হার্টবিট ডেস্ক
টিকার উৎপাদন বাড়িয়ে বিদেশে রপ্তানি জারি রাখতে পুনের সেরাম ইনস্টিটিউটের ৩ হাজার কোটি রুপি প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আদর পুনাওয়ালা গতকাল মঙ্গলবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যেভাবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তা রুখতে গেলে যত বেশি সম্ভব মানুষকে টিকা দেওয়া প্রয়োজন। জুন–জুলাই মাসের মধ্যেই তা করতে হবে। সে জন্য দরকার উৎপাদন বাড়ানো। তার জন্য প্রয়োজন ৩ হাজার কোটি রুপি।
আদর পুনাওয়ালা বলেন, টিকার উৎপাদন নিয়ে তাঁর সংস্থা অত্যন্ত চাপের মুখে রয়েছে। উৎপাদন বাড়ানো প্রয়োজন দেশবাসীকে টিকা দেওয়া ও বিদেশে রপ্তানির জন্য। উৎপাদনক্ষমতা না বাড়ালে তা সম্ভব নয়।বিজ্ঞাপন
দুদিন আগেই সরকারিভাবে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছিল, অতিদ্রুত টিকার উৎপাদন দ্বিগুণ করার চেষ্টা চলছে। বর্তমানে সেরামে প্রস্তুত হচ্ছে মাসে ৬ কোটি ডোজ টিকা। হায়দরাবাদের ভারত বায়োটেক উৎপাদন করছে ৪ কোটি। জুন–জুলাইয়ের মধ্যে এই উৎপাদন ১৪ কোটি করার কথা ভাবা হয়েছে। এটা করা না গেলে এই দুই সংস্থার পক্ষে চুক্তি অনুযায়ী টিকা রপ্তানিও কঠিন হয়ে যাবে।
ভারতে নতুন করে সংক্রমণের ছবি দিন দিন মারাত্মক আকার নিচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজার জন। মৃত্যুহারও বাড়ছে। টিকা কেন্দ্রগুলোয় উপচে পড়ছে ভিড়। এখন ৪৫ ঊর্ধ্বদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ইতিমধ্যেই দিল্লি ও মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীরা দাবি করেছেন, ১৮ বছরের বেশি প্রত্যেককে অবিলম্বে টিকা দেওয়া হোক।
এ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্কও। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ মঙ্গলবার বলেন, যাঁদের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি, তাঁদেরই প্রথমে টিকা দেওয়া হচ্ছে। জুলাই পর্যন্ত এমন চলবে। কারণ, পর্যাপ্ত টিকা নেই। নীতি আয়োগের সদস্য ভি কে পল আবার এক ধাপ এগিয়ে বলেন, সময়ে সবাইকে টিকা দেওয়া হবে। সরকারের এই মনোভাবের প্রতিবাদ করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। বুধবার এক টুইটে তিনি সরকারকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘টিকা কারা চান ও কাদের প্রয়োজন, সেই বিতর্ক হাস্যকর। প্রত্যেক ভারতীয়র নিরাপদ জীবন পাওয়ার অধিকার রয়েছে।’
এই পরিস্থিতিতে বিপদ–ঘণ্টি বাজিয়েছেন মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেশ টোপে। তিনি বলেছেন, রাজ্যে যা টিকা মজুত রয়েছে, তাতে বড়জোর তিন দিন চলবে। দ্রুত টিকা পাঠানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে। মহারাষ্ট্রের হাল সবচেয়ে খারাপ। দেশে সংক্রমণের অর্ধেকের বেশি হচ্ছে শুধু এই রাজ্যে।
সংক্রমণ রুখতে যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা নতুন করে বিভিন্ন রাজ্যে জারি করা হচ্ছে। জোর দেওয়া হচ্ছে মাস্ক পরা ও ভিড় এড়ানোর ওপর। দিল্লি হাইকোর্ট বুধবার এক মামলায় জানিয়েছে, নিজের গাড়িতে একাকী সফর করলেও মাস্ক পরতে হবে। না পরলে জরিমানা। বিচারকের নির্দেশে এই অতিমারির সময় নিজস্ব গাড়িও ‘পাবলিক প্লেস’ হিসেবে গণ্য হবে। টিকা নেওয়া থাকলেও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আজ বুধবার সকাল সাতটা পর্যন্ত দেশে মোট ৮ কোটি ৭০ লাখ ৭৭ হাজার জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। সরকারি দাবি, এত দ্রুত এত মানুষকে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে ভারত এখন ১ নম্বরে।
পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, তাঁরা রাশিয়ার টিকা ‘স্পুতনিক–ভি’ উৎপাদনে এগোচ্ছেন। ‘কোডাজেনিক্স’ নামে একটা প্রতিষেধকের ট্রায়ালও খুব শিগগির শুরু হবে। ওই টিকা ইনজেকশন নয়, নাকের ড্রপ। কিন্তু কোভিডের মোকাবিলায় তা ‘গেম চেঞ্জার’ হয়ে উঠতে পারে।
Discussion about this post