হার্টবিট ডেস্ক
এমবিবিএস কোর্স বাংলায় হওয়া প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বাংলা ভাষায় প্রথম মেডিসিন রেফারেন্স বই লিখে সাড়া ফেলে দেওয়া অধ্যাপক ডা. আজিজুল হক।
রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেডিভয়েসকে এ কথা বলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সাবেক এই বিভাগীয় প্রধান।
ভাষা দিবসের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এমবিবিএস চিকিৎসকরা মূলত মাঠ পর্যায় থেকে গণমানুষের সেবা করেন। আর মানুষের সাথে মিশে যাওয়ার সুবিধার্থে এমবিবিএস কোর্স বাংলায় হলেই ভালো হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইংরেজি ভাষা এ দেশের মানুষের মাতৃভাষা নয়। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। বাংলাতেই আমরা সবকিছু চিনি ও বুঝি। ইংরেজিতে কথা বললেও বাংলা তরজমা হয়ে আমরা সেটা বুঝি।’
‘বিদেশি লেখকের Davidson’s Principles and Practice of Medicine বইটি পড়েই আমাদের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের পাস করতে হয়। আমাদের দেশের উপযোগী করে লেখা এদেশীয় কোনো লেখকের ইংরেজি বই নাই, আছে কিছু নোট। সেগুলো টেক্সটবুক নয়,’ যোগ করেন অধ্যাপক আজিজুল হক।
তিনি আরও বলেন ‘আমার ২০ বছরের শিক্ষকতা জীবনে দেখেছি, সকল ছাত্র ইংরেজিতে দক্ষ নয়। তাই টেক্সট বই না পড়ে ক্লাসে স্যারদের নোট পড়ে এবং সেভাবেই পরীক্ষা দিয়ে পাসও করে। কিন্তু বিষয়টির উপর বোধগম্য হয় না। আমাদের সময় জিপিএ-৫, গোল্ডেন জিপিএ ইত্যাদি ছিল না। কিন্তু আমার মনে হয়, তখন ইংরেজি শিক্ষার মান এখনকার চেয়ে অনেকটা ভালো ছিল। তাই সরাসরি বইয়ের পড়া বুঝতে সহজ হতো। ওয়ার্ড রাউন্ডে প্রশিক্ষণরত ইন্টার্নি ডাক্তারকে প্রশ্ন করে দেখেছি, যখন সে ভুল উত্তর দেয় তখন ‘Davidson’ এর বইটি নিয়ে এসে আমার সামনে পড়তে বলেছি। অনেকসময় দেখেছি সে পাঠের উল্টো অর্থ বুঝেছে। আমার মনে হয় যে কেউই ইংরেজি ভাষায় যত দক্ষ বলেই দাবি করুক, মাতৃভাষায় কোনো বিষয় হৃদয়ঙ্গম করা যতটা সহজ, বিদেশি ভাষায় ততটা সহজ নয়। মাতৃভাষার মাধ্যমে যে কোনো বিষয়ই অন্তরে গেঁথে যায় এবং অন্তরের কথা ও মনের কথা মাতৃভাষাতেই প্রকাশ করা সম্ভব। চিকিৎসাবিজ্ঞানও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই আমি মাতৃভাষায় মেডিসিনের বই লেখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৮৩ সালে এমবিবিএস সম্পন্ন করা ডা. আজিজুল হক বলেন, ‘প্রথমে মনে করেছিলাম Davidson এর বইয়ের অনুবাদ করবো। কিন্তু ভেবে দেখলাম, অনুবাদ সাহিত্য ততখানি সুখপাঠ্য হবে না এবং বইয়ের যেসব অংশ এমবিবিএস শিক্ষার্থীদের জন্য অপ্রয়োজনীয় মনে করি তা বাদ দিতে পারবো না এবং অন্য বই থেকে নতুন তথ্য ও আমার ডাক্তারি জীবনের অভিজ্ঞতাও সেটার সাথে যোগ দিতে পারবো না। তাই সিদ্ধান্ত নিই সম্পূর্ণ নিজের ভাষায় নিজের কনসেপশন থেকে বিভিন্ন বইপত্রের প্রয়োজনীয় অংশটুকু শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী করে প্রস্তুত করবার এবং সেভাবেই এ কাজটি করেছি।’
ভাষা শহীদদের আত্মোত্যাগের ৬৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো অফিস, আদালতে বাংলা ভাষার প্রয়োগ শুরু হয়নি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি আরও বলেন, ‘আমার সবাই বাংলার কথা বলি কিন্তু বাংলা প্রয়োগ করি না। আমরা মুখে বলি কাজ করি না। আমার কাছে কষ্ট লাগে কিন্তু কেউ কাজ করে না।’
Discussion about this post