেলা সদর হাসপাতালের ২০ জন চিকিৎসক, ৩৫ জন নার্স ও ৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী; মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতালের ৫৪ চিকিৎসক ও ২৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী; মিরপুরের মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের ৯৪ চিকিৎসক ও ৩৪ স্বাস্থ্যকর্মী; সিরাজগঞ্জের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুনন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের ৬০ জন চিকিৎসক ও ১৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী; দিনাজপুরের আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজের ১০৮ চিকিৎসক ও ৭৪ স্বাস্থ্যকর্মী; রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৯৭ জন চিকিৎসক ও ২০৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী; কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৬ জন চিকিৎসক; বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের ১৬৫ চিকিৎসক ও ৩১০ স্বাস্থ্যকর্মী; রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৮০ জন চিকিৎসক ও ১৪১ জন স্বাস্থ্যকর্মী; সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০৯ চিকিৎসক ও ১৩৯ জন স্বাস্থ্যকর্মী; বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের ৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী; শহীদ শামসুদ্দিন আহমেদ হাসপাতালের ৬৬ জন চিকিৎসক, ১৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী এবং সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের ২৩ চিকিৎসক, ৩২ জন নার্স ও ৭ জন স্বাস্থ্যকর্মীর নামে প্রণোদনা বরাদ্দ হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘করোনা মহামারীর পর থেকে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ডা. মঈনসহ প্রাণ দিয়েছেন শতাধিক চিকিৎসক। চিকিৎসক সমাজ ভয়হীন হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, তা পরবর্তী প্রজন্ম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। তাঁদের প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নিজে থেকেই প্রথম বলেছিলেন। তিনি চিকিৎসকদের মানসিক বল জোগাতেই এ উদ্যোগ নিয়েছেন।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত করোনায় দেশে ১৪৬ জন চিকিৎসক মারা গেছেন। এর মধ্যে প্রথম মারা যান (গত বছরের ১৫ এপ্রিল) সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মঈন উদ্দিন আহমদ।
সর্বশেষ শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) দিবাগত রাতে প্রাণ হারান ঢাকা মেডিকেল কলেজ ৩২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. মোহাম্মদ শরীফুল আহসান। এ ছাড়াও ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৯১০ জন চিকিৎসক।
Discussion about this post