হার্টবিট ডেস্ক
টানা দুই সপ্তাহে রেকর্ড সংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু এবং সংক্রমণ ছাড়িয়ে যাচ্ছে পূর্বের সকল রেকর্ড।
এমন বাস্তবতায় রাজধানীর মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটকে দুইশো শয্যার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ), হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ) ও ভেন্টিলেশন সুবিধাসহ প্রায় এক হাজার ৫০০ বেডের হাসপাতাল আগামী সপ্তাহের মধ্যে চালু করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিঞা।
শুক্রবার (৯ এপ্রিল) তিনি বলেন, ‘আমাদের সাধ্য অনুযায়ী আমরা চেষ্টা করছি এবং করবো। ডিএনসিসি মার্কেট প্রস্তুত করতে পারলে সেখানে ২০০টিরও বেশি আইসিইউ, এইচডিইউ ও ভেন্টিলেশন সুবিধা পাওয়া যাবে।’
এতদিন এক লাখ ৮০ হাজার ৫৬০ বর্গফুট আয়তনের ফাঁকা এ মার্কেটটি করোনার আইসোলেশন সেন্টার এবং বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষার ল্যাব হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। এখন করোনা হাসপাতাল চালু হলে বিদেশগামীদের জন্য এক পাশে পৃথকভাবে জায়গা রাখা হবে।
ডিএনসিসি মার্কেট ছাড়াও ঢাকা মহানগর হাসপাতালে পাঁচটি আইসিইউসহ ১০০ শয্যার বেড পাওয়া যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেটি প্রস্তুতির কাজ এখনও চলমান। মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতালে আইসিইউসহ ১৫০টি নুতন বেড খুব দ্রুত যুক্ত হবে।’
এগুলো চালু হতে কতদিন সময় লাগবে জানতে চাইলে ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, ‘ডিএনসিসি মার্কেট প্রস্তুত করতে গিয়ে আমাদের সমস্ত জনবল সেখানে লেগে গিয়েছে। ফলে বাকিগুলো খুব দ্রুত সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। তবে ডিএনসিস মার্কেট পুরোপুরি চালু হয়ে গেলে অন্যগুলোর কাজও দ্রুত শেষ করা সম্ভব হবে।’
তবে ডিএনসিসি মার্কেট চালু হওয়ার পরবর্তি এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যে বাকিগুলোও প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এছাড়া রাজধানীর সকল হাসপাতালে কোভিড রোগীদের জন্য বেড তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট (এনআইসিবিডি) ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালসহ যেখানে যেখানে আমাদের সুযোগ আছে আমরা সব জায়গাতেই কোভিড রোগীদের সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ডিএনসিসি মার্কেটে যেসব চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রয়োজন তার মধ্যে রয়েছে, ম্যাকানিক্যাল ভেন্টিলেটার ইউথ এনআইভি মোড ৮৭টি, মাল্টিপ্যারামিটার ২২৭টি, সিরিঞ্জপাম্প ৫৪০টি, ইনফিউশন পাম্প ১৫০টি, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা ৩১০টি, ডিফেব্রিলেটার ১৪টি, আইসিইউ শয্যা ৫৫টি, এইচডিইউ শয্যা ২৪০টি, ডায়ালাইসিস মেমিন উইথ আরও চারটি, সাকশস মেশিন ৮২টি, নেবুলাইজার ৫০টি, পালস অক্সিমিটার ৬০টি, ১২ লেড চ্যানেলের ইসিজি মেশিন ২৬টি, ব্লাড গ্যাস এনালাইজার তিনটি, সেমি অটোমেটেড বায়োকেমিস্ট এনালাইজার তিনটি, ইনকিউবেটর তিনটি, সেন্ট্রিফিউজ মেশিন আটটি, ব্লাডব্যাংক রেফ্রিজারেটর চারটি, পোর্টেবল হ্যালোজেন স্পটলাইট পাঁচটি, পোর্টেবল অক্সিজেন কনসানট্রেটর ৩০টি, পোর্টেবল আলট্রাসাউন্ড স্ক্যানার ইউথ ইসিএইচও ৪টি, পোর্টেবল এক্সরে ম্যাশিন আটটি,
এদিকে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ শয্যা দ্বিগুণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খুরশিদ আলম।
সম্প্রতি কোভিড-১৯ রোগী হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেও ভর্তি হতে পারছেন না এমন বাস্তবতায় আইসিইউ শয্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণে হাসপাতালগুলোর ওপর যে হারে চাপ বাড়ছে, তাতে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা সেবা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক একই শঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, ঊর্ধ্বমুখী এই সংক্রমণে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সারা শহর হাসপাতাল করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের জন্যে সাধারণ শয্যা আছে দুই হাজার ৫৫৫টি, আর আইসিইউ শয্যা আছে ১২৮টি। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ৭৭২টি সাধারণ ও ১৮০টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে।
Discussion about this post