হার্টবিট ডেস্ক
গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল কেন্দ্রে মাত্র দেড় লাখ টাকায় কিডনি প্রতিস্থাপন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে বিশ্ব কিডনি দিবসের আলোচনায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রতিদিনই কিডনি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। মানুষের অন্যকোনো রোগ হলে ওষুধ খেয়ে তা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কিন্তু কিডনি দীর্ঘমেয়াদি রোগ হওয়ায় এর ব্যয়ভার অনেক বেশি। এক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতা ছাড়া কিডনি সমস্যা নিরসন সম্ভব নয়।
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, দেশে কিডনি ডায়ালাইসিসে প্রচুর খরচ, যা আমাদের নিম্নআয়ের মানুষের জন্য বহন করা খুবই কষ্টকর। তাই, প্রতিস্থাপনই একমাত্র পথ।
সমাজের বিত্তবান ও দানশীল প্রতিষ্ঠানকে কিডনি প্রতিস্থাপনের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের মতো দানশীল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অনুদানে, একটি আন্তর্জাতিকভাবে অভিজ্ঞ ও দক্ষ ট্রান্সপ্লান্ট দলের কারিগরি তত্ত্বাবধানে যুক্তরাজ্যের রয়্যাল লন্ডন হাসপাতালের সহায়তায় গণস্বাস্থ্যে স্যার ফজলে হাসান আবেদ ট্রান্সপ্লান্ট সেন্টার স্থাপনের কাজ শুরু করেছি। যার আনুমানিক প্রাক্কলন ৭৫ কোটি টাকা। কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য যেখানে খরচ হয় ৩০ লাখ টাকা, সেখানে আমরা মাত্র দেড় লাখ টাকায় কিডনি প্রতিস্থাপন করতে পারব।
তিনি আরও বলেন, কিডনি সমস্যা নিরসনে প্রধান বাধা বিদ্যমান আইনি জটিলতা। প্রতিস্থাপন নিয়ে আইনি জটিলতা কাটছেই না। এ সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেওয়া রায় আজও বাস্তবায়ন হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু মানুষের কারণে আমরা আটকে পড়েছি।
প্রতিবছর হাজারের বেশি কিডনি প্রতিস্থাপন জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বেসরকারিভাবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কিডনি প্রতিস্থাপন হলেও সরকারিভাবে বিভিন্ন অজুহাতে তা থেমে আছে। ২০১৯ সালে একটি ট্রান্সপ্ল্যান্টের উদ্যোগ নিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু আইনি সংকীর্ণতার কারণে আজও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এমনকি আমেরিকা থেকে একটি মেশিন নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু গত ৮ মাসেও তা খালাস হয়নি। ‘
তিনি বলেন, ‘কিডনি রোগ প্রকট আকার ধারণ করায় শঙ্কা বাড়ছে। ওষুধের দাম অনেক বেশি। সরকারকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফি কমানো ও এ সংক্রান্ত সব ট্যাক্স মওকুফ করতে হবে।’
কিডনি প্রতিস্থাপনে ইরানের পদ্ধতি অনুসরণ করা যায় উল্লেখ করে গণস্বাস্থ্যের এ ট্রাস্টি বলেন, ‘ইরানে কিডনি দাতাকে সরকারিভাবে সবধরনের সহযোগিতা করা হয়। ব্যক্তির সঙ্গে নয়, কিডনি বিনিময় রাষ্ট্রের সঙ্গে হয় সেখানে। ফলে কোনো ধরনের পাচার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।’
আলোচনায় আরও অংশ নেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সমন্বয়কারী অধ্যাপক ডা. মঞ্জুর কাদির আহমেদ, ডা. মুহিবউল্লাহ খোন্দকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক ডা. মামুন মোস্তাফি প্রমুখ।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে কমপক্ষে ২ কোটি মানুষ বিভিন্ন ধরনের কিডনি রোগে ভুগছেন, যার এক-চতুর্থাংশই ১৮ বছরের কম বয়সী। বিশ্বে প্রতিঘণ্টায় কিডনিতে ৫ জন শিশুর মৃত্যু হয়।
২০১৮ সালের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ৫০ হাজার শিশু দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে ভুগছে, যাদের মাত্র ১০ শতাংশ পরিপূর্ণ বা আংশিক চিকিৎসা গ্রহণ করেছে। কিডনি প্রতিস্থাপন করেছে ১১ জন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ছাড়াও কয়েকটি সেন্টারে ডায়ালসিস সেবা দেওয়া হচ্ছে।
Discussion about this post