করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আগামীতে দেশেই টিকা তৈরির প্রত্যাশা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, দেশে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি টিকা তৈরি করছে। সরকারিভাবেও করোনা টিকা তৈরি করতে কাজ চলছে।
সোমবার (০৮ মার্চ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহযোগিতায় এবং হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএইচআরএফ) আয়োজনে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। ‘করোনার এক বছরে বাংলাদেশ: সফলতা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এ আলোচনার আয়োজন করা হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে অনেক বড় বড় ওষুধ কোম্পানি রয়েছে। সেই কোম্পানিগুলোকে এরইমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে টিকা তৈরি করতেও সংশ্লিষ্ট একটি ল্যাব দরকার। ওষুধ প্রশাসনে একটি ল্যাব আছে। এই ল্যাব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন দেয়। অনুমোদন পেতে আমরা আবেদনও করেছিলাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের কিছু নির্দেশনা দিয়েছে সেই অনুযায়ী উন্নত করে এই ল্যাব দিয়েই টিকা উৎপাদন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, করোনায় মেডিসিনের কোনো সংকট ছিল না। করোনা চিকিৎসার জন্য রাতারাতি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যে করণে আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা অনেক ভালো করেছি। অনেক দেশে এখনও লকডাউন চলছে। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনায়।
করোনায় ভ্যান্টিলেটরেই বেশি মৃত্যু হয়েছে
করোনাভাইরাস সংক্রমণে চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে ভ্যান্টিলেটরেই বেশির ভাগ মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের শুরুর দিকে আমাদের অনেক ব্যর্থতা ছিল। আমরা ভাইরাসটিকে বুঝতে পারিনি। আমরা কিছু ভুল সিদ্ধান্তও নিয়েছি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা চিকিৎসায় শুরুতে বলা হয়েছে ভ্যান্টিলেটর বেশি কার্যকরী, আমরা ভ্যান্টিলেটরের ব্যবস্থা করলাম। পরে দেখা গেলো ভ্যান্টিলেটরেই বেশির ভাগ মৃত্যু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে হাইপো নেজাল ক্যানোলা। রাতারাতি আমরা সেগুলোর ব্যবস্থা করেছি। আমরা দ্রুতই আইসোলেশনের ব্যবস্থা করেছি। বসুন্ধরায় তিন হাজার বেডের হাসপাতাল করে দিয়েছি।
করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য দেশে করোনার বিস্তার লাভ করলেও আমাদের দেশে নিয়ন্ত্রণে আসছে।
আসন্ন গরমে করোনার সংক্রমণ কিছুটা বাড়তে পারে এমন শঙ্কা প্রকাশ করে সাবেক উপাচার্য বলেন, এটার গতি প্রকৃতি কেমন তা জানতে গবেষণার প্রয়োজন। গবেষণার জন্য টাকা প্রয়োজন। এই টাকা জোগানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা করতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে আহ্বান জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, দেশে গণটিকাদান কর্মসূচি চলছে তার কার্যকারিতা যাচাইয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। এছাড়া যাদের শরীরে টিকা প্রয়োগ করা হচ্ছে তার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না তাও জানা দরকার। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এবিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করতে চাই।
তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বমানের গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে তৈরি করতে চাই। এজন্য আমরা দিনরাত নিরলস ভাবে কাজ করছি। এজন্য একটি ফান্ড দরকার, সেই ফান্ডের ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে, যেভাবে কাজ করে করোনাকে দমন করতে পেরেছি।
আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএসএমএমইউ’র পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুলফিকার আহমেদ আমিন, স্বাচিপ সভাপতি ডা. এম ইকবাল আর্সলান, বিএমএ মহাসচিব ডা. এহতেসামুল হক, ডা. মোহাম্মদ শহিদুলাহ প্রমুখ।
Discussion about this post