আবাদুজ্জামান শিমুল
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নতুন ভবনের করোনা ইউনিটে রোগীরা ভর্তি হতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ বলছে সিট খালি নেই।
তবে সিট না থাকলেও সঙ্কটাপন্ন রোগীদের ভর্তি নেওয়া হচ্ছে।বুধবার (৩১ মার্চ) বিকেলের দিকে নতুন ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক রোগী ভর্তি হতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন।
রাজধানীর কামরাঙ্গীর চর থেকে মেয়ে হাজেরার সঙ্গে এসেছেন বৃদ্ধা জাহানারা বেগম (৭৫)। বার্ধক্যজনিত রোগসহ কয়েক দিন ধরে তিনি জ্বরে ভুগছেন। নতুন ভবনের নিচতলা থেকে বলা হয়, এখানে সিট খালি নেই। এটা করোনা ইউনিট। হাজেরা বেগমকে মিটফোর্ড হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওযা হয়।
হাজেরা বেগম জানান, এখন মাকে নিয়ে কী করবো বুঝতে পারছি না। মা কিছু খেতে পারে না। গায়ে জ্বর। দুর্বলতার কারণে বেঞ্চে শুয়ে পড়েছে।
এদিকে দেখা যায় নতুন ভবনে এক কোণে বোনের বুকের ওপর মাথা দিয়ে রাকিব (১৮) নামে এক যুবক শুয়ে আছে। বোন রোকেয়া জানান, বেশ কয়েকদিন ধরে তার ভাইয়ের জ্বর। এর আগে হাসপাতালের আউটডোর দেখিয়েছি। কোনো কাজ হয়নি। আজকে নতুন ভবনে নিয়ে এসেছি। এখান থেকে বলে ইমারজেন্সিতে যেতে। কী করব বুঝতেছি না। বিভিন্ন পরীক্ষা দিয়েছে সেগুলো করিয়েছি। পরে ভাইকে নিয়ে তিনি রিকশাযোগে নতুন ভবন থেকে ইমারজেন্সিতে চলে যান।
এদিকে নতুন ভবনের সামনে দেখা যায় দূর-দূরান্ত থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগীরা আসছে চিকিৎসার জন্য।
মুন্সিগঞ্জ থেকে মকবুল হোসেনকে (৮৫) এনেছেন তার স্বজনরা। সাথে থাকা তার ছেলের বউ নাসরিন জানান, হাসপাতাল থেকে বলছে এখানে সিট খালি নেই, অন্য কোনো হাসপাতালে নিয়ে যেতে।
নতুন ভবন থেকে একটি সূত্র জানায়, প্রচুর রোগী আসছে হাসপাতালে। কিন্তু নতুন ভবনে কোনো সিট খালি নেই। কেউ ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেলে অথবা কেউ মারা গেলে, সেই জায়গায় ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। দিনের বেলা থেকে রাতের বেলায় রোগীর সংখ্যা বেশি থাকে। প্রচুর রোগী নিচতলায় অপেক্ষা করতে থাকে, আমরা সিট দিতে পারছি না।
এই ব্যাপারে মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হাফিজ সরদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমাদের এখানে বেড খালি নেই, বিষয়টি তা না। আবার আমাদের এখানে বেড খালি পড়ে আছে এটাও কিন্তু না।
আমাদের এখানে প্রচুর রোগী ভর্তি করা হয়েছে। যাদের অক্সিজেন লাগছে না, তাদের আমরা ছুটি দিয়ে দিচ্ছি এবং তাদের আমরা নাম্বার দিয়ে দিচ্ছি আমাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য। এছাড়া নতুন যারা রোগী আসছে যাদের অক্সিজেন প্রয়োজন নেই, তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাসায় থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আজকে আমাদের নতুন ভবনে রোগী ভর্তি আছে ৫৮০ জনের মতন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কোনো রোগীকে ভর্তির আগে পরীক্ষার নির্দেশ দিতে পারেনা চিকিৎসকরা। আমাদের হাসপাতালে সব পরীক্ষা করিয়ে থাকি।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রচুর রোগী আসছে। যারা বেশি ক্রিটিক্যাল যাদের অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে তাদেরই আমরা ভর্তি নিচ্ছি। তবে আগের মতো সিট খালি থাকছে না। একজনকে ছাড়পত্র দিয়ে অন্যজনকে ভর্তি নেওয়া হয়। ক্রিটিক্যাল রোগীদের আমরা ফিরিয়ে দিচ্ছি না।
- courtesy – বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
Discussion about this post