ডা. এম এন ফারুক
শীতকালে গলার সমস্যা থেকে অনেক সময় কানের সমস্যা শুরু হয়। কান দিয়ে পুঁজও পড়ে। তবে এর চিকিৎসা কী? এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. এম এন ফারুক। বর্তমানে তিনি ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের ইএনটি সার্জারির বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
এক্ষেত্রে পরামর্শ হলো- ধূমপান করবেন না। ঠান্ডা জিনিস খাবেন না। আইসক্রিম খাবেন না। এরপরও যদি তার এটি হয়, কান দিয়ে তার পুঁজ পড়ে, তার মানে হলো পর্দাটা ছিদ্র হয়ে গেল। ছোট বাচ্চাদেরও হতে পারে। বড়দেরও হতে পারে। এখন বেশিরভাগ রোগী অস্ত্রোপচার করতে মানা করে। তখন আপনি বাধ্য তাকে কনজারভেটিভ চিকিৎসা দিতে। তাকে ওষুধপত্র দিতে হবে। তখন আপনার রোগীর প্রতি পরামর্শ , এই সর্দি কাশির ভেতর যাবেন না।তাকে আপনি রক্ষা করবেন যেন শীত না লাগে। সে যেন আইসক্রিম না খায় এবং খুব ধুলাবালিতে সে যেন না যায়। আর তাকে একটি অ্যান্টিবায়োটিক দিতেই হবে। কারণ, যেহেতু এটি জীবাণু দিয়ে আক্রান্ত। একটি অ্যান্টি হিসটামিন দিতে হবে। এখন অ্যান্টি হিসটামিনগুলো অনেক ধরনের হয়। আগে দেখা যেত একটি হিসটাসিন খেলে আপনি সারাদিন ঘুমাতেন। আজকাল সেটা হয় না।
তবে এখন কিছু ওষুধ আছে, এগুলো খেলে ঘুম হবে না। কিন্তু আপনার সর্দি কাশি বন্ধ হয়ে যাবে। বন্ধ হয়ে গেলে আপনি যদি দেখেন যে তারপরও পুঁজ পড়ছে, তখন আপনি কানকে পরিষ্কার করে দিয়ে, তাকে একটি কানের ড্রপ দিতে হবে। এর মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড থাকে। তাকে এক মাস পর্যন্ত এই ওষুধটা দিতে হবে। সবচেয়ে বিপদ হলো এই যখনই মধ্যকর্ণ সংক্রমিত হয়,তখন সাথে আবার ফাঙ্গাস সংক্রমণ হতে থাকে। তখন তাকে অ্যান্টিফাঙ্গাল যে লোকাল ক্রিমগুলো থাকে, সেই ক্রিম দিনে তিনবার লাগাবেন। এটাও এক মাস।
যখন আস্তে আস্তে জায়গাটি শুষ্ক হয়ে যাবে। তখন তাকে আপনি জিজ্ঞেস করবেন, ভাই আপনার কান কি ছিদ্র অবস্থায় থাকবে? যদি এমনই রাখতে চান আপনি ৪০ ভাগ কম শুনবেন। একটি স্বাভাবিক লোকের চেয়ে আপনি ৪০ ভাগ কম শুনতে পাবেন। কিন্তু আপনি একেবারে বধির হয়ে যাবেন না। ৬০ ভাগ শুনতে পাবেন। তবে আবার যখন সর্দি কাশি হবে আবার একই সমস্যা হবে। তাহলে আবার আপনাকে একইভাবে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।
অথবা আপনার অস্ত্রোপচার যদি করে দিই পর্দা তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি যেই জায়গাটা সংক্রমণটা থাকে, সেটা আমরা ফেলে দেব। এটি করে দিয়ে নতুন পর্দা লাগিয়ে দেব। এতে আপনি প্রায় স্বাভাবিক শুনতে পাবেন। সে যদি এটিও করতে না চায় এবং তার বধিরতা যদি খুব বেশি বেড়ে যায়, যে সে স্বাভাবিক কাজ করতে পারছে না, তখন আপনারা তাকে হেয়ার রিংয়ের কথা বলবেন। এটি দিলে সে একদম স্বাভাবিক শুনতে পাবে। কিন্তু তার ওই একই অবস্থার জন্য আবার পুঁজ পড়তে পারে। এটা একটা সামাজিক সমস্যা।
আরেকটি জিনিস হলো যে গোসল করার সময় যেন কোনোভাবে পানি না যায় কানে। কানে পানি যাবেই আপনি যেভাবে গোসল করেন। এখন কান আটকে দেওয়ার জন্য এক ধরনের প্লাক পাওয়া যায়, ওটা আটকে দেবেন। ওটা আবার গোসল করার পর আপনি খুলে রেখে দেবেন। অথবা এক টুকরো তুলার মধ্যে জলপাইয়ের তেল দিয়ে কানটা বন্ধ করে গোসল করতে হবে।
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সে মাঠে খেলবেই, সে ঘেমে যাবেই। ঘেমে গেলে ঠান্ডা পানি খাবে বা আইসক্রিম খাবে। তখনই তার গলায় সমস্যা হবে। গলায় দুটো সমস্যা বেশি হয়। একটি হলো ফ্যারিংজাইটিস, আর টনসিলে প্রদাহ হয়, এডিনয়েডগুলো তখন বড় হয়ে যায়। এমন অবস্থায় শুরুতেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন হয়। আমাদের দেশে কানের পর্দায় ছিদ্র আছে এমন রোগ ৪০ ভাগ।
Discussion about this post