কেন শিশুরা অটিজমের আক্রান্ত হয়
এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শিশু নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কাজী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ১৯৪৩ সালে জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. লিও কের্নার থেকে অটিজমের ধারণা পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি।
তিনি বলেন, শিশুরা বিভিন্ন কারণে অটিজমে আক্রান্ত হয়। একটা শিশু অটিজমে আক্রান্ত কিনা তা শিশু জন্মের প্রথম দুই-তিন বছরের মধ্যেই এর লক্ষণ প্রকাশ পায়।’
মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক জৈব রাসায়নিক কার্যকলাপ, জিন অথবা ক্রোমোজোমগত অস্বাভাবিকতা, মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক গঠন, বংশগত সমস্যা ও গর্ভকালীন কোনো জটিলতা, ভাইরাল ইনফেকশন ও বেশি বয়সে বাচ্চা নেওয়া শিশু অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে।
প্রচলিত আছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মায়ের উদাসীনতা জন্য শিশুরা অটিজমে আক্রান্ত হয় এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. কাজী আশরাফুল ইসলাম বলেন, শিশু অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার জন্য মা বা বাবা দায়ী এমন কথা এখন পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত হয়নি, আর দায়ী কথাটা ব্যবহার করা ঠিক হবে না। তবে প্রথম বাচ্চা অটিস্টিক হলে দ্বিতীয় বাচ্চা অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কিছুটা থেকে যায়। আর যমজ বাচ্চার ক্ষেত্রে অটিস্টিক হওয়ার আশংকা অনেক বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশদূষণ ও রাসায়নিক মেশানো খাদ্য গ্রহণ ইত্যাদির কারণেও শিশুরা অটিজমে আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া জেনেটিক কারণে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের অটিস্টিক হওয়ার আশংকা বেশি৷
অটিজম রোধে করণীয়
শিশুর মাঝে অটিজমের লক্ষণ দেখা মিললে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ‘তাড়াতাড়ি অটিজম নির্ণয় করলে পারলে অটিজমের অনেক জটিলতাই এড়ানো সম্ভব’ বলছেন চিকিৎসকরা।
অটিজম রোধে সচেতনতার বিকল্প কিছু নেই জানিয়ে বিএসএমএমইউর অটিজম সংক্রান্ত ইন্সটিটিউট ইপনার পরিচালক অধ্যাপক শাহীন আকতার বলেন, অটিজম সম্পর্কে জানতে হবে। অসচেতন মহলের অনেকে ভাবেন অটিজম হলো সাংঘাতিক একটি অসুখ, প্রতিবন্ধিতা ও বুদ্ধি নাই, তবে এমনটি নয়। অটিজম হলো আচরণগত সমস্যা, ব্রেনের কিছু ক্রটি। এই শিশুরা সামাজিকভাবে চলাফেরা করতে পারে না। এরা কথায় কিংবা কাজের মাধ্যমে নিজের মনের ভাবগুলো প্রকাশ করতে পারে না। অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে থাকে সীমাবদ্ধ আচরণ। এই শিশুরা একই কাজ বারবার করতে থাকে।
তিনি বলেন, অটিজম কোনো কঠিন রোগ নয়। কঠিন রোগ হলে একটা চিকিৎসা থাকে। টিভি রোগ হলে, ছয় মাস ঔষধ খেলে রোগ সেরে যাবে। এটা কোনো রোগ নয়, মস্তিষ্কের বিকাশ জনিত এক ধরনের সমস্যা। এই সমস্যা দীর্ঘদিন যাবৎ ধৈর্য ধরে তাদের মনের কথাগুলো বুঝতে হয়, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হয়। অটিজমে আক্রান্ত মনের কথা বুঝাতে পারে না, তাদের কথাগুলো আমাদেরকে বুঝতে হবে। বিশেষ পদ্ধতিতে তাদেরকে শিক্ষা দিতে হবে। অটিজমের কোনো ঔষধ নেই। দ্রুত অটিজম শনাক্ত করতে পারলে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারলে এই শিশুরাও অন্যান্য শিশুদের মত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে।
যেখানে গেলে মিলবে অটিজমের চিকিৎসা
বিএসএমএমইউর অটিজম সংক্রান্ত ইন্সটিটিউট ইপনাতে রয়েছে অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও অটিজম স্কুল। অধ্যাপক শাহীন আকতার বলেন, ‘অটিজমে আক্রান্ত একটা শিশুর সাথে তার বাবা মা কিভাবে আচরণ করবে, তাও দেখানো হয় ইপনাতে।’
এছাড়া দেশের মেডিকেল কলেজগুলোর ১৬টিতে শিশু-বিকাশ কেন্দ্র রয়েছে যেখানে অটিজম শনাক্ত করা হয়। শহর বা গ্রাম পর্যায়ে রয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তির উদ্যোগ, সামাজিক সংগঠনগুলোর ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় অধীনে প্রতিবন্ধী সাহায্য ও সেবাকেন্দ্র।
অটিজমে আক্রান্ত শিশুর পরিসংখ্যান
বাংলাদেশে ঠিক কতজন শিশু অটিজমে আক্রান্ত সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে তার কোনও সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।
এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি ১০ হাজার শিশুর মাঝে কমপক্ষে ১৭ জন শিশু অটিজমে আক্রান্ত হচ্ছে এবং প্রতি ১০ হাজার ছেলে শিশুর মাঝে ২৪ জন ছেলে শিশু ও প্রতি ১০ হাজার মেয়ে শিশুর মাঝে প্রায় ১০ জন মেয়ে শিশু অটিজমে আক্রান্ত। প্রতি ৬৮ জন শিশুর মধ্যে একজন অটিজমে আক্রান্ত। এটা ছেলেদের হওয়ার সম্ভাবনা মেয়েদের চেয়ে পাঁচগুন বেশি।
দেশে প্রায় আড়াই লাখ শিশু রয়েছে অটিস্টিক। দেশের এক শতাংশ শিশু অটিজমে আক্রান্ত। আর ঢাকায় অটিস্টিক শিশুর হার তিন শতাংশ।
Discussion about this post