ডা. সেলিনা সুলতানা
অটিজম সাধারণত একটি মানসিক বিকাশ জনিত সমস্যা বা নিউরো-ডেভলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার যা শিশুর জন্মের প্রথম তিন বছরের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়।
সাধারণত তিন ধরনের বৈশিষ্ট্য থাকে, প্রথমত সামাজিক যোগাযোগের সমস্যা থাকে। স্বাভাবিকভাবেই একটি শিশু জন্মের সাথে সাথে অন্যের সাথে বা পরিবেশের সাথে যোগাযোগ করতে পারে, সে জায়গায় শিশুটির সমস্যা থাকে।
আর একটা হল একই কাজের প্রতি আগ্রহ থাকে ও একই কাজ বারবার করতে পছন্দ করে। দেখা গেল কোন একটি বিষয়ের প্রতি আগ্রহ যেমন গাড়ির চাকা, সুতা এরকম জিনিসের প্রতি আগ্রহ থাকে যেটাকে বলা হয় restricted and repetitive behaviours।
জন্মগতভাবেই প্রতিটি মানুষ সামাজিক যোগাযোগে অভ্যস্ত। জন্মের সাথে সাথেই শিশুর মায়ের চোখের দিকে তাকানো, মার সাথে হাসি বিনিময় বা ফিরিয়ে দেয়া, আরও বড় হলে সে অন্যদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে চায়। ছোট শিশুটি আরেকটি ছোট শিশু দেখলে তার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় এভাবেও তার পরিবেশের এর সাথে অন্য পরিবেশের এর সংযোগ স্থাপন করতে চায়। শিশুটি আরেকটু বড় হলে অন্য কোন বাসায় বেড়াতে গেলে সেখানে অন্য বাচ্চাদের সাথে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করে, এককভাবে খেলবার চাইতে অন্যদের সাথে মিলেমিশে খেলতে পছন্দ করে। তারপর যখন শিশুটি স্কুলে যাত্রা শুরু করে তখন অন্য বাচ্চাদের সাথে মেলামেশা করার চেষ্টা করে এভাবে বড় হওয়ার সাথে সাথে ব্যাপকভাবে ডেভলপমেন্ট হয় শিশুটির।
কিন্তু অটিস্টিক শিশুদের এই যে ছোটবেলা থেকে যে সামাজিক যোগাযোগ থাকে তা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়, দেখা যায় তারা চোখে চোখে তাকায় না, নিজস্ব একটা জগত এর মধ্যে থাকে। একটি ছোট শিশুর হাত পা নাড়াতে পারলে এদিক ওদিক তাকায় পুরো পরিবেশ থেকে interest নেয়। এক বা দুই বছরের শিশু নতুন জায়গায় আসলে explore করতে চায়, curiosity নিয়ে তাকায়, অটিস্টিক শিশুর বেলায় এটা সম্ভব হয় না। শিশুটি নিজস্ব জগৎ এ আত্মমগ্ন থাকে, বাবা মা আদর করলে প্রতিক্রিয়া পায় না। ছোট শিশু, যারা একটু পিছিয়ে, আদর দিলে সে উল্টো বাবা মাকে আদর করে না, অন্য বাচ্চাদের প্রতি আগ্রহ থাকে না সামাজিক মেলামেশায় কোন আগ্রহ থাকে না। সামাজিকভাবে বিকাশে ছয় মাস থেকে বাচ্চাদের বাবলিং শুরু হয়- বু বু, মা, দাদা এ রকম শব্দ বলে, এটাই একটা রেড ফ্ল্যাগ। যেটা দিয়ে বিকাশ ঠিকমত হচ্ছে কিনা বাবা-মা বুঝতে পারেন, এক বছরের মধ্যে বাবা-মা বলতে পারে দুই বছরের মধ্যে যুক্ত শব্দ বলে বাবা যাব, পানি খাব – এ ধরনের ভাষার উন্নতি হয়।
