হার্টবিট ডেস্ক
হৃদস্পন্দনের মাঝে কলকল শব্দ হলে তাকে হার্ট মারমার বলে। এটি হচ্ছে হৃদপিণ্ডে রক্তপ্রবাহের শব্দ। এটি দ্রুতগামী, কোমল ও অনুচ্চ শব্দ, যা আপনার বুকে কম্পন অনুভূতি জাগাবে না। প্রকৃতপক্ষে, আপনি এটি অনুভব করতে পারবেন না। এ শব্দ শণাক্ত করার একমাত্র উপায় হচ্ছে, স্টেথোস্কোপ।
আপনার হৃদপিণ্ডে অথবা এর চারপাশে অনিয়ন্ত্রিত বা অস্বাভাবিক রক্তপ্রবাহের কারণে হার্ট মারমার হয়ে থাকে। কিছু কিছু হার্ট মারমার সাধারণ এবং ক্ষতিকর নয়, তবে অন্যান্য হার্ট মারমার হৃদপিণ্ডের কোনো সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে।
দ্য ওহাইও ইউনিভার্সিটি ওয়েক্সনার মেডিক্যাল সেন্টারের কার্ডিওলজিস্ট ব্রেন্ট ল্যাম্পার্ট বলেন, ‘হার্ট ভাল্বের সমস্যা যেমন- সংকীর্ণতা বা ছিদ্র, অথবা হৃদপিণ্ডে ছিদ্র যেমন- অ্যাট্রিয়াল সেপ্টাল ডিফেক্ট বা ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট, কিংবা অন্যান্য জন্মগত হৃদপিণ্ড বিকৃতির কারণে হার্ট মারমার হয়ে থাকে। তবে অধিকাংশ হার্ট মারমার ক্ষতিকর নয়।’ কিছু হার্ট মারমার কারণের ওপর নির্ভর করে উপসর্গ তীব্র করতে পারে। আপনার নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষায় একজন ডাক্তার আপনার হার্টবিটের যেকোনো অনিয়ম শণাক্ত করতে পারে এবং ইকোকার্ডিওগ্রাম বা হৃদপিণ্ডের আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে তা মূল্যায়ন করতে পারে।
ডা. ল্যাম্পার্ট বলেন, ‘এটি জেনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, অনেক রোগী হার্ট মারমারের উপসর্গের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয় না, অথবা ভাল্ব রোগের বৃদ্ধি এতই ধীরভাবে হয় যে, হৃদপিণ্ড এই ক্ষতি পূরণ করে এবং এর উপসর্গ লক্ষ্য করা যায় না বললেই চলে।’
এ প্রতিবেদনে হার্ট মারমারের ৭টি নীরব লক্ষণ তুলে ধরা হলো।
* শ্বাসকষ্ট অথবা বুকব্যথা
পরিশ্রমের ফলে অথবা স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে কষ্ট হলে তা ভাল্ব সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হার্ট মারমারের লক্ষণ হতে পারে। ভাল্ব স্টেনোসিস হচ্ছে ভাল্বের সংকুচিত ও আঁটসাঁট অবস্থা, যা সম্মুখস্থ রক্তপ্রবাহ কমিয়ে ফেলে বা সম্মুখস্থ রক্তপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ভাল্ব রিগারজিটেশন হচ্ছে এমন দশা যখন কোনো ভাল্ব সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয় না এবং বিপরীত দিকে বা পেছনের দিকে রক্তপ্রবাহ সৃষ্টি করে, এটি লিকি ভাল্ব নামেও পরিচিত।
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের কার্ডিওলজিস্ট প্যাট্রিক কলিয়ার বলেন, ‘হৃদযন্ত্রের মধ্যে ভাল্ব হচ্ছে দরজা যা এমনভাবে নকশা করা থাকে যেন একদিকে রক্তপ্রবাহ বজায় থাকে। কখনো কখনো এসব দরজা সঠিকভাবে বন্ধ হতে বা সম্পূর্ণরূপে খুলতে নাও পারে।’
* রক্তস্বল্পতা
