পাকস্থলী
পাকস্থলী হলো মানুষের এবং অন্য বহু প্রাণীর গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টের একটি পেশি, ফাঁকা অঙ্গ, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি ইনভারট্রেট্রেটসও রয়েছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পাচক অঙ্গ হিসেবে কাজ করে। এটি এনজাইম এবং হাইড্রোক্লোরিক এসিডের কারণে রাসায়নিক বিচ্ছেদ ঘটায়।
পাকস্থলী (stomach) মানবদেহে পরিপাকতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা অন্ননালি ও ক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্যে অবস্থিত। এটি উদর গহ্বরের বাম পাশে উপর দিকে থাকে। খাদ্য পরিপাক প্রক্রিয়া প্রধানত পাকস্থলীতে শুরু হয়। বিশেষ করে আমিষজাতীয় খাদ্যের পরিপাকে পাকস্থলীর ভূমিকা প্রধান। সাধারণত শর্করা এবং স্নেহজাতীয় খাদ্য পাকস্থলীতে পরিপাক হয় না। এটি খাদ্য হজমে সহায়তা করার জন্য হজম এনজাইম এবং গ্যাস্ট্রিক এসিডকে গোপন করে। পাইলোরিক স্ফিংক্টর আংশিকভাবে হজম হওয়া খাদ্য এর পেট থেকে ডুওডেনামের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করে যেখানে পেরিস্টালসিসটি এটি অন্ত্রের বাকি অংশগুলোর মধ্য দিয়ে যেতে সাহায্য করে।
পাকস্থলীর গঠন: অন্ননালি ও ডুওডেনামের মাঝখানে পাকস্থলী একটি থলির মতো অঙ্গ। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার। এটি উদরীয় গহ্বরের উপরের বামদিকে থাকে। এর উপর প্রান্ত ডায়াফ্রামের বিপরীতে থাকে। পাকস্থলীর পিছনে অগ্নাশয় আছে। প্রাচীর পুরু ও পেশিবহুল। পাকস্থলীতে দুটি স্ফিংক্টার থেকে-অন্ননালি এবং পাইলরিক। পাকস্থলী প্যারাসিমপ্যাথেটিক ও অর্থোসিমপ্যাথেটিক পেস্নক্সাস দিয়ে আবদ্ধ থাকে।
প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে বিশ্রামরত, প্রায় খালি অবস্থায় পাকস্থলীর আয়তন ৪৫ থেকে ৭৫ মিলিলিটার। যেহেতু এটি বর্ধনশীল অঙ্গ, এটি প্রায় এক লিটার খাদ্য ধারণ করতে পারে। সদ্যজাত শিশুর পাকস্থলী মাত্র ৩০ মিলিলিটার খাদ্য ধারণ করতে পারে।
অ্যানাটমিতে পাকস্থলীকে চার ভাগে ভাগ করা হয়। পাকস্থলীর প্রথম অংশ কার্ডিয়া। অন্ননালি পাকস্থলীর যেখানে উন্মুক্ত হয়, তাকে কার্ডিয়া বলে। এই অঞ্চলেই এপিথেলিয়াম কোষের প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়। এর কাছেই নিম্নস্থ অন্ননালীয় স্ফিংক্টার। পাকস্থলীর উপরের বক্রতাকে ফান্ডাস বলে। পাকস্থলীর দেহপ্রধান অংশ।
পাকস্থলীর নিচের অংশকে পাইলরাস বলে, যেখান থেকে পাকস্থলীর খাদ্য ক্ষুদ্রান্তে উন্মোচিত হয়।
পাকস্থলীতে পরিপাক: পাকস্থলীর প্রাচীরে অসংখ্য গ্যাস্ট্রিকগ্রন্থি থাকে। গ্যাস্ট্রিকগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রস খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে। পেরিসস্ট্যালসিস অর্থাৎ পাকস্থলীর পেশি সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে খাদ্যবস্তুকে পিষে মন্ডে পরিণত করে। পাকস্থলীতে খাদ্য আসার পর অন্তঃপ্রাচীরের গ্যাস্ট্রিকগ্রন্থি থেকে গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসৃত হয়। এই রসে প্রধান যে উপাদানগুলো থাকে তা হলো-
হাইড্রোক্লোরিক এসিড (HCL) : হাইড্রোক্লোরিক এসিড খাদ্যের মধ্যে কোনো অনিষ্টকারী ব্যাকটেরিয়া থাকলে তা মেরে ফেলে। নিষ্ক্রিয় পেপসিনোজেনকে সক্রিয় পেপসিনে পরিণত করে এবং পাকস্থলীতে পেপসিনের সুষ্ঠু কাজের জন্য অম্স্নীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে।
পেপসিন (pepsin): পেপসিন এক ধরনের এনজাইম যা আমিষকে ভেঙে দুই বা ততোধিক অ্যামাইনো এসিড দ্বারা তৈরি যৌগ গঠন করে যা পেপটাইড নামে পরিচিত।
পাকস্থলীতে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছানো মাত্র উপরিউক্ত রসগুলো নিঃসৃত হয়। পাকস্থলীর অনবরত সংকোচন ও প্রসারণ এবং এনজাইমের ক্রিয়ার ফলে খাদ্যমিশ্র মন্ডে পরিণত হয়। একে পাকমন্ড (ঈযুসব) বলে। এই মন্ড অনেকটা সু্যপের মতো এবং কপাটিকা ভেদ করে ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রবেশ করে।
শর্করা এবং স্নেহজাতীয় খাদ্য সাধারণত পাকস্থলীতে পরিপাক হয় না। কারণ, এদের পরিপাকের জন্য গ্যাস্ট্রিক রসে নির্দিষ্ট কোনো এনজাইম থাকে না।
শোষণ: যদিও মানুষের পাচনতন্ত্রের শোষণটি মূলত ছোট অন্ত্রের একটি কাজ, তবে কিছু ছোট অণুর শোষণ পেটে ঘটে থাকে। এটির অন্তর্ভুক্ত হলো- জল (যদি শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়), ওপধঃরড়হষধ (যেমন অ্যাসপিরিন), অ্যামিনো এসিড, ইনজেস্টড ইথানলের ১০-২০% (উদা: মদ্যপ পানীয় থেকে), ক্যাফিন, অল্প পরিমাণে জল দ্রবণীয় ভিটামিন (বেশিরভাগ ক্ষুদ্র অন্ত্রের মধ্যে শোষিত হয়)।
মানুষের পেটের প্যারিয়েটাল কোষগুলো আন্তর্জাতীয় উপাদান তৈরি করার জন্য দায়ী, যা ভিটামিন বি-১২ এর শোষণের জন্য প্রয়োজনীয়। বি-১২ সেলুলার বিপাক হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং লাল রক্তকণিকা উৎপাদন, এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতার জন্য প্রয়োজনীয়।
রোগ: বিভিন্ন রোগের জন্য পেট পরীক্ষা করতে সিরিজ রেডিওগ্রাফ ব্যবহার করা যেতে পারে। পেটের পরীক্ষা করার পদ্ধতি হলো অ্যান্ডোস্কোপ ব্যবহার। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের মধ্যে পেপটিক আলসার এবং গ্যাস্ট্রাইটিসের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি সংক্রমণ ঘটে এবং পেটের ক্যান্সার হয়ে থাকে।
Discussion about this post