কিন্তু অটিস্টিক বাচ্চাদের এ ধরনের ভাষার উন্নতি হয় না। স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা শিশুটি বিরক্ত প্রকাশ করে, ইশারায় চাহিদাগুলো বলতে পারে, বারো মাসের মধ্যে বাচ্চা পয়েন্টিং করে, আঙ্গুল দিয়ে জিজ্ঞেস করবে সেটাও অটিস্টিক বাচ্চাদের থাকবে না। নিজেকে প্রকাশ করার তাদের চাহিদা থাকে না। অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চা ঠিকই দুই বছরের মধ্যে ভাষা বা কথা বলার বিকাশ হলো কিন্তু তৃতীয় জন্মদিনে যাওয়ার আগে কথা বলা কমে যাচ্ছে, এটা কে regression বলে, এটি একটি ডায়াগনোস্টিক পয়েন্ট।
অটিস্টিক শিশুদের অর্থাৎ দুই বা তিন বছরের যে ভাষা ছিল তা কমে যাচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে এমন হয় ল্যাঙ্গুয়েজ ডেভলপ করল ঠিকই কিন্তু অর্থবহ না। দুই বা তিন বছরের বাচ্চা কি বলছে, বা কি বোঝাতে পারছে তা communicate করতে পারবে। কিন্তু অটিস্টিক শিশু একই কথা বারবার বলবে যা অর্থ বহন করবে না। Restricted and repetitive behaviours বাবা-মা আইডেন্টিফাই করে- ওর অনেক জিদ ও একটি কাজের মধ্যেই আছে এবং বার বার করছে। নির্দিষ্ট খাবার বা খেলার আগ্রহ বেশি, শিশুটি যোগাযোগ বা কথার আদান-প্রদান করতে পারছে না, ঠিকমত ভেতরের চাহিদাগুলো বলতে পারছেন না। restless থাকে অনেক উত্তেজিত থাকে, এর সাথে hyperactivity ও থাকতে পারে। কিছুকিছু শিশুর বাবা মা এর সাথে self injurious behaviour নিয়েও ডাক্তারের কাছে আসেন যেমন নিজের হাতে কামড় দেয়া, head bang করা, দেয়ালে মাথা ঠোকা, নর্মাল বিহেভিয়ার যেমন বাথরুম করে দেয়া। বাবা-মা বলেন violence হয়ে যাচ্ছে inner need বলতে পারছে না, inner anxiety কন্ট্রোল করতে পারছে না- এ সমস্যাগুলো সাধারণত নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর সাথে ঘুমের সমস্যা থাকে যাকে বলছে অ্যাসোসিয়েটেড এগুলো মূললক্ষণগুলোর সাথে থাকে।
অটিজম কেন হয় তার কারণ এখনো জানা যায়নি এটা নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। বাবা-মা সাধারণতঃ চোখের দিকে না তাকানো, emotional responsiveness কম, একা থাকছে, language ঠিকমতো হচ্ছে না বয়স অনুযায়ী। নির্দিষ্ট কাজের মধ্যে ডুবে থাকে, অন্য কোন কিছুতে আগ্রহ প্রকাশ করে না, এগুলো নিয়ে ডাক্তারের কাছে এসে থাকেন। অন্যান্য কারণেও এই বিষয়গুলো manifest হতে পারে। যেখানে অটিজম নাও থাকতে পারে বাবা-মা সন্তানকে ঠিকমতো সময় না দিলে, কথা না বললে, কথা ঠিকমত না শেখালে তাহলে ভাষা ঠিক মত ডেভলপ হবে না। তার মানে এই নয় যে শিশুটি অটিজমে আক্রান্ত। যদি ছোটবেলা থেকেই বাবা মার সাথে emotional bonding না থাকে যেমন চুমু দেওয়ার অভিজ্ঞতা , জড়িয়ে ধরা বা জড়িয়ে ধরে আদর করা, তবে সে এটা কখনোই বুঝবে না। সেক্ষেত্রে বাবা-মাকে অস্থির না হয়ে চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে।
সাধারণত DSM 5 guideline “The Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders, American Psychiatric Association” অনুযায়ী তিন বছরের মধ্যেই শিশুটির মধ্যে অটিজমের লক্ষণসমূহ আছে কিনা টা identify বা শনাক্তকরণ করা সম্ভব।
