প্রায়ই আমরা শুনে থাকি অমুকের ইউরিন ইনফেকশন, আসলে সমস্যাটা কোথায়? এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আগে কখনো সাজগোজে লেখা হয় নি। কিন্তু এটা খুবই দরকার ছিল। মেয়েদের পুরুষের তুলনায় এই রোগ বেশি হয়। নব্য বিবাহিত মহিলাদের এটি হওয়ার চান্স আরও বেশি। বিয়ের পর মূত্রনালি প্রথম বাহ্যিক সংস্পর্শে আসে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে মিলন না হলে অনেক সময়ই জীবাণু মূত্রনালিতে প্রবেশের সুযোগ পায়। পুরুষের মূত্রনালি পায়ুপথ থেকে বেশ খানিকটা দূরে থাকে, কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে কাছাকাছি অবস্থান করে। তাছাড়া মেয়েদের প্রসাবে নালি পুরুষ থেকে দৈর্ঘ্যে কম। তাই মেয়েদের প্রসাবে নালিতে ইনফেকশন হওয়ার মাত্রা পুরুষ থেকে অনেক বেশি।
ছেলে মেয়ে উভয়ের প্রস্রাব নালিতে ইনফেকশনের কিছু কারণ
১. মেয়েদের মেনোপজের ফলে ইস্ট্রোজেন লেভেল কমে যায়। তখন জীবাণু বিরোধী ভেজাইনাল ফ্লরা ও (যোনিপথে অবস্থানকারী ভালো ব্যাকটেরিয়া) কমে যায় এবং স্বাভাবিক ভাবেই ইনফেশনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- ২. বিভিন্ন অপারেশনের আগে বা পরে ক্যাথেটার ব্যবহার করা হয়। ক্যাথেটার লাগানোর ফলে প্রসাব স্বাভাবিক নিয়মে স্রোতের মত বের হয়ে যেতে পারে না। কিছুটা জমাও থাকে মূত্র থলিতে। প্রসাবে অবস্থানকারী ব্যাক্টেরিয়া তাই বেরিয়ে যেতে পারে না। সুতরাং ক্যাথেটারের ব্যবহার কমাতে হবে, নিজে প্রস্রাব করার মত পরিস্থিতি তৈরি হলে অপারেশনের পর খুলে ফেলতে হবে। ৩ সপ্তাহের বেশি এক ক্যাথেটার রাখা যাবে না।
৩. ডায়াবেটিস, খৎনা না করা থাকলে, কোষ্ঠকাঠিন্য বা প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হয়ে গেলে ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি অনেক গুণ বেড়ে যায়।
এই তো গেল কারণের বিবরণ। কিন্তু কোন ব্যাকটেরিয়ার ফলে ইনফেকশন মূত্রনালিতে বেশি হয়? E. coli নামক একটি ব্যাকটেরিয়া (অন্ত্রে বসবাসকারী) যা পায়খানার সাথে বের হয়। মেয়েদের পায়ুপথ প্রসাবনালির কাছে এবং মেয়েরাই প্রথম শ্রেণির ভুক্তভোগী।
ইউরিন ইনফেকশন এর শ্রেণিবিভাগ
urinary tract বলতে শুধু নিচের অংশের কথাই বোঝায় না। কিডনি থেকে শুরু করে শেষ অংশ পর্যন্ত হতে পারে। এটি কিডনির কাছাকাছি হলে pyelonephritis বলে। মুত্রথলিতে হলে cystitis, আর মূত্রনালিতে হলে urethritis বলা হয়। এ কারণেই শিরোনামে শুধু মূত্রনালির ইনফেকশন না বলে অন্য কিছু বলা হয়েছে। urinary tract infection কে তাই upper tract (pyelonephritis) and lower tract (cystitis and urethritis) এ ভাগ করা যায়।
ইউরিন ইনফেকশন এর লক্ষণ সমূহ
- প্রসাবে জ্বালা পোড়া একটি প্রধান লক্ষণ, সুস্থ সবল মহিলাদের ৬/৭ দিন এই লক্ষণ থাকে।
- ঘন ঘন প্রসাব হওয়া।
- কারো কারো তলপেটে ব্যাথা।
- জ্বর, বমি বা বমি বমি ভাব।
- প্রসাবে রক্ত বা পুঁজ আসা (খুব কম ক্ষেত্রে)।
- আবার অনেক ক্ষেত্রে কোন লক্ষণই প্রকাশ পায় না।
বাচ্চাদের ইউরিন ইনফেকশন
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র জ্বরই লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে। এক বছরের নিচের বাচ্চারা খেতে পারে না, বেশি ঘুমায়, বমি করে অথবা জন্ডিসের লক্ষণ দেখা যায়। একটু বেশি বয়সের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে প্রসাব আটকে রাখতে না পারা ইনফেকশনের লক্ষণ হিসেবে আসে।
বয়স্ক মানুষদের মধ্যে লক্ষণগুলো এত সুন্দর ভাবে ফুটে উঠে না, যার কারণে অনেক সময়ই বোঝা যায় না। কিন্তু মেনোপজে উপনীত মহিলাদের, অথবা যারা ক্যাথেটার ব্যবহার করছেন, এমনকি অন্যান্য রিস্ক ফ্যাক্টর থাকলে নিয়মিত টেস্ট করলে রোগ ধরা পড়ে যাবে।
ইউরিন ইনফেকশন নির্ণয়
লক্ষণ সমূহ যদি মিলে যায় বা রিস্ক ফ্যাক্টর থাকে তবে টেস্ট করতে হবে। urine analysis ( প্রসাবে নাইট্রেট , লিউকসাইট এস্টারেজ , শ্বেত রক্ত কণিকার উপস্থিতি ), urine microscopy ( লোহিত ও শ্বেত রক্ত কণিকা বা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির জন্য ), urine culture and sensitivity test (একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জীবাণু অপেক্ষা বেশি হলে, টেস্ট এর রিপোর্ট পজিটিভ আসে এবং কোন জীবাণুর সংক্রমণে রোগ টি হয়েছে টা জানা যায় । ) করে সেই অনুযায়ী ওষুধপত্র খেলেই সেরে যাবে।
ইউরিন ইনফেকশন হলে চিকিৎসা
আপনার যদি মনে হয় আপনি এই সমস্যায় ভুগছেন তবে জলদি urologist, gynaecologist বা nephrologist এর শরণাপন্ন হন। আপনার বয়স, রোগের তীব্রতা ও রোগের জন্যে দায়ী জীবাণু অনুযায়ী একেক জনকে একেক পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। তবে প্রচুর পরিমাণে পানি খেলে এই রোগ হওয়ার চান্স কমে যাবে এবং হলেও তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে। অতিরিক্ত পানি খাওয়ার দরকার নেই। প্রসাবের সাধারণ রং খড়ের ন্যায় , সাদা নয় । যত টুকু পানি খেলে প্রস্রাব খড়ের মত হবে, ততটুকুই যথেষ্ট । তবে সাধারণত ২- ২.৫ লিটার পানি পান করা ভালো। মনে রাখবেন, অনেক সময় প্রস্রাব আটকে রেখে আপনি ব্যাকটেরিয়াকে একটি আবাসস্থল তৈরির সুযোগ করে দেন, যা ক্ষতিকারক। নিয়ম মেনে চলে সুস্থ থাকুন, আশেপাশের মানুষকেও সচেতন করুন।
Discussion about this post