হার্টবিট ডেস্ক
দেশে এবারের করোনা আগের রূপ বদলেছে। গতবারের তুলনায় জটিলতর হচ্ছে রোগীর পরিস্থিতি।
মুগদা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী সার্জন ডা. সৈয়দ অলী মোহাম্মদ রাসেল জানালেন, এবার রোগীদের মধ্যে গতবারের তুলনায় অন্যরকম লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি।এবার কিছু লক্ষণ খুব বেশি দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে পাতলা পায়খানা। গতবার যদি এক শ’ জনে একজনের থাকতো, এবার সেখানে ১০-১৫ জনের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। বমি করার ভাব বা বমি করছেন এমন রোগীও ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। অস্থিরতাসম্পন্ন রোগীও এবার বেশি।’
ডা. রাসেল আরও জানালেন, ‘এত বেশি রেস্টলেস (অস্থিরতা) রোগী পাওয়া যাচ্ছে যে, তারা স্বাভাবিক কাজ করতে পারছিলেন না। আমাদের কথাও বুঝতে পারছিলেন না তারা।’
‘তবে এবার সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়া বা খাবারের স্বাদ কম পাওয়া রোগী। গতবারও এটা ছিল। কিন্তু এবার অনেক বেশি। একইসঙ্গে রয়েছে প্রচণ্ড মাথাব্যথা। সেইসঙ্গে শ্বাসকষ্ট তো আছেই।’
ডা. অলী মোহাম্মদ রাসেল আরও বলেন, গতবার শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসা রোগী ছিল ১০ থেকে ২০ শতাংশ। তীব্র শ্বাসকষ্ট ছিল চার থেকে পাঁচ শতাংশের। এবার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশের শ্বাসকষ্ট এবং তীব্র শ্বাসকষ্ট হচ্ছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ রোগীর।
‘এমন রোগীও পেয়েছি যাদের ওয়ার্ডে ১৫ লিটার অক্সিজেন দিয়েও স্যাচুরেশন ঠিক রাখা যাচ্ছে না। অনেকে এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে মারা যাচ্ছে। এ ধরনের রোগীদেরই বেশি আইসিইউ দরকার। কিন্তু তা পাওয়া যাচ্ছে না।’ বললেন ডা. রাসেল।
এদিকে চিকিৎসকরা আরও জানিয়েছেন, অনেকেই করোনার উপসর্গে ভুগলেও আরটি-পিসিআর টেস্টে নেগেটিভ আসছে। অথচ এ পরীক্ষাকেই করোনা পরীক্ষার ‘গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড’ মানা হয়।
আরটি-পিসিআরের মাধ্যমে যে পরীক্ষা হয় তাকে বলা হয় টু-জিন পিসিআর টেস্ট।
ডাক্তাররা বলছেন, নতুন ইউকে ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করার মতো ক্যাপাসিটি টু-জিন পিসিআর টেস্টের কম। এখন আরটি-পিসিআর টেস্ট দিয়ে করোনা ডায়াগনোসিস করা যাচ্ছে না।
নতুন ভ্যারিয়েন্টের জটিলতার প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ও ইনফেকশাস ডিজিজ বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাছান চৌধুরী বলেন, অনেক রোগী পাচ্ছি যাদের অক্সিজেন বেশি লাগছে। আক্রান্তদের মধ্যে যাদের অক্সিজেন প্রয়োজন হয় তাদেরই সিভিয়ার বিবেচনা করছি। তরুণ রোগীও বেশি পাচ্ছি এবার।
ডা. ফরহাদ উদ্দিন আরও বলেন, তবে ডায়াগনোসিস না হলেও অনেককে করোনার রোগীদের মতো চিকিৎসা দিতে হবে। আরটি-পিসিআর ছাড়াও করোনা ডায়াগনোসিস করতে এক্সরে ও রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ ছয় হাজার ৮৩০ জনের করোনা শনাক্তের খবর জানিয়েছে অধিদফতর। সাত মার্চ থেকে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে গতকাল (১ এপ্রিল) দেশে প্রথমবারের মতো শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়ে যায়। গতকাল শনাক্ত হন ছয় হাজার ৪৬৯ জন। এ পর্যন্ত সরকারি হিসাবে শনাক্ত ছয় লাখ ২৪ হাজার ৫৯৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫০ জন। সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত মারা গেলেন ৯ হাজার ১৫৫ জন।
Discussion about this post