চিকিৎসা দিলে ভালো হয় কিনা এটি একটি সাধারণ প্রশ্ন যা প্রতিটি বাবা-মা ডাক্তারের কাছে এসে করে থাকেন। নিউরো ডেভলপমেন্ট ডিজঅর্ডার আক্রান্ত শিশুর এই তিনটি জায়গায় limitation থাকে কিন্তু পারবে না তা কিন্তু নয়। Language development অন্য বাচ্চাদের চেয়ে কম হয় কিন্তু তাদের ability থাকে, এটাকে জিরো বলা যাবে না। একে বলা হয় spectrum disorders, classical features অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের একি রকম intensity থাকবে তা কিন্তু নয়। এটা বলতে আমরা বুঝি range এর মধ্যে থাকবে, mild autism এর ক্ষেত্রে একটু চুপচাপ, ইন্ট্রোভার্ট introvert, ঠিকমতো interact করে না, blurred থাকে, কারও সাথে relation করে না। Severe autistic features সাথে অনেক সময় নিজেকে বা অন্যকে আঘাত করার injurious behaviour গুলো থাকে।
ভালো হওয়ার ব্যাপারটা হলো একদম properly তাকে ম্যানেজ করা, গাইড করা mild autism যে বাচ্চাটি লক্ষণ বা উপসর্গ গুলো অল্প বা খুব একটা পরিলক্ষিত হয় না তাদেরকে খুবই সম্ভব অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসা যায়। কিন্তু যাদের মধ্যে severe অটিজমের লক্ষণ সমূহ থাকে, চেষ্টা করলে তাদেরকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়, বারবার চেষ্টা করলে তাদেরকে সামাজিকভাবে মেলামেশা করা সম্ভব হয়, এর জন্য দরকার সম্পূর্ণ মনোযোগ শিশুটির প্রতি।
একটি বাচ্চার যেভাবে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অন্যদের সাথে মিশছে ও বেড়ে উঠছে, কথা বলছে, অটিস্টিক শিশুটি ওই পর্যায়ে নাও যেতে পারে। কিন্তু চেষ্টা করে যেতে হবে। এটা নির্ভর করে শিশুটির বৈশিষ্ট্যের উপর ও বাবা-মা কিভাবে address করছে তার উপর। একটি স্বাভাবিক বাচ্চার যে জিনিসটি একবার দুইবার লেগে যায় শেখার ক্ষেত্রে, অটিস্টিক শিশুদের ক্ষেত্রে দশ, বিশ প্রয়োজনে একশবার বলতে হবে । কিন্তু বাচ্চাটি যে পারবে না তা না সে অবশ্যই পারবে।
দুটো জায়গায় সাধারণত কাজ করা হয়, সাইকলজিক্যাল ম্যানেজমেন্ট (psychological counseling) এবং parents support বা বাবা-মার মানসিক সাপোর্ট। কিছু ক্ষেত্রে স্পেশাল ভাবে প্যারেন্টাল গাইড লাইন দেয়া হয়। Behaviour modification therapy দেয়া হয়, কিছু ক্ষেত্রে স্পিচ থেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিম কাজ করে এবং শিশুটিকে সবদিক থেকে সাহায্য করা হয়। অনেক সময় শিশুটি কে behavioural therapy দিতে restful করা হয়। শিশুটি থেরাপি গ্রহণ না করতে পারলে accept করতেও পারবে না। পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে শিশুটির চিকিৎসার ক্ষেত্রে guideline দিতে হবে। তা apply করবেন পরিবারের প্রতিটি সদস্য। এটা একটা দীর্ঘ সংগ্রামের প্রক্রিয়া long struggling procedure। তাদের মানসিক সাপোর্ট support দিতে হবে। নিজের mental strength ঠিক না থাকলে বাচ্চাকে কোয়ালিটি সাপোর্ট দেয়া যাবে না । মানসিক mental কাউন্সেলিং দিতে হবে। প্রথম সেশনে শিশুটিকে একদিকে রেখে, তাদের বাবা-মা বা caregiver যিনি থাকবেন তাকে নিয়ে কাজ করতে হবে। বাবা-মার মধ্যে expectancy নিয়ে কাজ করাটাই আসল উদ্দেশ্য।
