হার্টবিট ডেস্ক
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েকদিনে যেভাবে প্রতিদিন রোগী শনাক্ত হচ্ছে তাতে গতবারের পিকের (জুন-জুলাই) চেয়েও পরিস্থিতি খারাপ হবার আশঙ্কা রয়েছে। গত সোমবার থেকে থেকে দেওয়া লকডাউনেও গণপরিবহন, অফিস ও দোকান খোলা দেখা গেছে। লকডাউনের আগের দু’দিনে ঢাকা ছেড়েছে লাখ লাখ মানুষ, ২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়েছে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষাও। আর এ সবের ফলাফল দেখা যাবে দুই-তিন সপ্তাহ পর। তখন সংক্রমণের পাশাপাশি বাড়বে মৃত্যুও।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) দেশটির নাগরিকদের কোনও দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সংক্রমণ বিবেচনায় চারটি স্তর নির্ধারণ করেছে। এই স্তরের চতুর্থ তালিকা হচ্ছে ‘সংক্রমণ খুই উচ্চ’। যে স্তরে আছে বাংলাদেশও।
দুই লাখের বেশি জনসংখ্যা রয়েছে এমন অঞ্চল বা দেশে ২৮ দিনের মোট আক্রান্তের হার যদি প্রতি লাখে ১০০ জনের বেশি হয়, তবে সেটি চতুর্থ স্তরে পড়ে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ২ এপ্রিল বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি করে সিডিসি।
সিডিসি তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া সতর্কবার্তায় বলেছে, বাংলাদেশের এখনকার পরিস্থিতি এমন যে টিকা নেওয়া কোনও ব্যক্তিও সেখানে ভ্রমণ করে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবেন। যদি বাংলাদেশে ভ্রমণ করতেই হয়, ভ্রমণের আগে টিকার সব ডোজ নিতে হবে। অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে এবং অন্যদের কাছ থেকে কমপক্ষে ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নুসরাত সুলতানা বলেন, ৬ এপ্রিল এবং ৭ এপ্রিল তাদের ল্যাবে করোনার নমুনা শনাক্তের হার ছিল ২৭ এবং ২৬ শতাংশ। মার্চের শেষ দিকে একদিনে শনাক্তের সর্বোচ্চ হার ছিল ৩৯ শতাংশ। মার্চের শেষ এবং এপ্রিলের শুরু থেকে কয়েকদিন ধরে দিনে শনাক্তের হার ৩১ থেকে ৩২ শতাংশ।
ডা. নুসরাত সুলতানা বলেন, ২ এপ্রিল মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হলো। সেটার ফল আমরা এখনও দেখতে পাইনি। এক থেকে দুইদিনের মধ্যেই পাবো। আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর সংক্রমণের নতুন মাত্রা দেখা যাবে। এই দুই সপ্তাহ বেশ সংকটময়।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ল্যাবে করোনার মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক হাজার ১২১টি। পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন ৫৬০ জন। সংক্রমণের হার প্রায় ৫০ ভাগ।
‘২ এপ্রিল মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্বে ছিলেন করোনা ইউনিটেরই দায়িত্বরত চিকিৎসক, ল্যাবে দায়িত্বরত এবং টেকনোলজিস্টরা। আমরা যারা পরীক্ষা নিয়েছি, তারা এমনিতেই বেশি এক্সপোজারের শিকার হয়েছি। কারণ আমরা ভাইরাসের সবচেয়ে কাছাকাছি ছিলাম।’ এমনটা জানান সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার্থীদের থেকে আমরা সংক্রমিত হবো কিনা, তারচেয়ে বেশি চিন্তা আমাদের কাছ থেকে ওরা সংক্রমিত হলো কিনা তা নিয়ে।’
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিউট ( আইইডিসিআর) এর উপদেষ্টা ও মহামারী বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘করোনার লক্ষণ দেখা দিতেও ১৪-২১ দিন লাগে। এখন যাদের মৃত্যু হচ্ছে তাদের বেশিরভাগই সংক্রমিত হয়েছিলেন তিন সপ্তাহ আগে।’
লকডাউনকে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ব্যবস্থা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এতে প্রান্তিক মানুষের খুব সমস্যা হচ্ছে। তাই সবদিক সমন্বয় করে ব্যবস্থা নিতে হবে। রোগীদের কন্টাক্ট ট্রেসিং করে তাদের আইসোলেশনে নিতে হবে। তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন করতে হবে। চলমান টিকাদান কর্মসূচিতেও আরও জোর দিতে হবে।’
Discussion about this post