হার্টবিট ডেস্ক
হাঁটু শরীরের বড় ও ওজন বহনকারী জোড়াগুলোর মধ্যে অন্যতম। হাঁটুর জোড়া উপরের দিক থেকে উরুর হাড় (ফিমার) ও প্যাটলা বা নী ক্যাপ এবং নিচের দিক থেকে লেগের হাড় (টিবিয়া)- এই তিন হাড়ের সমন্বয়ে গঠিত। হাঁটুতে চারটি প্রধান লিগামেন্ট থাকে। লিগামেন্ট হলো ইলাসটিক টিসু যা এক হাড়কে অন্য হাড়ের সাথে যুক্ত করে, জোড়ার শক্তি প্রদান এবং জোড়ার স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।
হাঁটুর লিগামেন্টগুলো নিম্নরূপ:
১. এনটেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট: হাঁটুর মাঝখানের সামনের দিকে এবং পোসটেরিওর লিগামেন্টের সাথে ক্রস করে থাকে বলেই একে এনটেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট বলে। এই লিগামেন্ট লেগের রোটেশনাল ও সামনের নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে।
২. পোসটেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট হাঁটুর মাঝখানের পিছনে থাকে এবং লেগের পিছনের নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে।
৩. মিডিয়ার কোল্যাটারাল লিগামেন্ট হাঁটুর ভিতর পার্শ্বের স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।
৪. ল্যাটারাল কোল্যাটারাল লিগামেন্ট হাঁটুর বাহির পার্শ্বের স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।
লিগামেন্ট ইনজুরির কারণসমূহ:
১. হঠাৎ মোচড়ানো গতি দ্বারা এনটেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট সবচেয়ে বেশি ইনজুরি হয়।
২. আঘাত, রিকশা থেকে পড়ে গেলে, গাড়ি বা মটর সাইকেল দুর্ঘটনায় এনটেরিওর ও পোসটেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট ইনজুরি হয়।
৩. ফুটবল, বাস্কেটবল, কাবাডি ও হা-ডু-ডু খেলোয়ারদের মাঝে এনটেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট ইনজুরি বেশি হয়।
৪. মই থেকে পড়ে গেলে।
৫. উপর থেকে লাফ দিয়ে পড়লে।
৬. গর্তে পড়ে গেলে।
৭. সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় এক স্টেপ ভুল করলে।
৮. ল্যাটারাল কোল্যাটারাল লিগামেন্ট অপেক্ষা মিডিয়াল কোল্যাটারাল লিগামেন্ট বেশি ইনজুরি হয় হাঁটুর বাহির পার্শ্বে সরাসরি আঘাতের জন্য।
৯. ফুটবল ও হকি খেলোয়াড়দের মাঝে মিডিয়াল কোল্যাটারাল লিগামেন্ট ইনজুরি হয়।
১০. ৭০% ব্যক্তির এনটেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট ইনজুরির সাথে মেনিসকাস ইনজুরি থাকে।
লিগামেন্ট ইনজুরির লক্ষণসমূহ:
১. প্রথমে তীব্র ব্যথা পরে আস্তে আস্তে ব্যথা কমে আসে।
২. ব্যথা হাঁটুর বাহির পার্শ্বে এবং পিছনে অনুভূতি হবে।
৩. হাঁটু ভাঁজ বা সোজা করতে গেলে ব্যথা বেড়ে যায়।
৪. আগাতের প্রথম দশ মিনিটের মধ্যেই হাঁটু ফুলে যায়।
৫. ফুলা ও ব্যথার জন্য হাঁটু নড়াচড়া করা যায় না।
৬. দাঁড়াতে বা হাঁটতে চেষ্টা করলে মনে হবে হাঁটু ছুটে যাচ্ছে বা বেঁকে যাচ্ছে।
৭. আঘাতের সাথে সাথে ব্যক্তি ‘পপ’ বা ‘ক্র্যাক’ শব্দ শুনতে বা বুঝতে পারবে।
৮. সাথে মেনিসকাস ইনজুরি থাকলে, রোগী বেশিক্ষণ বসলে হাঁটু সোজা করতে কষ্ট হয়।
৯. অনেক সময় হাঁটু আটকিয়ে যায়, রোগী হাঁটুতে নড়াচড়া করিয়ে সোজা করে।
১০. দীর্ঘদিন যাবৎ লিগামেন্ট ইনজুরি থাকলে হাঁটুর পেশী শুকিয়ে যায় এবং হাঁটুতে শক্তি কমে যায়।
১১. উঁচু নিচু জায়গায় হাঁটা যায় না, সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করতে এবং বসলে উঠতে কষ্ট হয়।
১২. হাঁটু ইনসিকিউর বা অস্থিতিশীল মনে হবে।
জরুরি চিকিৎসা বা করণীয়:
১. হাঁটুকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।
২. বরফের টুকরা টাওয়ালে বা ফ্রিজের ঠান্ডা পানি প্লাস্টিকের বেগে নিয়ে লাগালে ব্যথা বা ফুলা কমে আসবে। প্রতিঘণ্টায় ১০ মিনিট বা দুই ঘণ্টা পর পর ২০ মিনিট অনবরত লাগাতে হবে। তবে ইহা সহ্যের মধ্যে রাখতে হবে। এই পদ্ধতি আঘাতের ৪৮-৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত চলবে।
৩. হাঁটুতে ইলাসটো কমপ্রেসন বা স্পিলিন্ট ব্যবহারে ফুলা ও ব্যথা কমে আসে।
৪. হাঁটুর নিচে বালিশ দিয়ে হাঁটুকে হার্টের লেবেল থেকে উঁচুতে রাখলে ফুলা কম হবে।
৫. এনালজেসিক বা ব্যথানাশক ওষুধ সেবন।
৬. হাঁটুর লিগামেন্ট ইনজুরির চিকিৎসা প্রদান করতে সক্ষম এমন চিকিৎসকের কাছে বা স্টোরে রোগীকে পাঠাতে হবে।
ল্যাবরেটরি পরীক্ষা:
প্রাথমিক চিকিৎসায় রোগীর ব্যথা ও ফুলা সেরে উঠার পর, হাঁটুর বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে কী কী লিগামেন্ট ইনজুরি হয়েছে এবং এর তীব্রতা নির্ণয় করা যায়। কখনও কখনও এক্স-রে ও এমআরআই এর সাহায্য নিতে হয়।
প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও করণীয়:
হাঁটুর লিগামেন্ট আপনাআপনি জোড়া লাগে না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে (যেমন- কোল্যাটারাল লিগামেন্ট) হাঁটুর পেশীর ব্যায়াম ও দৈনন্দিন কাজকর্ম পরিবর্তনের মাধ্যমে সুস্থ থাকা যায়। ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট ইনজুরি হলে নতুন করে লিগামেন্ট তৈরি করতে হবে। এর মধ্যে এনটেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট তৈরি করা জরুরি, কারণ ইহা না করলে হাঁটুতে তাড়াতাড়ি এসটিওআর্থ্রাইটস হয়ে জোড়া নষ্ট হবে। বর্তমানে হাঁটুর বাহির থেকে টেনডন নিয়ে ছোট দুইটি ছিদ্র দিয়ে আর্থোস্কপ যন্ত্র হাঁটুতে প্রবেশ করিয়ে নতুন লিগামেন্ট তৈরি করা হয়। আর্থ্রোস্কোপিক সার্জারীর পর নিয়মিত রিহেবিলিটেশন মাধ্যমে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।
Discussion about this post