অনেক সময় বাবা মার মধ্যে unnecessary guilty feeling কাজ করে, মনে করেন, আমি বাচ্চাকে adequate সময় দিতে পারিনি, ছোটবেলা থেকে মোবাইল দিয়ে দিয়েছি, cartoon দেখিয়েছি। তাদের মধ্যে বিষন্নতা বা depression থাকে তাদের এনার্জি টা কমিয়ে দেয়। শিশুদের জন্য কোয়ালিটি love care ভালোবাসার যত্ন দেয়ার জন্য তাকে ভালো থাকতে হবে। নিজের frustration বিষন্নতা থেকে কখনোই বাচ্চাকে কোয়ালিটি টাইম দিতে পারবেন না। অটিজম আক্রান্ত শিশুর বাবা-মার মধ্যে সচেতনতা বেশি দেখা যায়, এরা সবাই অনেকাংশে শিক্ষিত পরিবার educated family থেকে আসে। যখন দেখে অনেক সীমাবদ্ধতা limitations বাচ্চার মধ্যে আছে, তখন তাদের বিষন্নতা frustration আরো বেড়ে যায়। বাচ্চা কিভাবে সামনে এগিয়ে যাবে – এইটাই একমাত্র চিন্তা। তখনই denial ভাব কাজ করে, অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চাকে লুকিয়ে রাখে বা লুকিয়ে রাখার প্রবণতা কাজ করে। বাসায় কাউকে আসতে দিতে চায় না বা অন্য কারো বাসায় ওর বাচ্চাকে নিয়ে যেতে চায় না। এক্ষেত্রে শিশুটির অটিজম আছে, যার জন্য সামাজিক ভাবে মেলামেশা খুব একটা হয় না।
সবাই self lover- শিশুটির বাবা-মা frustrated হয়ে যায়, সব career বাদ দিয়ে এ নিয়মে তারা সন্তুষ্ট হয় না, সন্তানের জন্য করছি, সময় দিচ্ছি, কিন্তু আমার মধ্যে বিষন্নতা কাজ করছে, এ ধরনের মনোভাব কাজ করে। বাচ্চাকে মার দিচ্ছে, বকা দিচ্ছে। অনেক সময় আত্মীয়-স্বজন হাজবেন্ড সবার থেকে শিশুটির মা নিজেকে দূরে সরিয়ে ফেলে দেয়।
এজন্য প্রথমে অটিস্টিক শিশুদের পরিবারের মানসিক চাপ কমানোর উপর কাজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যাকে বলা হয় family intervention।
মায়েরা চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজের প্রতি যত্ন সাজগোজ, সবই ছেড়ে দেয়। একটু বেশি সময় demand করে শিশুটি আর মাও শিশুটিকে তার সবটুকু সময় দেয়ার চেষ্টা করেন। এটা ঠিক না। যদি সম্ভব হয় পার্ট টাইম জব করার চেষ্টা করা উচিত। মন ভালো রাখার জন্য মাকে থাকতে হবে বিষন্নতা মুক্ত। এটা অনেক সাহায্য করবে করবে quality সময় দেওয়ার ক্ষেত্রে শিশুটির প্রতি। অন্যান্য সামাজিক জীবন কিছুটা হলেও maintain করতে হবে। সব বাদ দিয়ে শুধু বাচ্চাদের টাইম দিলেই হবে না, আসলে quantity time বা কতক্ষণ শিশুটিকে সময় দিলাম এটা গুরুত্বপূর্ণ না quality time গুরুত্বপূর্ণ, হোক সেটা দশ মিনিট। সার্বক্ষণিক শিশুটি মাকে কাছে পেলে অনেক সময় শিশুটি dependable হয়ে যায় মার প্রতি। বাবা-মা অনেক সময় ডাক্তারের সাথে শেয়ার করে নেয় এ ব্যাপার গুলো। নির্ভরশীলতা বাচ্চাকে limited করে, interact করতে পারে না কাজেই তার কাজের দক্ষতা ও দেখাতে পারে না। কেউ যদি তারটা করে দেয় তাই সে গ্রহণ receive করে।
