ডা. ইন্দ্রজিত প্রসাদ |
অনেক হরমোন মেয়েদের শরীরে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। প্রথমেই চলে আসে থাইরয়েড হরমোন। গলার সামনে প্রজাপতির মতো অঙ্গ থাইরক্সিন নামের হরমোন তৈরি করে। এটি কখনও কখনও বেশি কখনওবা কম তৈরি হয়। কম তৈরি হলে হাইপো থাইরয়েড ডিজিস হয়। এ রোগীদের চুল পরে যেতে থাকে, গলার স্বর কর্কশ হয়ে যায়, মোটা হয়ে যায়, মাসিক অনিয়ন্ত্রিত হয়। চামড়া ব্যথা হয় এবং গর্ভধারণে জটিলতা হয়। থাইরয়েড হরমোন অতিরিক্ত তৈরি হলে তাকে হাইপার থাইরয়েড ডিজিস বলে। একে হাইরোটনিক্স জোসিসও বলে। জটিলতা হিসেবে চোখ বড় হয়ে যায়। ঘাম হয়, স্বাস্থ্য খারাপ হয়। মাসিক বন্ধ হয়ে যায়, গর্ভবতী হলে মিসক্যারিজ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ছেলেদের থেকে মেয়েদের থাইরয়েড হরমোনের আশঙ্কা ১০ গুণ বেশি। মেয়েদের মুখ, বুক, পেটে অতিরিক্ত লোম বা হারসুজিম, মুখে ব্রণ, বগলে বা ঘাড়ে কালো দাগ তৈরি হয়। এ ধরনের সমস্যা নিয়ে রোগীরা চিকিৎসকের কাছে আসে। এ মহিলাদের পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম থাকে। এ রোগীদের ভবিষ্যতে ব্লাড প্রেসার ও ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। রক্তের কোলস্টেরল বেড়ে যায়, মুখের ব্রণের কারণে মেয়েরা বিষণœতায় ভোগে। অনেক মেয়েরা মুখে, বুকে লোমের জন্য সুইসাইড পর্যন্ত করে। বাচ্চা হচ্ছে না, এ অভিযোগ নিয়ে রোগীরা চিকিৎসকের কাছে আসে। এ রোগীদের প্রশ্ন করণীয় হচ্ছে শরীরের ওজন কমানো। যার ওজন বেশি আছে তার ৫০ ভাগ ওজন কমাতে হবে শারীরিক ব্যায়াম ও খাবার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে। বাকি ৫০ ভাগ হচ্ছে ওষুধের মাধ্যমে। প্রোলেকটিন নামক হরমোন যা মস্তিষ্কে পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। এ হরমোনের মাত্রার ভারসাম্যহীনতা থাকলে মাসিকে জ্বালাপোড়া হয়। বাচ্চা হতে চায় না, বিবাহিত মেয়েদের বুক থেকে দুধ নিঃসৃত হয়। এটি ওষুধ ব্যবহারের কারণ বা মস্তিষ্কের টিউমারের কারণে হয়। আরেকটি রোগ হচ্ছে কুমিং সিনড্রোম। শরীরে অতিরিক্ত স্টেরয়েড ব্যবহার করা বা কটিসল ব্যবহার থেকে চামড়া পাতলা হয়ে এ রোগ হয়। হাড় নরম হয়ে পড়ে গিয়ে হাড় ভেঙে যায় এবং কুনিং সিনড্রোম থেকে ডায়াবেটিস, বøাড প্রেসার রক্তের কোলস্টেরল বেড়ে যায়। হার্টের সমস্যা পর্যন্ত হয়। দুঃখের বিষয় হচ্ছে এই যে, অতিরিক্ত কটিসল হরমোন দেহে তৈরি হচ্ছে বা রোগী নিজের ইচ্ছায় ওষুধের দোকান থেকে দীর্ঘদিন ব্যবহার করার ফলে হয়। চর্মরোগ, ব্যথা বা শ্বাসকষ্টের জন্য প্রেসক্রিপশন ছাড়া স্টেরয়েড মলম বা ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহার থেকেও কুনিং সিনড্রোম হয়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়। মাসিক বন্ধ হওয়ার পর বা মেনোপোজে মাথা ও শরীর গরম হয়ে যায়। হাত-পা জ্বালাপোড়া করে, মেজাজ খারাপ থাকে বা ইরেটিবিলিটি হয় ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যাওয়ার কারণে হয়। একে মেনোপোজাল সিনড্রোম বলে। সঠিক নিয়মে হরমোন ৫-১০ বছর পর্যন্ত গ্রহণ করলে রোগী ভালো থাকে। তবে ৫-৬ মাস পরপর কিছু পরীক্ষা করতে হয়। গ্রোথ হরমোন অত্যাধিক তৈরি হলে হাত-পা, শরীর অস্বাভাবিকভাবে লম্বা হয়ে যায়। গ্রোথ হরমোন কম হলে বাচ্চা খাটো হয়ে যায়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে ও গ্রোথ হরমোন প্রয়োগ করলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। অভিভাবকরা মেয়েদের বিয়ের বয়স হলে তাদের খাটো হওয়ার চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের কাছে আসেন। বয়ঃসন্ধিক্ষণ পার হয়ে গেলে চিকিৎসার আর সুযোগ থাকে না। তাই যখন লক্ষ করা যায় স্কুলের বন্ধুদের চেয়ে বা ভাই-বোনদের থেকে মেয়েটি খাটো হচ্ছে তখনই চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা উচিত। লেখক : সহযোগী অধ্যাপক হরমোন রোগ বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। |
Discussion about this post