বিভিন্ন প্রকার রোগের মত মানসিক রোগও যেকোনো বয়সের মানুষের হতে পারে।
অনেক রোগের মত মানসিক রোগেরও চিকিৎসা আছে। সময়মত সঠিক চিকিৎসা ও পরামর্শ নিলে এ রোগ নিরাময় হয় এবং পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীর কষ্ট দূর হয়।
রোগের কারণ:
১। দ্বন্দবহুল কলহময় পারিবারিক অশান্তি, সামাজিক নিরাপত্তাহিনতা প্রভৃতি কারণে মানসিক রোগ হতে পারে।
২। ব্যক্তিগত মানসিক সমস্যার বিভিন্ন ধরনের দুশ্চিন্তা এবং দ্বিধা দ্বন্দ থেকে মানসিক রোগের উৎপত্তি হতে পারে।
৩। বংশগত কারণেও এই রোগ হতে পারে।
৪। শারীরিক নানাবিদ সমস্যার কারণেও এই রোগ হতে পারে।
রোগের লক্ষন সমূহ:
১। চঞ্চলতা, প্রলাপ বকা ও আক্রমনাতক আচরণ প্রভৃতি উপসর্গসহ জিনিসপত্রের ক্ষতিসাধন বা ভাঙচুর করা।
২। চুপ হয়ে যায়, ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করে না, একা একা বির বির করে কথা বলে কিংবা অকারণে নিজে নিজে হাসে।
৩। বিষণ্ণ ভাব, কিছু ভাল না লাগা, অস্থিরতা, অনিদ্রা
খাবার ও চিকিৎসা:
১। একজন মানসিক রোগের অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে এবং প্রয়োজনে মানুষিক হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হবে।
২। একজন মানসিক রোগীর ভাল হতে হলে অবশ্যই পারিবারের সহযোগিতার প্রয়োজন।
৩। স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই উচিত ঝগড়া বিবাধ বা মনোমালিন্য না করা।
প্রচণ্ড উন্মাদ রোগ:
এই অবস্থায় রোগীর শরীর ও মন মোটেই সুস্থ থাকে না। লেখা পড়া কাজ কর্ম কোনো কিছুতেই মন বসে না। রোগী অন্যমনস্ক হয়ে যায়, কারণে অকারণে হাসে বা কাঁদে। নিজেকে সর্বদা বড় মনে করে। এই অবস্থায় রোগীর চরম পাগলামীর প্রকাশ ঘটে।
রোগের কারণ:
১। পারিবারিক অশান্তি, সামাজিক নিরাপত্তাহিনতা প্রভৃতি কারণে এই রোগ হতে পারে।
২। ব্যক্তিগত মানসিক সমস্যার বিভিন্ন ধরনের দুশ্চিন্তা এবং দ্বিধা ঘন্দ থেকে এই রোগের উৎপত্তি হতে পারে।
৩। বংশগত কারণেও এই রোগ হতে পারে।
৪। শারীরিক অসুস্থত।
৫। রোগী কখনও হাসে আবার কখনও কাঁদে।
৬। চিন্তা ধারা খুব তাড়াতাড়ি চলে। এক বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে হঠাৎ চলে যায়।
৭। আত্মহত্যার প্রবণতা থাকে না।
৮। ঘুম হয় তবে ক্ষণস্থায়ী।
৯। অস্থিরতা বেড়ে যায়।
১০। যৌন ইচ্ছা থাকে না, কিন্তু শক্তি কম হয়।
খাবার ও চিকিৎসা:
১। একজন মানসিক রোগীর অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে এবং প্রয়োজনে মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হবে।
২। একজন মানসিক রোগীর ভাল হতে হলে অবশ্যই পারিবারের সহযোগিতার প্রয়োজন।
৩। স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই উচিত ঝগড়া বিবাধ মনোমালিন্য না করা।
মানসিক অবসাদ:
এটি একটি মানসিক রোগ। নানা মানসিক আঘাতের পর বা অনেক সময় আপনা আপনি এই রোগ হয়ে থাকে। এই রোগটা খুব সিরিয়াস একটা রোগ যা মানুষকে ধীরে ধীরে শেষ করে দিতে পারে।
রোগের কারণ:
১। সাধারণত অনেক পরিশ্রমের পর সফল না হলে মানুষিক অবসাদ বা ডিপ্রেশন দেখা দিতে পারে।