সে নিজের স্কিল ডেভেলপ করতে পারে না যেমন হাত দিয়ে খাওয়া, কাপড় গোছানো গোসল করা সে compromise করে ফেলে। একটু বেশি যত্ন বা খেয়াল নেয়ার প্রবণতা অনেক ক্ষতি করে থাকে। এমনিতেই তার rigid activity থাকে, তা আরও বেশি rigid হয়ে যায়। মার প্রতি over dependent হয়ে যায়, সব সময় মনে রাখতে হবে একটা সময়ে মা নাও থাকতে পারে, তখন তাকে একা চলতে হবে। এটা বোঝাতে হবে, একটু চেষ্টা করলেই ওরা বুঝে যায়। শিশুটি কে যতটুকু পারা যায় independent রাখতে হবে। বাচ্চা একা থাকলে, ও অন্যদের সাথে adjust করে ফেলে। বাবা-মাকে বাইরে বের হতে দেখে সে তার নিজের কাজগুলো নিজেই করতে শিখে যায়, এই যেএকটু আত্মনির্ভরশীল হল এটা তার জন্য খুবই পজিটিভ।
বাচ্চাকে অনেক সময় মেডিসিন দেয়া হয় এটা প্রধান চিকিৎসাব্যবস্থা না। Behavioural modification আসল উদ্দেশ্য থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত চঞ্চলতা থাকলে শিশুটিকে অনেক সময় মেডিসিন দিতে হয় কারণ বাচ্চা restful না থাকলে behaviour management apply বা প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। এ ধরনের মেডিসিন এর ক্ষেত্রে কিছু না কিছু side effect থাকে যেমন দুর্বল করে দেয়া, নিস্তেজ হয়ে যাওয়া- এগুলো বাবা-মা অনেক সময় মেনে নিতে পারেন না, নিজেরাই ঔষধ বন্ধ করে দেন আর বাচ্চাকে নিয়ে ফলোআপে আসেন না, এটা ঠিক না। প্রয়োজনে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে ওষুধের ডোজ বাড়িয়ে নিতে হবে এবং ডাক্তার প্রয়োজন মনে করলে অন্য গ্রুপের ঔষধ চেঞ্জ করে দিবেন -সাধারণত এগুলো করা হয়ে থাকে, সুতরাং ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
অনেক সময় প্রথম সন্তানটি অটিস্টিক শিশু হলে দ্বিতীয় বাচ্চা নেওয়ার কথা বলা হয়ে থাকে। এটা পুরোটাই বাবা-মার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। “Autism risk estimated at 3 to 5% for children whose parents have a sibling with autism.May 18, 2020″source: google.com. অতএব Positive family history যদি থাকে ক্লাসিক্যাল অটিজম হওয়ার সম্ভাবনা শুধুমাত্র তিন থেকে পাঁচ ভাগ, বাকি পঁচানব্বই থেকে সাতানব্বই ভাগ সম্ভাবনা থাকে একটি সুস্থ শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার। তাই প্রথম শিশুটি অটিজমে আক্রান্ত হলে পরবর্তী সন্তান ও অটিজমে আক্রান্ত হবে এটা ভাবা ঠিক না।
আমরা অনেক সময় বলে থাকি বাচ্চাদের যেহেতু সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট এ প্রবলেম হচ্ছে, interact করতে সমস্যা হচ্ছে, তাই অন্য বাচ্চাদের সাথে মেশানো দরকার। সেক্ষেত্রে বাবা-মায়ের আরেকটি সন্তান যদি বাসায় থাকে তাহলে সহজ ভাবে বাবা মা তার অটিজমে আক্রান্ত শিশুটিকে একসাথে খেলতে দিতে পারবে এটাই প্রথম উদ্দেশ্য, অন্য একটি ব্যাপার হল বাবা মা বয়স্ক হলে ভাই বোনের মত interact আর কেউ কখনো করে না। অটিস্টিক শিশুটির একটি ভাই বা বোন থাকলে সে ক্ষেত্রে অনেক ভাবে সামাজিক ভাবে উপকৃত হবে এবং বাবা-মা’র overprotection দূর হয়ে যাবে। পজিটিভ নেগেটিভ জায়গাগুলো মাথা রেখেই বাবা মা সিদ্ধান্ত নিবেন যে তারা আরেকটি সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা করবেন কি-না।
