হার্টবিট ডেস্ক
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আনতে চলমান ‘লকডাউন’ অন্তত আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে ‘লকডাউন’ পুরোপুরি কার্যকর করতে কঠোরতা আরোপের কথা বলছেন তারা।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে সারা দেশে এক সপ্তাহের ‘কঠোর নিষেধাজ্ঞা’ জারি করে সরকার। গণমাধ্যমে এই বিষয়টিকেই ‘লকডাউন’ বলা হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, ‘লকডাউন’ বলতে যেটা বোঝায় সেটা হচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতি বর্তমানে যে পর্যায়ে রয়েছে এবং যে গতিতে বাড়ছে, তাতে লকডাউন পুরোপুরি কার্যকর না হলে ইতিবাচক কোনো ফল আসবে না। বরং উল্টো পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকবে। সরকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আগামী রোববার (১১ এপ্রিল)।
এদিকে চলমান নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই গত ৭ এপ্রিল থেকে ঢাকাসহ সিটি করপোরেশনগুলোতে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গণপরিবহন চালু করা হয়েছে। শুক্রবার (৯ এপ্রিল) থেকে দোকানপাট ও শপিংমল খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে (সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা)। এর মধ্যে গত ৭ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৬শ’ ২৬ জন আর মারা গেছেন ৬৩ জন। পরদিন বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) আক্রান্ত ৬ হাজার ৪শ’ ৫৮ জন এবং মারা গেছেন ৭৪ জন। সংক্রমণের হার ভয়াবহ পর্যায়ে গিয়ে এক দিন কিছু কমা এটা ইতিবাচক কোনো প্রভাব বলা যায় না বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তাদের মতে, অন্তত টানা ৫/৭ নিম্নমুখী না হলে এটা ইতিবাচক কোনো হিসাবে আনা যাবে না।
এদিকে জীবিকা ও অর্থনৈতক বিষয় বিবেচনা করে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দোকান পাট খুলে দেওয়া এবং গণপরিবহন চালু করা হয়েছে। তবে এ অবস্থায় কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা না হলে পরিস্থিতি আরও ভায়াবহ অবনতির দিকেই যাবে বলে তারা আশঙ্কা করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তারা কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, লকডাউন ঘোষণা করা হলেও লকডাউনের কিছুই মনে হয়নি। আমরা ভয়াবহন বিপদজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। লকডাউন কঠোর করতে হবে। লকডাউন দিলে অন্তত দুই সপ্তাহ দিয়ে দেখতে হবে পরিস্থিতি কী হয়। না হলে এক সপ্তাহ লকডাউন দিয়ে কোনো লাভ নেই। যেভাবে লকডাউন চলছে, এতে পরিস্থিতি কিছু বোঝা যাবে না। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, মাস্ক পরা, হাত ধোয়া এগুলো কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে হবে। কোনো ধরনের জমায়েত হতে দেওয়া যাবে না। এর জন্য পাড়া মহল্লাহ গণতদারকির ব্যবস্থা করতে হবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের এখানে এখন দক্ষিণ আফ্রিকার ভেরিয়েন্ট ৮১ ভাগ বলা হচ্ছে। এখন আমাদের দেখতে হবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন এর জন্য কতটুকু কার্যকরী। তা না হলে যে ভ্যাকসিনটা বেশি কার্যকরী সেটা আনার জন্য ওই সব দেশের সঙ্গে এখনই যোযাযোগ করতে হবে।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, যদি স্বাস্থবিধিই মানা না হয় তাহলে লকডাউন তো কোনো কাজে আসবে না। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। আমরা যে পরিস্থিতির মধ্যে আছি এই অবস্থায় একদিন সংক্রমণ কিছু সংখ্যক কমলে সেটাকে ইতিবাচক কোনো প্রভাব বলা যায় না। টানা ৫ দিন বা ৭দিন কমতে থাকলে সেটাকে ইতিবাচক প্রভাব বলা যাবে। আর এক সপ্তাহের লকডাউনে কোনো কিছু বোঝা যাবে না বা কোনো প্রভাবও পড়বে না। অন্তত আরও এক সপ্তাহ লকডাউন বাড়ানো উচিত। দুই সপ্তাহ কঠোরভাবে মেনে চলা হলে একটা ইতিবাচক ফলাফল বোঝা যায়। আর যেহেতু গণপরিবহন, দোকান পাট খুলে দেওয়া হচ্ছে, তাই কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে না পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবো না।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, লকডাউন বলতে যেটা বোঝায় সেটা হয়নি। লকডাউন মানে সবকিছু বন্ধ রাখতে হবে। এভাবে লকডাউন দিয়ে কিছু হবে না। এখন সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে হবে, মানাতে বাধ্য করতে হবে। প্রয়োজনে পুলিশ-র্যাব আর্মি এদের সহযোগিতা নিতে হবে। এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তা না হলে পরিস্থিতি মারাত্মক হবে। তবে এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে গরিব মানুষের চলার পথ হাইয়ের পথ যেন একেবারে বন্ধ হয়ে না যায়। তাদের কেউ বাঁচাতে হবে। courtesy- banglanews
Discussion about this post