হার্টবিট ডেস্ক
দাঁতের মাড়ির ইনফেকশন, গর্ভাবস্থা, ভিটামিনের ঘাটতি, স্কার্ভি, লিউকেমিয়া, মৌখিক স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলা বা অভ্যন্তরীণ কোন ইনফেকশনের জন্য ব্লিডিং গাম বা দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ার সমস্যাটি হয়। একে চিকিত্সা বিজ্ঞানের ভাষায় জিঞ্জিভাইটিস বা পেরিওডন্টাইটিস বলে। সাধারণত দাঁত ব্রাশ করার সময় বা থুতু ফেলার সময় বা শক্ত কিছু খাওয়ার সময় মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে। মাড়ির রক্ত পড়ার সমস্যাটি প্রাথমিক ভাবে গুরুত্ব সহকারে না নিলে মাড়ির প্রদাহ বা জিঞ্জিভাইটিস হতে পারে।
প্রাথমিক পর্যায়ে মাড়ির রক্ত পড়ার সমস্যাটি প্রতিকারে ঘরোয়া কিছু উপায় অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখেঃ
১. সাইট্রাস ফল: দাঁতের মাড়ির রক্ত পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে ভিটামিন সি এর ঘাটতি। টক ফল লেবু ও কমলা এবং সবজি বিশেষ করে ব্রোকলি ও বাঁধাকপি পর্যাপ্ত ভিটামিন সি প্রদান করে মাড়ির রক্ত পড়া প্রতিরোধ করতে পারে।
২. দুধ: দাঁত ও মাড়িকে শক্তিশালী করার জন্য ক্যালসিয়াম প্রয়োজন এবং দুধে উচ্চ মাত্রার ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন থাকে। তাই মাড়ির রক্ত পড়া রোধে নিয়মিত দুধ পান করুন।
৩. ধূমপান বন্ধ করুন: ধূমপানের ফলে মুখে মুক্ত অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয় ফলে কিছু ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। তাই আপনার মুখকে ব্যাকটেরিয়া মুক্ত রাখার জন্য ধূমপান বাদ দিন। American Academy of Periodontology এর মতে, টোবাকোর ধোঁয়াতে যে টক্সিন থাকে তা মাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহে বাঁধা প্রদান করে ও প্রদাহ সৃষ্টিতে সাহায্য করে। ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করাটা কঠিন কিন্তু যদি আপনি আপনার মুখের ও সার্বিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষা চান তাহলে এই অভ্যাস ত্যাগ করাটা গুরুত্বপূর্ণ।
৪. কাঁচা সবজি: মাড়ির রক্ত সঞ্চালন ও দাঁত পরিষ্কার রাখার জন্য কাঁচা সবজি চিবানো ভালো। তাই প্রতিদিন কিছু কাঁচা সবজি খান।
৫. বেকিং সোডা: মুখের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে বেকিং সোডা। হাতের আঙ্গুলে বেকিং সোডা নিয়ে মাড়িতে লাগান।
৬. লবঙ্গ: দাঁতের সকল ধরণের সমস্যা বিশেষ করে মাড়ির রক্ত পড়ার সমস্যায় সবচেয়ে সহজ ও প্রাচীন পদ্ধতি। লবঙ্গ মুখে নিয়ে চুষতে পারেন বা লবঙ্গের তেল দিয়ে মাড়িতে ম্যাসাজ করুন।
৭. ভুঁই তুলসি ও মেন্থল তেল: মেন্থল তেল ও ভুঁই তুলসির তেল দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে মুখ পরিষ্কার ও সতেজ থাকে।
৮. স্যালাইন: ব্রাশ করার পরে উষ্ণ গরম জলে এক চিমটি লবণ বা ১ চামচ স্যালাইন মিশিয়ে কুলকুচি করলে মাড়ির রক্ত পড়া বন্ধ হয়। এতে ব্যথা ও ফোলা কমে।
৯. ফ্যাটি ফুড বর্জন করুন: চর্বি যুক্ত ও মশলাদার খাবার দাঁতের ছিদ্র তৈরিতে সাহায্য করে এবং অস্বাস্থ্যকর জীবাণুর উত্স। যার ফলে পর্যায়ক্রমে ব্লিডিং গাম এমনকি জিঞ্জিভাইটিসও হতে পারে। তাই ব্লিডিং গামের সমস্যায় ভুগলে যতটুকু সম্ভব চর্বি জাতীয় খাবার বর্জন করুন। University of Lowa Health Care এর মতে, ব্রাশ করা ও ফ্লস ব্যবহার করলে দাঁতে ময়লা জমে না।
এছাড়াও নিয়মিত দন্ত চিকিত্সকের কাছে গিয়ে দাঁত পরিষ্কার রাখা উচিত্। মুখের যত্ন স্বাস্থ্যকরভাবে নিলে দাঁতের মাড়ির রক্ত বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি প্যারিওডন্টিস এবং জিঞ্জিভাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা রোধ করা যায়।
মনে রাখতে হবে যে, মাড়ির রোগ সংক্রমিত হতে পারে। তাই যাদের এই সমস্যা আছে, তাদের ব্যবহৃত জিনিস যেমন- ব্রাশ, জলের গ্লাস ইত্যাদি আলাদা রাখুন। তাহলে দাঁত ও মাড়ির সমস্যাগুলো থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
Discussion about this post