ইতিহাস বলছে, সব মহামারিতেই প্রথম ডেউয়ের চেয়ে দ্বিতীয় বা তৃতীয় ঢেউ বেশি মারাত্মক। প্রাণহানিও বেশি। বাংলাদেশ ও ভারতে এখন সেটাই দেখা যাচ্ছে। ভারতে একদিনে (বৃহস্পতিবার) ১ লাখ ৩১ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। ব্রাজিলে প্রথম ঢেউ শেষ হয়েছিল কিনা, নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ঢেউ যেটাই হোক, ২৪ ঘণ্টায় সেখানে মৃতের সংখ্যা ৪ হাজারের উপর। বাংলাদেশের হিসাব সবাই জানেন।
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন (নিউ স্ট্রেইন/ভ্যারিয়েন্ট) দেখা যাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্যারিয়েন্টের কথা এখন বেশি শোনা যাচ্ছে। আইসিডিডিআর’বির গবেষণা বলছে, মার্চ মাসে জেনোম সিকোয়েন্স করা ভাইরাসের ৮১ শতাংশই দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্যারিয়েন্ট। এখন ব্রাজিল ভ্যারিয়েন্টের কথাও শোনা যাচ্ছে। নতুন স্ট্রেইনের সংক্রমণশীলতা বেশি, মারাত্মক উপসর্গ সৃষ্টি ও প্রাণহানির ক্ষমতাও বেশি। করোনার নতুন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। স্রেফ পাতলা পায়খানা, মাথাব্যথার মতো লক্ষণ নিয়েও রোগী আসছে।
টিকা নেবেন, নাকি নেবেন না? করোনার কয়েক ধরনের টিকা আবিস্কৃত হলেও বাংলাদেশে অক্সফোর্ডের অ্যাসট্রাজেনেকা (যেটা তৈরি হচ্ছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে) ছাড়া অন্য কোনো টিকা নেই। ইউরোপে এই টিকার একটি মারাত্মক জটিলতা হিসাবে ‘ব্লাড ক্লট’ বা রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার প্রবণতার কথা আলোচিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সর্বশেষ তথ্য হলো, এই টিকার সঙ্গে ব্লাড ক্লটের সম্পর্ক থাকতে পারে বলে ইউরোপিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, তবে তা খুবই বিরল ঘটনা। লাখে একটি ঘটনার চেয়েও কম।
বিশেষজ্ঞরা এখনো বলছেন, এই টিকার উপকারিতা এর সম্ভাব্য ঝুঁকির তুলনায় নিতান্তই কম। এর মানে হলো, টিকা নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। প্রশ্ন উঠেছে, টিকা নিলেও তো করোনা হচ্ছে। উত্তর-হ্যাঁ হচ্ছে, হতে পারে। এর বিভিন্ন ব্যাখ্যাও আছে। তবে গবেষণা বলছে, টিকা কোভিডের মারাত্মক উপসর্গ থেকে সুরক্ষা দিচ্ছে, প্রাণহানি কমাচ্ছে।
ইংল্যান্ডের অর্ধেক ও আমেরিকার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন নিয়েছেন। ইংল্যান্ডের একেবারে সাম্প্রতিক গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ভ্যাকসিন সেখানে মারাত্মক কোভিড ও মৃত্যুর মধ্যকার চেইন ব্রেক করছে, অর্থাৎ কোভিডজনিত মৃত্যু কমাচ্ছে। আমেরিকাতেও ভ্যাকসিনের উপকারিতা দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মাত্র ৫৫ লাখের মতো মানুষ (মোট জনসংখ্যার তিন শতাংশের কিছু বেশি) ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন।
স্বাস্থ্যবিধি ও ব্যক্তিগত সুরক্ষার বিষয়গুলো আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি। মনে রাখবেন, করোনা হাসপাতালে বিছানা খালি নেই।
ডা. আবুল হাসান মোহাম্মদ বাশার : সহযোগী অধ্যাপক, ভাসক্যুলার সার্জারি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিভাসক্যুলার ডিজিজেস
Discussion about this post