২। কোনো মানসিক আঘাতের ফলে এই রোগ হতে পারে।
৩। প্রেমে ব্যার্থ হলে এই রোগ হতে পারে।
৪। অতিরিক্ত আবেগপ্রবন মানুষ সামান্য কষ্ট পেলেও এই সমস্যা হতে পারে।
রোগের লক্ষন সমূহ:
১। সব কাজেই নিজেকে দোষী মনে করে।
২। সবসময় মন মরা ভাব থাকে।
৩। মানুষের মধ্যে না থেকে একা থাকতে ভালবাসে।
৪। সামান্য কারণকে বড় করে দেখে, অল্পতেই হতাশ হয়ে পড়ে।
৫। কম কথা বলে।
৬। আত্মহত্যার প্রবল বাসন।
চিকিৎসা:
১। এই রোগের চিকিৎসা করা খুব জরুরী তাই একজন মানসিক রোগের অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে।
২। ব্যর্থতার সময় পরিবার বা কাছের মানুষকে পাশে দাঁড়াতে হবে এবং সান্তনা দিতে হবে।
৩। সবধরনের খাবার নিয়মিত খেতে দিতে হবে।
অনিদ্রা বা নিদ্রাহীনতা:
সব মানুষের সুস্থতার জন্য ঘুম একটি অপরিহার্য উপাদান। পরিমিত ঘুম না হওয়াকে অনিদ্রা বা নিদ্রাহীনতা বলে। এই সমস্যা যেকোনো বয়সের লোকেরই হতে পারে। নানাবিধ কারণে এই সমস্যা হতে পারে।
রোগের কারণ:
১। অতিরিক্ত চিন্তা বা উন্মাদনা ও উত্তেজনা।
২। মানুষিক রোগ।
৩। ডিপ্রেশন বা মানসিক অবসাদ।
৪। দেহের কোনো রোগের কারণেও (ব্যথা, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি) নিদ্রাহীনতা হতে পারে।
রোগের লক্ষন সমূহ:
১। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকতে হয় ঘুম আসেনা। ঘুমানোর চেষ্টা করলেও ঘুম আসেনা।
২। স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যায়।
৩। মেজাজ খিটখিটে হয়।
৪। খাবারের প্রতি রুচি থাকে না।
৫। সর্বদা শারীরিক দুর্বলতা অনুভূত হয়।
চিকিৎসা:
১। একজন মানসিক রোগের অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে।
২। অ্যালকোহল, ধূমপান ও মাদক সেবন পরিহার করতে হবে।
৩। চা বা কফি খাওয়া যাবে না।
৪। উত্তেজনা বা উদ্বেগের কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
৫। ঘম আসেনা কেন এ নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা যাবে না।
মৃগীরোগ:
হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়াতার সঙ্গে হাত, পা ও সারা শরীরের মাংসপেশী সজোরে সংকোচিত করার নাম এপিলেপসি বা মৃগীরোগ। এই রোগ অল্প বয়সে শুরু হয়।
রোগের কারণ:
এই রোগের প্রকৃত কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এটি একটি দীর্ঘকালের স্থায়ী ব্যাধি।
১। এ রোগের আক্রমণ কালে কেউ কেউ চিৎকার করে আবার কেউ কেউ না করে মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায়।
২। সমস্ত শরীর খিচে এবং পরে শক্ত হয়ে যায়।
৩। পা শক্ত হয়ে পড়ে, ঘাড় একদিকে কাত হয়ে যায়।
৪। দেহ শক্ত হয়ে পড়ে, এই অবস্থায় ২০/৩০ মিনিট থাকার পর জ্ঞান হারায়।
খাবার ও চিকিৎসা:
১। একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে।
২। সবধরনের স্বাভাবিক খাবার নিয়মিত খেতে দিতে হবে।
৩। নিয়মিত ওষুধ খেয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৪। রোগীকে পানি ও চলাচলে সাবধান থাকতে হবে।
৫। রোগীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা উচিত না।
Discussion about this post