ডা. মুজাহিদুল ইসলাম
যখন শরীরের কোনো অংশ ফুলে যায়, সাধারণত সেখানে পুঁজ জমা হয়। এটি অ্যাবসেস বা ফোড়া। ত্বকে যখন ফোড়া হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই তা পেকে গিয়ে সাদা হয়ে আসে। দাঁতের গোড়ায়ও এই অ্যাবসেস বা ফোড়া হতে পারে।
সাধারণত আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত কোনো দাঁতের গোড়ায় এই ফোড়া দেখা যায়। তবে এটা এক দিনে বা হঠাৎ করে হয় না। এর জন্য অনেক দিন সময় লাগে। সাধারণত দাঁত ক্ষয়রোগ বা ক্যারিজে আক্রান্ত হওয়ার পরও যথাযথ চিকিৎসা না করলে বা যথাসময়ে চিকিৎসা না করালে, আঘাতে দাঁতের শিকড় বা শিকড়ের অংশবিশেষ ভেঙে গেলে, যথাযথভাবে দাঁত পরিষ্কার না করলে এ ধরনের ইনফেকশন হয়।
অ্যাবসেস হলে ওই স্থানটি ফুলে যায়, ব্যথা হয়। কখনো কখনো ফোলা স্থান থেকে পুঁজও বের হয়।
সাধারণত দাঁতে দুই ধরনের অ্যাবসেস বা ফোড়া দেখা যায়। পেরিএপিকাল অ্যাবসেস ও পেরিওডন্টাল অ্যাবসেস। পেরিএপিকাল অ্যাবসেসে দাঁতের শিকড়ের চারপাশে ফুলে যায়, তীব্র ব্যথা হয় এবং দাঁতের চিকিৎসা (রুট ক্যানাল বা দাঁত তুলে ফেলা ইত্যাদি) না করা পর্যন্ত ইনফেকশন ভালো হয় না।
অন্যদিকে পেরিওডন্টাল অ্যাবসেস দাঁতের চারপাশে থাকা গাম বা মাংসপেশির ইনফেকশন। এটি সহজেই চিকিৎসাযোগ্য।
যেভাবে অ্যাবসেস তৈরি হয়
পেরিওডন্টাল অ্যাবসেসের ক্ষেত্রে প্রথমে দাঁত ও মাড়ির মাঝে খাদ্যকণা জমে। এগুলো পরিষ্কার না করা হলে তা একটা সময়ে পচে যায়। এ সময় এখানে লাখ লাখ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে। বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া খুব দ্রুত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেয়। অন্যদিকে পেরিএপিকাল অ্যাবসেস সাধারণত শুরু হয় দাঁতের ক্যারিজ বা ক্ষয়রোগ থেকে। ক্যারিজ যখন দাঁতের এনামেল ও ডেন্টিন ক্ষয় করে দন্তমজ্জা বা পাল্পে প্রবেশ করে তখন প্রথমে দাঁতে ব্যথা হয়। এ সময় ক্যারিজ বা ক্ষয়রোগের কারণ যে ব্যাকটেরিয়াগুলো তারাও দ্রুত পাল্পে প্রবেশ করে এবং ধীরে ধীরে পাল্প পচিয়ে ফেলে। এই পচে যাওয়া পাল্প বা পাল্পপুঁজ তখন দাঁতের শিকড়ের ভেতরে থাকা নালি দিয়ে গোড়ায় চলে যায়। সেখানে থাকা অস্থিকেও ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে এবং সেখানেও পচন শুরু হয়। দাঁত যেহেতু হাড়ের ভেতর প্রতিস্থাপিত থাকে, তাই দাঁতের গোড়ায় পচন বা পুঁজ হওয়া মানে হাড়েও ইনফেকশন ছড়িয়ে যাওয়া। ধীরে ধীরে দাঁতের গোড়ার চারপাশে থাকা হাড় যখন পচে গিয়ে যখন তা নরম মাংসে আসে তখনই আমরা ওই স্থানটি ফুলে যেতে দেখি।
যেহেতু ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে অ্যাবসেস হয়, তাই উভয় ধরনের অ্যাবসেসেই ডেন্টাল চিকিৎসা ছাড়াও অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের প্রয়োজন হয়। তবে পেরিওডন্টাল অ্যাবসেস পেরিএপিকাল অ্যাবসেসের তুলনায় কম বিপজ্জনক। পেরিএপিকাল অ্যাবসেস যথাসময়ে চিকিৎসা না করলে, যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ না করলে আশপাশের স্থানে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং লাডউইগ অ্যানজাইনার মতো কিছু রোগের কারণ হয়। লাডউইগ অ্যানজাইনা এমন একটি রোগ, যেখানে গলার চারপাশে আকস্মিক পুঁজ জমে ফুলে যায় এবং রোগী নিঃশ্বাস নিতে পারে না। জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
অনেক সময় চিকিৎসক অ্যাবসেস বা ফুলে যাওয়া স্থান থেকে জমে থাকা পুঁজ বের করে তারপর মূল চিকিৎসায় যান। জমে থাকা পুঁজ বের করলে ব্যথা কমে আসে। কখনো কখনো কিছু অ্যাবসেস বারবার হয় এবং অ্যান্টিবায়োটিকেও ভালো হতে চায় না। এসব ক্ষেত্রে ওই অ্যাবসেস থেকে পুঁজ সংগ্রহ করে তা কালচার পরীক্ষায় পাঠানো হয়। কালচার পরীক্ষার ফল দেখে পরবর্তী চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ডেন্টাল সার্জন, বিএসএমএমইউ, ঢাকা।
Discussion about this post