সামাজিকভাবে এসব বাচ্চাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি খুব একটা সন্তোষজনক নয়। কোথাও বেড়াতে গেলে একটু অন্যভাবেই দেখা হয়, যেভাবে ওদের দিকে তাকানো হয় বা ব্যবহার করা হয় সেটা কোন অটিজমে আক্রান্ত শিশুর ফ্যামিলির জন্য ভালো কিছু নিয়ে আসে না। তবে আগের চেয়ে ব্যাপারটা অনেকাংশে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। এখন বাবা মা’রা তাদের সন্তানদেরকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখছেন না, তারা তাদের সন্তানদেরকে নিয়ে বাইরে বের হচ্ছেন সব সময় একটা কথা মাথায় রাখলেই সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্যই পরিবর্তন হয়ে যায় “যে আমার বাচ্চা বা আমার পরিচিত কারো বাচ্চা ঐ রকম হতে পারতো”। সেই জায়গাটাতেই আসলে sensitivity develop করতে হবে আমরা অনেক সময় দেখি, স্বল্প মাত্রায় অটিজমে আক্রান্ত শিশুকে বলা হয় নর্মাল regular স্কুলে দিতে। স্বাভাবিক শিশুদের সাথে মিশে এসব শিশু অনেক emotional, social interaction এবং communication বাড়বে এটাই উদ্দেশ্য থাকে। কিন্তু অন্য শিশুরা তাদের এ বন্ধুকে মেনে নিলেও অনেক সময় আমরা স্বাভাবিক শিশুদের বাবা মা’রাই সাধারণত বাধা বা objection প্রকাশ করি, এটা ঠিক না। এখন হয়তো বা আমি অবজেকশন দিয়ে দিলাম কিন্তু আমার শিশুটি ভবিষ্যতে যখন অন্য বাচ্চাদের দেখবে তখন সে মনে মনে তার বাবা-মাকে ঘৃণা করতে থাকবে। নানা ধরনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী শিশুদের দেখে বড় হওয়া শিশুটির মনে যে মানসিকতার বিশালতা তৈরি হবে সেটা কখনোই এ ধরনের বাচ্চাদের বেলা হবে না।
এমন সুস্থ ও বিশাল মনের সন্তান সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব বাবা-মার মধ্যেই থাকে। তাই সহজেই বোঝা যায় এভাবে স্বার্থপর করে বড় করে তুললে সেটার outcome ভালো হয় না। ভবিষ্যতে বয়স্ক বাবা-মা কখনোই এ ধরনের স্বার্থপর শিশুদের দ্বারা উপকৃত হবেন না। শিশুদেরকে sympathy না, empathy দেখানো ও শিখাতে হবে, বোঝাতে হবে।
সামাজিকভাবে মানসিকতার উন্নতি হলেই রেগুলার স্কুলে এসব কোমলমতি শিশুরা টিকে যাবে। এর জন্য প্রয়োজন আরো সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম সুস্থ স্বাভাবিক শিশুর বাবা-মার জন্য। তারা বুঝতে পারলেই অটিজমে আক্রান্ত এসব শিশুরা সাধারণ স্কুলগুলোতে তাদের গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
লেখক:
কনসালটেন্ট: চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট এন্ড পেডিয়াট্রিক
স্পেশালিস্ট ইন নিউরোডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার এন্ড অটিজম
বেটার লাইফ হসপিটাল।
Discussion about this post