আয়রনের ঘাটতি অথবা রক্তস্বল্পতা কোনো উপসর্গের চেয়েও মারাত্মক হতে পারে। রক্তস্বল্পতার মানে হলো আপনার শরীরের সকল টিস্যুতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে শরীরে লোহিত রক্তকণিকার অভাব। যদি আপনি অন্যান্য উপসর্গে ভুগেন এবং জানেন যে আপনি রক্তস্বল্পতাগ্রস্ত, তাহলে ডাক্তার দেখান যিনি হার্ট মারমার আছে কিনা নির্ণয় করতে পারেন।
* ফোলা
পেট ফোলার সম্ভাব্য অনেক কারণ আছে, কিন্তু শরীরের সর্বত্র ফোলা থাকাকে সতর্ক সংকেত হিসেবে ভাবা উচিত। ডা. ল্যাম্পার্ট বলেন, ‘কিছু লোকের গোড়ালি, পা অথবা পেট ফুলে যেতে পারে।’ হৃদপিণ্ডের অকার্যকর ভাল্বের কারণে সৃষ্ট দুর্বল রক্ত প্রবাহ কখনো কখনো অতিরিক্ত তরল পুঞ্জীভূত হওয়ার কারণ হতে পারে, সাধারণত এক্সট্রেমিটিতে (হাত বা পায়ের প্রান্তসীমা)। দুর্বল রক্ত প্রবাহ বদ্ধ ধমনীর লক্ষণও হতে পারে।
* থাইরয়েড সমস্যা
কখনো কখনো সমস্যাযুক্ত থাইরয়েড গ্ল্যান্ডকে কেন্দ্র করে হার্ট মারমার নির্ণয় করা যেতে পারে। ডা. কলিয়ার বলেন, ‘ওভারঅ্যাকটিভ থাইরয়েড হৃদযন্ত্রে অনিয়ন্ত্রিত রক্তপ্রবাহ সৃষ্টি করতে পারে।’
* প্রেগন্যান্সি
যখন আপনি প্রেগন্যান্ট থাকবেন, আপনার শরীরে রক্ত সরবরাহের ভলিউম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে নির্দোষ হার্ট মারমার বিকশিত হতে পারে। যদি ডাক্তার অন্য কোনো কারণ ধরতে না পারেন, প্রেগন্যান্সির পর এই হার্ট মারমার চলে যেতে পারে।
* ইনফেকশন
এন্ডোকার্ডাইটিস হচ্ছে হৃদপিণ্ড ও ভাল্বের ভেতরের স্তরের একটি ইনফেকশন, যা হার্ট মারমার সৃষ্টি করতে পারে। এটি সাধারণত শরীরের অন্যস্থান থেকে ব্যাকটেরিয়া (সাধারণত মুখ) রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে হৃদপিণ্ডে এসে বসবাস করলে হয়ে থাকে। ভালো মৌখিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন এবং পেরিওডোন্টাল ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে আপনার ডেন্টিস্টের কাছে নিয়মিত ভিজিট করুন।
* মাথাঘোরা
দ্রুত উঠে দাঁড়ালে সামান্য ভারসাম্যহীনতা অথবা খাবার খাওয়া বা পানীয় পান ছাড়া দীর্ঘসময় পথচলার পর মাথাঘোরা অনুভব করা হার্ট মারমারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে। ডা. কলিয়ার বলেন, ‘তীব্র ভাল্ব সমস্যার সঙ্গে জড়িত কিছু ব্যক্তির ব্ল্যাকআউট এপিসোড হতে পারে বা স্বল্পসময়ের জন্য চেতনা লোপ পেতে পারে।’
* নীল ত্বক
যদি আপনার ত্বকে কোনো নীলাভ ছোপ থাকে, বিশেষ করে ঠোঁট ও আঙুলের ডগার ওপর, তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। এটি হৃদযন্ত্রের কোনো সমস্যা নির্দেশ করতে পারে।
* ক্ষুধার ঘাটতি
যেসব শিশুরা ভালো মতো খায় না অথবা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে না, তাদের বিভিন্ন সমস্যা থাকতে পারে, যেমন- গ্রোথ হরমোনের ঘাটতি, কিন্তু এ সমস্যাটি হার্ট মারমারের লক্ষণও হতে পারে। মায়ো ক্লিনিকের মতে, ‘এটি নির্দোষ হার্ট মারমার হতে পারে যা সময়ের স্রোতে চলে যাবে, তবে একজন ডাক্তার কর্তৃক কোনো সম্ভাব্য জন্মগত হৃদরোগ বা হৃদবিকৃতি মূল্যায়ন হওয়া উচিত।’
তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট
Discussion about this post