পাঠান সোহাগ
শীতের সময় করোনার সংক্রমণ কমতে পারে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।
বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপে এ কথা বলেন কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির এই সদস্য।
ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, অনেকেই আশঙ্কা করেছিল শীতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাবে। আমি আগেই বলেছি শীতের সময় করোনার সংক্রমণ কমতে পারে। কারণ, শীতকালে ইনফ্লুয়েঞ্জা, প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা থ্রি, রেসপিরেটরি সিনসিডিয়াল ভাইরাস এবং রায়নো ভাইরাস সংক্রমণ দেখা যায়। এসব ভাইরাসের কারণে মানুষের সর্দি-কাশি-জ্বর হয়ে থাকে। যখন এই চারটি ভাইরাস একটি কারো শরীরে প্রবেশ করে তখন অন্য একটি ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে না। যদিও অন্য কোনো ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে তাও প্রকাশ পায় না। এসব কারণে দেশে করোনার সংক্রমণ কমছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) যৌথ গবেষণার কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, বস্তি এলাকায় সংক্রমণের হার ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। অ্যান্টিবডি ৭৪ শতাংশ। আর নন-বস্তি এলাকায় সংক্রমণের হার ৯ শতাংশ। অ্যান্টিবডি ৫৪ শতাংশ। এ থেকে বোঝা যায় বস্তি এলাকাতে করোনার সংক্রমণ কম। আমিও বেশ কিছুদিন আগে একটা গবেষণা করেছিলাম। সেখানে দেখেছি বস্তি এলাকায় চারটি ভাইরাসের উপস্থিতি ছিল বেশি। সেটি অন্যান্য এলাকা থেকে বেশি। এই গবেষণা প্রকাশ পাওয়ার পর করোনার সংক্রমণ ছিলই। কমে নাই, মিথষ্ক্রিয়া হচ্ছে। অনেকেই বলেছে দ্বিতীয় সংক্রমণ আসবে। এসে গেছে। ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেলও বাংলাদেশ সেই ভাবে বৃদ্ধি পায়নি। বাংলাদেশের সেকেন্ড ওয়েব হয়নি। এর একটা কারণ আছে। সেটা হলো ইন্টারফেয়ারেন্স। এটি আমার নিজস্ব মডেল।
এই ইন্টারফেয়ারেন্সের কারণে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ব্যাপক আকারে নাও আসতে পারে। করোনা সংক্রমণ রেট কমে যেতে পারে। এটা আমার ধারণা। আমার মডেলে মনে হচ্ছে সংক্রমণ কবে যাবে, বলেন ডা. নজরুল ইসলাম।
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক সৈয়দ আব্দুল হামিদ ও সাফিউন শিমুল, কানাডা টর্নেডো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মোফাখখার হোসেন, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নুসরাত জেবিন এবং স্বাস্থ্য দপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজরি কমিটি সদস্য আবু জামিল ফয়সাল পাঁচ সদস্যের বিশেষজ্ঞ দলের পূর্বাভাস ছিল আগামী জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে কিংবা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে করোনা সংক্রমণ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। আর জুন নাগাদ করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১৭ হাজার হতে পারে।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, আমি যে মডেল অনুসরণ করেছি। এতে করোনার সংক্রমণ কমে যাবে। তাদের মডেল অনুসারে ওই পূর্বাভাস আমার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি। ওই মডেলটা বাংলাদেশে কাজ করবে না। আমার মনে হয় আমার ইন্টারফেয়ারেন্স মডেলটা কার্যকর হবে।
তিনি বলেন, সংক্রমণের হার কমতে কমতে যদি পাঁচ শতাংশের নিচে নেমে আসে তাহলে আমরা এপিডেমিক লেভেল থেকে এন্ডেমিক লেভেলে পৌঁছে যাব। তখন স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া যেতে পারে। এই সিদ্ধান্ত সরকারের জন্য ভালো হবে।
বিএসএমএমইউ-এর সাবেক উপাচার্য বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত কয়েক দিনের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বেশ কয়েকদিন ধরে করোনার রোগী শনাক্তের সংখ্যা কমছে। মৃত্যুর সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ এর ঘরে ওঠানামা করছে।
গত ২৬ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৯ হাজার ৯১২টি। এর মধ্যে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮৩৪ জন। এর আগে ৯ মে শনাক্ত হয়েছিল সবচেয়ে কম ৬৩৬ জন। বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, দেশে ৫১তম সপ্তাহের তুলনায় ৫২তম সপ্তাহে করোনার নমুনা পরীক্ষা, শনাক্তের হার, সুস্থতার হার এবং মৃত্যুর হার কমেছে।
বাংলানিউজের সৌজন্যে
Discussion about this post